শুধু রামোস নয়, ঘরে ফিরছেন তাঁরাও
ভাগ্যের ফেরে এখন আসতে হয়েছে নতুন ঠিকানায়। কিন্তু ফুটবল খেলাটাই এমন, পেশাদারি দায়িত্ব পালন করার জন্য আগের ঠিকানায় ফিরতে হয় আকছার। ক্লাব বদলের পর আগের ক্লাবের বিপক্ষে নতুন ক্লাবের হয়ে খেলছেন, এমন উদাহরণ প্রতি বছরই পাওয়া যায়।
গত রাতে হওয়া চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডের ড্রয়ের পর জানা গেল, এমন ঘটনা আরও বেশ কয়েকবার ঘটতে যাচ্ছে আসছে ফেব্রুয়ারিতে।
সের্হিও রামোসের ব্যাপারে তো সবাই জেনেছেন। রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক এই অধিনায়ক এখন খেলেন পিএসজির হয়ে। রামোসের সাবেক ক্লাব আর বর্তমান ক্লাব মুখোমুখি হচ্ছে দ্বিতীয় রাউন্ডে। অম্লমধুর অভিজ্ঞতার প্রত্যাশায় রিয়ালে ফিরছেন রামোস, এককালে যেখানে তাঁর ঘর ছিল। রামোসের মতো এমন অম্লমধুর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাবেন আরও বেশ কয়েকজন। কারা তাঁরা? দেখে নেওয়া যাক।
কেয়লর নাভাস (গোলরক্ষক, কোস্টারিকা ; রিয়াল মাদ্রিদ ২০১৪-১৯, পিএসজি ২০১৯-বর্তমান)
থিবো কোর্তোয়া আসার আগে রিয়ালের মূল গোলরক্ষক ছিলেন নাভাসই। চার-চারবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন ক্লাবটার হয়ে, অন্যান্য শিরোপার কথা না হয় না-ই বা বলা হলো! ২০১৪ বিশ্বকাপে আলো ছড়িয়ে পুঁচকে লেভান্তে থেকে রিয়ালের মতো দলের মূল গোলরক্ষক হওয়া নাভাসের ভাগ্যবদল হয় পরের বিশ্বকাপেই। চার বছর আগে নাভাস যা করেছিলেন, চার বছর পর একই কাজ করে রিয়ালের নজর কাড়েন কোর্তোয়া। নাভাসও বুঝে যান, রিয়ালের আর দরকার নেই তাঁকে। এর পর থেকে পিএসজিতেই খেলছেন। এ মৌসুমে যদিও ইউরোজয়ী গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা এসে মূল একাদশে নাভাসের জায়গা নড়বড়ে করে দিয়েছেন।
আনহেল দি মারিয়া (উইঙ্গার, আর্জেন্টিনা ; রিয়াল মাদ্রিদ ২০১০-১৪, পিএসজি ২০১৫-বর্তমান)
জোসে মরিনিওর রিয়াল মাদ্রিদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণদের একজন ছিলেন এই দি মারিয়া। ছিলেন কার্লো আনচেলত্তির পরিকল্পনাতেও। কিন্তু ২০১৪ বিশ্বকাপের পর পরিকল্পনা বদলে গেলে রিয়াল ছাড়েন এই আর্জেন্টাইন উইঙ্গার। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে বছরখানেক কাটানোর পর এখন প্রায় ছয় বছর ধরে আছেন পিএসজির শিবিরে। রিয়ালের বিপক্ষে খেলতে এসে ডাগআউটে সাবেক কোচ আনচেলত্তিকে দেখে দি মারিয়ার মনে হাজারো স্মৃতির আনাগোনা হবেই—এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
আশরাফ হাকিমি (রাইটব্যাক, মরক্কো ; রিয়াল মাদ্রিদ ২০১৭-২০, পিএসজি ২০২১-বর্তমান)
হাকিমির ব্যাপারটা দি মারিয়া কিংবা নাভাসের মতো বলা যাবে না। দি মারিয়া বা নাভাসরা অন্তত রিয়ালের মূল একাদশের অংশ ছিলেন। ওদিকে হাকিমির অতৃপ্তির জায়গাটা এখানেই, রিয়ালের মূল একাদশে জায়গা কখনো পাকা করতে পারেননি দানি কারভাহালের জন্য। রিয়াল থেকে ধার চুক্তিতে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে আলো ছড়ানোর পর যখন আবারও রিয়ালে ফিরলেন, কারভাহালের প্রতাপ তখনো দোর্দণ্ডভাবে চলছে রিয়ালে। ফলে রিয়ালের মূল একাদশের হয়ে মাত্র নয়টা লিগ ম্যাচ খেলা হাকিমি পাড়ি জমান ইন্টার মিলানে। এক বছর খেলে লিগ জেতার পর গত মৌসুমেই নাম লিখিয়েছেন পিএসজিতে।
ফারলাঁ মেন্দি (লেফটব্যাক, ফ্রান্স ; পিএসজি যুবদল ২০০৪-১২, রিয়াল মাদ্রিদ ২০১৯-বর্তমান)
অনাদরে এক ফুলব্যাকের রিয়াল ছেড়ে শেষমেশ পিএসজিতে যোগ দেওয়ার ঘটনাও যেমন আছে, উল্টোটাও তেমন আছে। ফারলাঁ মেন্দির কথাই ধরুন। মূল একাদশে খেলার মতো যোগ্য নন ভেবে যুবদল থেকেই এই লেফটব্যাককে ছেড়ে দিয়েছিল পিএসজি। পরে লিওঁর হয়ে দুর্দান্ত খেলে মেন্দি দেখিয়ে দেন, কতটা ভুল ছিল পিএসজির। এখন রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে মাঠ কাঁপাচ্ছেন, হয়েছেন মার্সেলোর মতো লেফটব্যাকের উত্তরসূরি।
দাভিদ দা হেয়া (গোলরক্ষক, স্পেন ; আতলেতিকো মাদ্রিদ ২০০৮-১১, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ২০১১-বর্তমান)
স্প্যানিশ এই গোলরক্ষক যখন আতলেতিকোয় খেলতেন, তখনই তাঁর খেলার ধরণ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন, কিংবদন্তি ডাচ গোলরক্ষক এডউইন ফন ডার সারের উত্তরসূরি করবেন রোগাপটকা সেই ছেলেকেই। প্রায় এক যুগ পর সেই ছেলেটাই এখন ইউনাইটেডের অন্যতম স্তম্ভ।
ইয়ান ভার্তোনে (সেন্টারব্যাক, বেলজিয়াম; আয়াক্স ২০০৬-১২, বেনফিকা ২০২০-বর্তমান)
ভার্তোনের উত্থান আয়াক্সেই। তখন খেলতেন লেফটব্যাক হিসেবে, পরে দেখা গেল সেন্টারব্যাক হিসেবেই বিশ্বমানের হওয়ার যোগ্যতা আছে তাঁর। টটেনহামের হয়ে আট বছর কাটানোর পর গত মৌসুমে যোগ দিয়েছেন বেনফিকায়। ভাগ্যের ফেরে আগামী ফেব্রুয়ারিতে সেই আয়াক্সের বিপক্ষেই নামতে হবে ভার্তোনেকে, যে আয়াক্সে পেয়েছিলেন ফুটবলের পাঠ।
মার্সেল সাবিৎসার (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার, অস্ট্রিয়া; রেড বুল সালজবুর্গ, বায়ার্ন মিউনিখ-বর্তমান)
এ মৌসুমের শুরুতেই বায়ার্নে যোগ দিয়েছেন অস্ট্রিয়ান সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার মার্সেল সাবিৎসার। তবে ক্যারিয়ারের এ পর্যায়ে আসার জন্য নিজেকে বেশ ভালোভাবেই প্রমাণ করতে হয়েছে তাঁকে। যে ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সালজবুর্গের নামটাও, যে সালজবুর্গের বিপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলতে নামবে বায়ার্ন। ২০১৪-১৫ মৌসুমে সালজবুর্গে ধারে খেলেছিলেন এই মিডফিল্ডার। ৩৩ লিগ ম্যাচে গোল করেছিলেন ১৯টি।