এ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টানা ১১টি টেস্ট জয়শূন্য ইংল্যান্ড। এর মধ্যে ১০টিই হার, গত অ্যাশেজে মেলবোর্নে একটা টেস্ট ড্র করেছিল জো রুটের দল। ১০ হারের সবশেষটি এসেছে ব্রিসবেনে, এবারের অ্যাশেজের প্রথম টেস্টে। প্রথম ইনিংসে ১৪৭ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর দুবার ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিল ইংল্যান্ড—দ্বিতীয় দিন চা-বিরতির আগে-পরে বোলিংয়ে, তৃতীয় দিন ডেভিড ম্যালানের সঙ্গে জো রুটের জুটিতে। তবে গ্যাবায় অস্ট্রেলিয়াকে আটকানোর জন্য যথেষ্ট হয়নি সেসব।
একাদশে জেমস অ্যান্ডারসন ও স্টুয়ার্ড ব্রডের দুজনকে বসিয়ে রাখা, টসে জিতে বোলিং-সহায়ক কন্ডিশনে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত এবং বিবর্ণ ব্যাটিং—অ্যাডিলেডে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে যাওয়ার আগে বেশ কয়েকটা প্রশ্নের উত্তরই খুঁজে ফিরতে হচ্ছে ইংল্যান্ডকে। অবশ্য সাবেক অধিনায়ক, এখনকার ধারাভাষ্যকার ও সাংবাদিক মাইকেল আথারটনের মতে, ইংল্যান্ডের এমন পারফরম্যান্সের পেছনে দায়ী প্রস্তুতির ঘাটতিও। এর সঙ্গে বোলিং আক্রমণে বিকল্পের অভাব, ভুগতে থাকা বেন স্টোকস ও দুই ইনিংসেই ব্যাটিং-ব্যর্থতাকেই দুষছেন তিনি। আথারটন বলেছেন সাম্প্রতিক সময়ে ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ের বাস্তব চিত্রটার কথাও—জো রুট একা আর কত করবেন!
টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত ‘সঠিক’ না-ও হতে পারে, তবে সেটা যে ১৪৭ রানে গুটিয়ে যাওয়ার মতো পিচ ছিল না, আথারটনও বলেছেন সেটা। প্রথম ইনিংসে অবশ্য রুটও ৭ বল খেলে করতে পারেননি কোনো রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ম্যালানকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন, তৃতীয় দিন আশাও জাগিয়েছিলেন। তবে পরদিন অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে নিজের প্রথম শতক থেকে ১১ রান দূরেই থামতে হয়েছে ইংল্যান্ড অধিনায়ককে।
দ্বিতীয় ইনিংসে ম্যালান বেশ ভালো সঙ্গই দিয়েছিলেন রুটকে। অবশ্য এ দুজনের উইকেটের পরই নেমেছে ধস। একটু বর্ধিত প্রথম সেশনেই শেষ ৮ উইকেট হারিয়েছে ইংল্যান্ড। এমনিতে রুট রান পেলে ইংল্যান্ডের স্কোর বড় হয়, আর না হলে নয়, এ বছর চিত্রটা এমনই। দ্বিতীয় ইনিংসেই প্রথম ইংলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে এক পঞ্জিকাবর্ষে ১৫০০ রানের রেকর্ড গড়েছেন রুট, এ বছর এখন পর্যন্ত করেছেন ৬টি সেঞ্চুরি।
তবে রুটকে বাদ দিলে ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের চিত্রটা সাদামাটাই। এ বছর ১ থেকে ৭ নম্বরে ব্যাটিং করেছেন, এমন ইংলিশ ব্যাটসম্যানের মধ্যে রুটের পর সবচেয়ে বেশি রান ররি বার্নসের। তবে তিনিও ১৭ ইনিংসে ছুঁতে পারেননি ৫০০। রুট ছাড়া এ বছর শতকও করেছেন শুধু বার্নসই, সেটিও একটি।
ইংল্যান্ডের হারের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্কাই স্পোর্টসে লেখা কলামে আথারটন বলেছেন, ‘অবশ্যই রুট শতকটা চেয়েছিল খুব করে। সে জানে অস্ট্রেলিয়াতে কখনো শতক করেনি সে। তবে এর চেয়েও বড় ব্যাপার, শতকটা হলেই শুধু ইংল্যান্ডের জয়ের সম্ভাবনা থাকত। আগের দিন দারুণ খেলেছিল, এ মৌসুমে যেভাবে খেলেছে। নিশ্চিতভাবেই এটা আশাজাগানিয়া। তবে সে একা তো সব করতে পারবেন না!’
‘যদি ইংল্যান্ডের শেষ ১২টার মতো টেস্টের দিকে তাকান, তাহলে দেখবেন ইংল্যান্ড রুটের ওপর অতি-নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় ইংল্যান্ড যদি ভালো করতে চায়, তাহলে রুটকে ভালো করতেই হবে—আপনি এমনটা ভাবতেই পারেন। তবে তার সমর্থন দরকার আশপাশ থেকে। ম্যালান সেদিন ভালো ব্যাটিং করেছে, কিন্তু ওই জুটি বাদ দিলে তাদের অবস্থা ভালো নয়। এটা ভোগাবে’—যোগ করেছেন আথারটন।
ব্যাটিংয়ের সমালোচনা করলেও অ্যান্ডারসন বা ব্রডকে বাদ দেওয়ার কারণটা অবশ্য বুঝতে পারছেন ১৫টি অ্যাশেজ টেস্টে ইংল্যান্ডকে নেতৃত্ব দেওয়া আথারটন, ‘ব্রড শেষ গ্রীষ্মে পায়ের মাংসপেশিতে চোট পেয়েছিল। এরপর তাঁকে হুইলচেয়ারেও কাটাতে হয়েছে। গত আগস্টের পর থেকে তো খেলেইনি। অন্যদিকে ৩৯ বছর বয়স অ্যান্ডারসনের, সে-ও দুই থেকে তিন মাস ধরে খেলে না। হয়তো সফরটাই টুকটাক চোট নিয়ে শুরু করেছে বলে সে অন্যদের চেয়ে প্রস্তুতিতে পিছিয়েও ছিল।’
ব্রিসবেনে ইংল্যান্ড যে তিনজন পেসারকে খেলিয়েছে, তারা অবশ্য ভালোই করেছেন। ক্রিস ওকস, ওলি রবিনসন, মার্ক উডের লড়াই চোখে পড়ার মতোই ছিল। তবে স্পিনার জ্যাক লিচ রান আটকাতে পারেননি, ঠিক ফিট না থাকা স্টোকসের ওপরও চড়াও হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা।
অনির্দিষ্টকালের বিরতি কাটিয়ে ফেরা স্টোকস গত জুলাইয়ের পর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেট খেলেননি, টেস্টে বোলিং করেননি মার্চের পর থেকে। ব্রিসবেন টেস্টের আগে বৃষ্টির কারণে প্রস্তুতিও বেশ ভালোভাবেই ব্যাহত হয়েছিল ইংল্যান্ডের। এসব মেনে নিলেও আথারটনের বলা শেষ কথাটাই বোধহয় সবচেয়ে বড় বাস্তবতা তাদের জন্য, ‘ওপরের বিষয়গুলো বিবেচনায় আনলে আমার সহমর্মিতা আছে (ইংল্যান্ড দলের প্রতি)। তবে তারা যে ১-০-তে পিছিয়ে পড়ল, সেটা কিন্তু কোনোভাবেই বদলাবে না।’