মেসিরা শূন্যহাতে ফিরতে ব্রাজিল যাচ্ছে না

জিকো
জিকো

যদি ব্রাজিল ছাড়া কোনো দল বিশ্বকাপে ঝড় তোলে সেটি হবে আর্জেন্টিনা। শুধু এক দশকে এই দেশ কত বড় বড় খেলোয়াড় তুলেছে সেটা দেখুন।আর্জেন্টিনা অবশ্য মাত্র দুবার বিশ্বকাপ জিতেছে, এর চেয়ে বেশি জিতেছে ব্রাজিল, ইতালি, জার্মানি । ১৯৯০ সালের পর তারা কোয়ার্টার ফাইনালের বেশি যেতে পারেনি। সেবার রোমের ফাইনালে তারা হেরে যায় পশ্চিম জার্মানির কাছে।
এই হতাশার অবশ্যই সরল ব্যাখ্যা আছে। আমাদের বুঝতে হবে বিশ্বকাপ হলো গতিময়তা ধরে রাখার টুর্নামেন্ট। বেশ কিছু শক্ত দলের সামনেও ওরা পড়েছে৷ দক্ষিণ আফ্রিকায় যেমন জার্মানি । কিন্তু ২০০২ বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব থেকে ওদের বাদ পড়াটা বড় এক বিস্ময়।
আমার মতে, আর্জেন্টিনার এই প্রতিভাবান প্রজন্মের খেলোয়াড়েরা জ্বলে উঠতে পারেনি৷ গত বেশ কয়েক বছরে তারা অনেক গ্রেট খেলোয়াড় পেয়েছে৷ গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা ও হুয়ান সেবাস্তিয়ান ভেরনের নামটা চট করে মনে আসে । আপনার দলে বিস্ময়কর কিছু খেলোয়াড় থাকতে পারে, কিন্তু তারা যদি দলের জন্য না খেলে, বিশ্বের যেকোনো দলকেই পস্তাতে হয়৷
তবে ২০১৪-এর দলটা অন্য রকম। অবশ্যই, লিওনেল মেসির নামটা আপনাকে বলতে হবে। সে তার তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলবে, কিন্তু এই প্রথম আর্জেন্টিনা খেলবে ওকে ঘিরেই। আলেসান্দ্রো সাবেলার অধীনে মেসি তো শুধু একজন খেলোয়াড় নয়, যাবতীয় মনোযোগের কেন্দ্রে৷ আমার মনে হয় এটাই ঠিক । আপনার হাতে যখন এমন একজন থাকে তখন সম্ভাব্য সেরা উপায়েই তাকে কাজে লাগাতে হবে। মেসি অবশ্য একা খেলছে না, ওর সঙ্গে অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া, সার্জিও আগুয়েরো, এজেকুয়েল লাভেজ্জির মতো খেলোয়াড় আছে। কিন্তু সবাই জানে মেসি কী, ৭০ বা ৮০ শতাংশ বলই যাবে ওর দিকে।
এটা এমন কোনো আত্মত্যাগ অবশ্য নয়। মেসি শুধু একজন দারুণ স্কোরারই নয়, গত মৌসুমে লা লিগায় অনেকগুলো গোল করিয়েছে। ওর সঙ্গে যে-ই খেলুক, মেসি গোল করাবেই। প্রতিপক্ষের নজরটা ওর দিকেই বেশি থাকবে, ফলে মেসির জন্য তার সতীর্থরা অনেক জায়গা পাবে। আর্জেন্টিনার এটা আগেই করা উচিত ছিল। আমি জানি না কেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা এটা চার বছর আগে করেনি। হয়তো সে বুঝতে পেরেছিল মেসি তখনো তৈরি নয়।
কেউ হয়তো বলতে পারে নিজের মান অনুযায়ী মেসির নিরুত্তাপ একটা মৌসুম গেছে, চোটের সঙ্গেও লড়তে হয়েছে। কিন্তু এটা ওর পক্ষে যেতে পারে। প্রতিপক্ষ মনে করবে ওকে আগের মতো চোখে চোখে না রাখলেও হবে। এখানেই হবে বড় ভুল, কারণ মেসি কিন্তু সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে ৪১টি গোল করেছে ।
কার্লোস তেভেজকে দলে না রাখায় আমি কিছুটা বিস্মিত। সে একজন চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়, জুভেন্টাসে ভালো একটা মৌসুমও কাটিয়েছে। আমি তাকে নিতাম, কিন্তু দিন শেষে সিদ্ধান্তটা ম্যানেজারের। সত্যিটা হচ্ছে আর্জেন্টিনা খুবই বিপজ্জনক একটা দল, যারা বিশ্বকাপ জিততে পারে। ড্রটাও ভালো হয়েছে। অবশ্য বসনিয়ার সঙ্গে ওদের প্রথম ম্যাচটা কঠিন হবে বলেই মনে হয় । বসনিয়া শারীরিকভাবে শক্তিশালী একটা দল, যদিও প্রতিপক্ষের আক্রমণ ওদের উদ্বেগের কারণ হবে।
আর্জেন্টিনারও দুশ্চিন্তার কারণ আছে। ওদের রক্ষণটা উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। প্রতিপক্ষ সেটা নিশ্চয়ই জানে। অনেকেই বলে আর্জেন্টিনার রক্ষণ খুব ভালো নয়, কিন্তু মনে হয় না এতে তেমন সমস্যা হবে। প্রতিপক্ষকে জায়গা না দিতে আর্জেন্টিনাকে আরও অাঁটসাঁট ধরন বেছে নিতে হবে৷
আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকার বাছাইয়ে শীর্ষে থাকলেও কলম্বিয়ার চেয়ে মাত্র ২ পয়েন্ট এগিয়ে ছিল। ১৬ ম্যাচের পাঁচটি ড্র করেছে, হেরেছে দুটিতে । এটাকে একাধিপত্য বলে না, ব্রাজিল না খেললে এমন হবে কেন? কিছু ম্যাচে তো তারা ছন্নছাড়াই ছিল, যেমন নিজেদের মাঠে বলিভিয়ার সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র। কখনো যারা বিশ্বকাপে উঠতে পারেনি, সেই ভেনেজুয়েলার কাছে হেরেছে । আর্জেন্টিনার সহজেই গ্রুপপর্ব পেরোনোর কথা । এরপর তাদের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ সুইজারল্যান্ড, ইকুয়েডর, ফ্রান্স বা হন্ডুরাস। আর বাছাইয়ে যে ফ্রান্সকে দেখা গিয়েছিল, তারা নিশ্চয়ই এত তাড়াতাড়ি আর্জেন্টিনাকে পেতে চাইবে না!
মেসিরা অবশ্যই শূন্যহাতে ফিরতে ব্রাজিল যাচ্ছে না। তবে বিশ্বকাপ জিততে হলে সবকিছু আপনার পক্ষে থাকতে হবে। শুধু ভালো খেললেই চলে না, প্রতিপক্ষের দুর্ভাগ্যও একটা ব্যাপার । ২০০২ ফাইনালে যেমন জার্মানির বালাক না খেলায় ব্রাজিলের সুবিধা হয়েছিল । সেমিফাইনালে হলুদ কার্ড দেখে নিষিদ্ধ হয়েছিল সে। এসবের প্রভাব পড়ে, আর্জেন্টিনার মেসি থাকলেও ১৩ জুলাই মারাকানায় ট্রফি নেওয়ার জন্য অন্যের সাহায্য লাগবেই।