অবধারিতভাবেই কদিন ধরে নেইমারের চোটের খবর ছিল মানুষের মুখে মুখে। তবে আশা করি ব্রাজিল দল শুধু এটা নিয়েই ভাবেনি। একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় যে সব সময় দলের আত্মবিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু ছিল তাকে সেলেসাওরা মিস করবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখন দলকে ভাবতে হবে ভবিষ্যৎ নিয়ে। মিথ্যা বলব না, নেইমারের অনুপস্থিতিতে বেলো হরিজন্তেতে ব্রাজিলের জন্য কাজটা কঠিন হয়ে গেল। নেইমারের মতো খেলোয়াড়ের মাঠে থাকাটাই প্রতিপক্ষ শিবিরের জন্য শিরঃপীড়ার কারণ। কিন্তু এখন লুইস ফেলিপে স্কলারিকে বিকল্প পথ দেখতে হবে জোয়াকিম লোর দলকে হারানোর জন্য।
সত্যি বললে নকআউট পর্বের দুই খেলায় নেইমার কিন্তু ছিল নিষ্প্রভ। কলম্বিয়ার সঙ্গে পুরো ম্যাচে ও গোলে শট নিয়েছিল মাত্র একটি, হুয়ান জুনিগা ওকে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত ওকে মাঠে তেমন একটা দেখাই যাচ্ছিল না। এ ধরনের বড় প্রতিযোগিতায় সেলেসাওদের নেইমারের ওপর অতিনির্ভরশীলতা আমার একদমই ভালো লাগেনি। এটা ঠিক ও টুর্নামেন্টে ৪ গোল করেছে, কিন্তু ডেভিড লুইজ আর থিয়াগো সিলভা বল পেয়েই মাঝমাঠ দিয়ে না খেলিয়ে নেইমারের কাছে লম্বা বল খেলার চেষ্টা ছিল উদ্বেগজনক। তবে এটা ঠিক জার্মানির সঙ্গে প্রতি-আক্রমণে নেইমার খুব কার্যকর হতো।
ব্রাজিল জার্মানির খেলা মানে তো দ্বৈরথ। লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি হবে নিঃসন্দেহে। সম্প্রতি যা হয়েছে তা হয়তো ভারসাম্যটা জার্মানির দিকে হেলিয়ে দিয়েছে, কিন্তু আমি মনে করি না লোর শিষ্যদের কেউ সেলেসাওদের পেয়ে খুশি হয়েছে। মজার ব্যাপার, বিশ্বকাপের ইতিহাস দুদলের মাত্র একবারই দেখা হয়েছে।
ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি ‘বিগ ফিল’ দলকে ঢেলে সাজাবেন। সম্ভাবনা বেশি দলগতভাবে খেলবে ব্রাজিল, ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের ওপর নির্ভর করবে না। তবে সেলেসাওদের চিন্তার কারণ নেই। দলগতভাবে কলম্বিয়ার সঙ্গে ওরা তুলনামূলকভাবে ভালো খেলেছে, যদিও সেটা শুধু প্রথমার্ধে। কলম্বিয়ার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, ব্রাজিলের সঙ্গে ওরাই বেশি স্নায়ুকাতর ছিল।
জার্মানিও ব্রাজিলকে সহজভাবে নেবে না। সব সময়ই ওরা ব্রাজিলকে সমঝে চলেছে। তার মানে এই নয় ওরা ব্রাজিলকে শেষ করে দিতে চাইবে না। খেলাটা ওদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, ওদের কোচের জন্যও। ওরা শিরোপা জিততে অভ্যস্ত, কিন্তু সেই ১৯৯৬-এর পর তো আর কিছু জেতেনি জার্মানরা। লোর ওপর তাই চাপ থাকছে, শিরোপা ওদের জিততেই হবে। তিনি দুর্দান্ত এক দল গড়েছেন আর আপনি যদি সুন্দর ফুটবল ভালোবাসেন তাহলে টমাস মুলার আর টনি ক্রুসের খেলা আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
আমি মারাকানায় ফ্রান্সের সঙ্গে জার্মানির কোয়ার্টার ফাইনাল দেখেছি। যেভাবে ওরা খেলেছে সেটা প্রশংসার দাবিদার। সেট পিস থেকে ম্যাটস হামেলসের গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ওরা নিচে নেমে খেলেছে, সুযোগ বুঝে প্রতি-আক্রমণে ফ্রান্সকে ধরাশায়ী করতে চেয়েছে। আন্দ্রেস শুরলে সহজ সুযোগ নষ্ট না করলে খেলা তো আরও আগেই শেষ হয়ে যায়। এমনকি বর্ষীয়ান মিরোস্লাভ ক্লোসাও সারা মাঠ দৌড়ে খেলেছে। মাঝমাঠ দিয়ে ওরা যেভাবে আক্রমণ শাণাল সেটা ব্রাজিলের জন্য ভয়ের বিষয়। স্কলারির দলকে চেষ্টা করতে হবে মাঝমাঠে তারা যাতে নিজেদের খেলাটা না খেলতে পারে। সুযোগ খুঁজতে হবে প্রতি-আক্রমণে ওদের ঘায়েল করার। লুইজ গুস্তাভোর ফিরে আসাটা স্কলারির জন্য বড় স্বস্তি । সে যে বিশ্বকাপে দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় তা-ই নয়, জার্মানিতে খেলার সুবাদে ওদের সম্পর্কে অনেক কিছুই সে জানে।
যেমন জানে দান্তে। এটা তো প্রত্যাশিতই ছিল দুই হলুদ কার্ডের শাস্তি হিসেবে সেমিফাইনাল না খেলতে পারে সিলভার জায়গায় সে-ই আসবে। তবে ব্রাজিলকে ভাবতে হবে অস্কারকে নিয়ে। ওকে মাঝখানে খেলালে হাল্ক সামনে আরও ভয়ংকর হতে পারে। কলম্বিয়ার সঙ্গে ওর দুর্দান্ত গতিকে ঠিকমতো কাজে লাগালে ব্রাজিল কমপক্ষে আরও দুটি গোল করতে পারত। ব্রাজিল বার্নার্ডকেও খেলাতে পারে, ওর গতি দুই প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ শাণাতে দলকে সাহায্য করবে। উইলিয়ানকেও খেলাতে পারেন স্কলারি। তবে চিন্তার বিষয় হলো ফ্রেড। আমার মনে হয় কোচ ওকে অনেক সময় দিয়েছেন, ৫ ম্যাচ তো যথেষ্ট। তবে ২৪ ঘণ্টা তো কোচই দেখেন খেলোয়াড়দের, সিদ্ধান্ত তিনিই নেবেন।
সবশেষে বলব, ব্রাজিলকে মনে রাখতে হবে এটা বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল আর তারা খেলবে নিজের দেশের মাটিতে। সমর্থকেরা তো থাকবেই মাঠে উৎসাহ জোগাতে, দেখার বিষয় সেলেসাওরা এই বিশেষ উপলক্ষে নিজেদের সেরাটা ঢেলে দিতে পারে কি না।