যে এমবাপ্পেকে চেয়েছি, সে এই এমবাপ্পে নয়: রিয়াল সভাপতি
‘যে এমবাপ্পেকে আমি কিনতে চেয়েছিলাম, সে এই এমবাপ্পে নয়। এ অন্য কেউ, যাকে নিজের স্বপ্ন পাল্টাতে হয়েছে’—কথাটা রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের।
অর্থাৎ পিএসজিতে তিন বছরের নতুন চুক্তি করা এমবাপ্পে পেরেজের কাছে অচেনা।
স্প্যানিশ টিভি ‘মেগা’র জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘এল চিরিগুইতো দে জুগোনেস’-এ পেরেজের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ক্রীড়া সংবাদকর্মী জোসেফ পেদ্রেরোল। সেখানে এমবাপ্পেকে নিয়ে কথা বলেছেন রিয়ালের এই সভাপতি।
ফ্রান্সের এই তারকা স্ট্রাইকার মোনাকোয় থাকতেই রিয়ালকে ‘স্বপ্নের ক্লাব’ বলেছেন, মাদ্রিদের ক্লাবটিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ্যে বলেছেন পিএসজিতেও যোগ দেওয়ার পর। কমিকস বের করেছেন, সেখানে রিয়ালের প্রতি ভালোবাসা জানিয়েছেন ছত্রে ছত্রে। সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন, ফ্রেঞ্চ লিগে বহুদিন খেলেছেন, তাই নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়া দরকার। নতুন চ্যালেঞ্জ যে রিয়ালের হয়ে খেলা, তা বুঝে নিতে কারও কষ্ট হয়নি।
এই জুনেই পিএসজির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ফুরোনোর কথা ছিল এমবাপ্পের। মৌসুমের শুরু থেকেই তাঁর সঙ্গে চুক্তি নবায়নের চেষ্টা করেছে পিএসজি। ফরাসি ক্লাবটিকে এ বিষয়ে কিছু না বলে রিয়ালের আশা বাড়িয়েছেন এমবাপ্পে। রিয়ালও তার প্রতিদান দিতে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু গত মে মাসেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যান এমবাপ্পে।
ফুটবল ইতিহাসে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকের চুক্তি, নিজেদের ক্রীড়া প্রকল্প নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা—পিএসজির এসব লোভনীয় প্রস্তাবে চুক্তি নবায়নে রাজি হন এমবাপ্পে এবং রিয়ালকে দৃশ্যত দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখে ফরাসি ক্লাবটির সঙ্গে চুক্তিও নবায়ন করেন।
সংবাদমাধ্যম তখন জানিয়েছিল, শুধু চুক্তি স্বাক্ষরের বোনাস হিসেবে ৩০ কোটি ইউরো পাবেন এমবাপ্পে। এর সঙ্গে বার্ষিক বেতন থাকবে ১৫ কোটি ইউরো, সেটাও কর বাদে। তিন বছরের পারিশ্রমিক যোগ করলে অঙ্কটা দাঁড়ায় মোট ৭৫ কোটি ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা)। এ অঙ্কই চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো।
কিন্তু রিয়াল সভাপতি পেরেজ অন্য ধাতে গড়া মানুষ। এমবাপ্পে চুক্তি নবায়নের পর পেরেজ কোনো উচ্চবাচ্য করেননি। শুধু বলেছিলেন, ‘রিয়ালের জন্য এমবাপ্পে এখন অতীত।’ এত দিন পর এমবাপ্পেকে নিয়ে মনের কথাগুলো বলে ফেললেন রিয়াল সভাপতি।
শুধু পিএসজির লোভনীয় চুক্তির প্রস্তাব নয়, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁও এমবাপ্পেকে ফরাসি ক্লাবটিতে থেকে যেতে অনুরোধ করেছিলেন। এমবাপ্পেকে রিয়াল কেন সই করাতে পারেনি, তা বোঝাতে গিয়ে তখনকার পরিস্থিতিটা ব্যাখ্যা করলেন পেরেজ, ‘সে (এমবাপ্পে) পাল্টে গেছে। ওরা তাকে অনেক কিছুর প্রস্তুাব দিয়েছে, চাপও ছিল। তাতে সে অন্য মানুষ হয়ে যায়। রিয়ালে ক্লাবের ওপরে কেউ নেই। সে অসাধারণ ফুটবলার, অনেক শিরোপাও জিততে পারবে। কিন্তু খেলাটা দলগত, নিজেদের মূল্যবোধ তো আর আমরা পাল্টাতে পারব না। আমি তাকে পছন্দ করি। সে আসার চেষ্টা করেছে, কিন্তু চাপ তাকে পাল্টে দেয়, পরিস্থিতিও তার অনুকূলে ছিল না। আমার মনে হয়, তার মায়ের আশা ছিল, সে রিয়ালে খেলুক। কারণ, এ ক্লাবে খেলা তার শৈশবের স্বপ্ন। কেউ কেউ বলছে, মায়ের মুখরক্ষা হয়নি।’
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এমবাপ্পেকে পিএসজিতে থেকে যাওয়ার অনুরোধ করার বিষয়টি ভালো লাগেনি পেরেজের, ‘ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের তাকে (পিএসজিতে) থেকে যাওয়ার অনুরোধ করার কোনো অর্থ নেই। সেখানে আরও অনেক ক্লাব আছে। প্রেসিডেন্ট তো তার উন্নতি চান, সেটা সে যেকোনো ক্লাবেই করতে পারবে। জিদান মাদ্রিদে এসেছে, বেনজেমা তো কিংবদন্তি...আমি জানি না, এমন কেন ঘটল।’
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক জোসেফ পেদ্রেরোল পেরেজের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, এমবাপ্পে রিয়ালে আসবেন—এ বিষয়ে কেন প্রাক্-চুক্তি সেরে রাখা হলো না? অর্থাৎ এমবাপ্পের মৌখিক প্রতিশ্রুতি অনুসারে কেন তাঁর সঙ্গে প্রাক্-চুক্তি করা হলো না, যেন তিনি কথা দিয়ে পরে কথা না পাল্টান। পেরেজের ব্যাখ্যা, ‘এটা সম্ভব হতো না। সেটা তার জন্যই সমস্যা হতো এবং শেষ পর্যন্ত অপেক্ষাই যৌক্তিক ছিল। যে এমবাপ্পে এখানে (রিয়ালে) আসতে চেয়েছিল, সে এই এমবাপ্পে নয়। আমি স্বপ্ন দেখা এমবাপ্পেকে চেয়েছিলাম। এই এমবাপ্পে আমার এমবাপ্পে নয়।’
রিয়ালে না আসার ইচ্ছার কথা পেরেজকে ফোন করে জানিয়েছিলেন এমবাপ্পে। এ বিষয় নিয়েও কথা বলেছেন রিয়াল সভাপতি, ‘সে আমাকে খুদে বার্তা পাঠিয়েছিল, আমি উত্তর দিয়েছি। আগেই টের পেয়েছিলাম, যে এমবাপ্পেকে আমি চেয়েছি, সে এই এমবাপ্পে নয়। রিয়ালের ইতিহাসে কোনো খেলোয়াড়ই বাকিদের চেয়ে ঊর্ধ্বে নয়। এটা দলগত খেলা, আর আমরা এমন কোনো কিছু করব না, যা দলকে বিপদে ফেলবে।’