রয় ০, রুট ০, স্টোকস ০, লিভিংস্টোন ০; বুমরা ৬—ভারতের রেকর্ড জয়

জেসন রয়কে শূন্যতেই ফেরান যশপ্রীত বুমরারয়টার্স

জেসন রয়, জনি বেয়ারস্টো, জো রুট, বেন স্টোকস ও জস বাটলার—এ পাঁচজন এর আগে সর্বশেষ একসঙ্গে ওয়ানডে খেলেছিলেন ২০১৯ সালে। আরও নির্দিষ্ট করে বিশ্বকাপের ওই ফাইনালে। এ মৌসুমে দুর্দান্ত কয়েকটি টেস্ট ম্যাচের পর এ ম্যাচ দিয়েই রঙিন পোশাকে ফিরলেন বেয়ারস্টো-রুট-স্টোকসরা। তবে ফেরাটা হলো ভুলে যাওয়ার মতোই।

ওভালে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে যশপ্রীত বুমরার তোপে ইংল্যান্ড গুটিয়ে যায় মাত্র ১১০ রানেই, ২৫.২ ওভারের মধ্যেই। ভারত সে রান তাড়া করেছে ১৮.৪ ওভারের মধ্যে, রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ানের ওপেনিং জুটিই ভাঙতে পারেনি ইংল্যান্ড। ভারত ১০ উইকেটের জয় পেয়েছে ১৮৮ বল বাকি রেখে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যেটি রেকর্ড তাদের। এর আগে কখনো ইংল্যান্ডকে ১০ উইকেটে হারায়নি ভারত।

৭৬ রানে অপরাজিত থাকেন রোহিত
রয়টার্স

অধিনায়ক রোহিত অপরাজিত ছিলেন ৫৮ বলে ৭৬ রান করে, ধাওয়ান ৫৪ বলে ৩১ রানে। রোহিত তাঁর ইনিংসে ৭টি চারের সঙ্গে মারেন ৫টি ছক্কা।

টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে বুমরার সঙ্গে শামির তোপে পড়ে ৬৮ রানেই ৮ উইকেট হারানোর পরও ইংল্যান্ড ১০০ পেরোতে পেরেছে আটে নামা ডেভিড উইলির ২৬ বলে ২১ আর ব্রাইডন কার্সের ২৬ বলে ১৫ রানের ইনিংসে। বুমরা শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেট নেন মাত্র ১৯ রান দিয়ে, ইংল্যান্ডের মাটিতে কোনো ভারতীয় পেসারের সেরা বোলিং এটি। এ ছাড়া মোহাম্মদ শামি নেন ৩ উইকেট।

আরও পড়ুন

বোলিং সহায়ক কন্ডিশনে টসে জিতে ফিল্ডিং নেয় ভারত। আর ইংল্যান্ড বুমরার তোপে পড়ে শুরুতেই। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বুমরার অফ স্টাম্পের বাইরের বলটি স্টাম্পে ডেকে আনেন ফর্মের দিক দিয়ে নড়বড়ে থাকা রয়, ইংল্যান্ডের ধসের শুরুও সেখান থেকেই। এক বল পরেই বাড়তি বাউন্সে ভড়কে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন রুট। এরপর মোহাম্মদ শামির ভেতরের দিকে ঢোকা বলে কট-বিহাইন্ড স্টোকস, ঋষভ পন্ত নেন দারুণ এক ক্যাচ।

ইংল্যান্ড ইনিংসে এ দৃশ্য ছিল নিয়মিতই
রয়টার্স

রয়, রুট ও স্টোকস ফেরেন দলীয় ৭ রানের মধ্যেই, কেউ কোনো রান না করেই। ওয়ানডেতে এই প্রথম তিনজনই একই ম্যাচে আউট হলেন ০ রানে। প্রথম ৩ ওভারের মধ্যেই ভারত নেয় এ ৩ উইকেট—ওয়ানডেতে মাত্র দ্বিতীয়বার ইনিংসের প্রথম ৩ ওভারের মধ্যে ৩ উইকেট নিল ভারত।

আরও পড়ুন

সেই ডামাডোলের মাঝে বেয়ারস্টো ৭ রান করেন, তবে তিনিও ফেরেন দলীয় ১৭ রানে। এরপর লিয়াম লিভিংস্টোন যখন ইনিংসের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে কোনো রান না করেই আউট হলেন, ইংল্যান্ডের রান তখন ২৬। ইংল্যান্ড সর্বশেষ এত কম রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল চার বছর আগে, ২০১৮ সালে।

বেয়ারস্টোর উইকেটটি ছিল ভারতের দিক দিয়ে আরও দুর্দান্ত, বুমরার বলটি যেমন ছিল, তেমনই ছিল পন্তের ক্যাচ। লিভিংস্টোন নেমে আক্রমণ করতে চেয়েছিলেন, তবে পায়ের পেছন দিয়ে বোল্ড হয়েছেন তিনি। বুমরার ওই বলে সুইং ছিল ৩.২ ডিগ্রি, ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এর আগে কখনোই এত বেশি মুভমেন্টের বলে উইকেট পাননি ভারতীয় পেসার।

ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করেছেন বুমরা
রয়টার্স

প্রথম স্পেলে বুমরার বোলিং পরিসংখ্যান ছিল এমন—৫ ওভার, ২ মেডেন, ৯ রান, ৪ উইকেট! ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভুবনেশ্বর কুমারের ৮ রানে ৩ উইকেটের পর ভারতের কোনো বোলারের এটিই সেরা ওপেনিং স্পেল।

আরও পড়ুন

২৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা ইংল্যান্ডকে একটু আগলে রাখার চেষ্টা করেন অধিনায়ক বাটলার ও মঈন আলী। তবে দুজনের জুটি ২৭ রানের বড় হয়নি। সে জুটি ভাঙেন প্রসিধ কৃষ্ণ, ১৮ বলে ১৪ রান করে ফিরতি ক্যাচ দেন মঈন। ততক্ষণ পর্যন্ত ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণ ছিল মঈনেরই। এরপর শামির বাউন্সারে ক্যাচ দেন ৩২ বলে ৩০ রান করা বাটলার। পরের ওভারে ক্রেইগ ওভারটনকে বোল্ড করে তৃতীয় উইকেটটি পান শামি, ইংল্যান্ড অষ্টম উইকেট হারায় ৬৮ রানে।

নিজেদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তখন ইংল্যান্ডের সামনে। ব্রাইডন কার্স ও ডেভিড উইলি সেটি হতে দেননি, পার করিয়েছেন রেকর্ড ৮৬। দুজন এরপর পার করিয়েছেন ওভালে কোনো দলের সর্বনিম্ন ১০৩ রানের স্কোরও। দ্বিতীয় স্পেলে ফেরা বুমরাকে দুটি চার মারেন উইলি, তবে কার্সকে দারুণ ইয়র্কারে বোল্ড করে নিজের পঞ্চম উইকেটটি নেন তিনি। পরে উইলিকেও বোল্ড করেন বুমরা, ইংল্যান্ড গুটিয়ে যায় তাতেই। ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের এটিই সর্বনিম্ন স্কোর।