ভিনিসিয়ুসকে দুইয়ে ঠেলে সবচেয়ে দামি এখন এমবাপ্পে
সবাই যখন জানতেন, ‘ফুটবল বাজারে’ সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত দুই ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পে ও আরলিং হরলান্ড, সবচেয়ে দামিও; তখনই গত জানুয়ারিতে চমক হয়ে এসেছিল খবরটা।
সুইজারল্যান্ডের ফুটবল পরিসংখ্যানভিত্তিক স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্পোর্টস স্টাডিজ (সিআইইএস) জানিয়ে দিল—বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলার এমবাপ্পে–হরলান্ডের কেউই নন, এই স্বীকৃতি প্রাপ্য রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের!
পাঁচ মাস পর আবার নতুন করে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলারদের দাম জানিয়েছে সিআইইএস। এবার আর কোনো চমক নেই, শীর্ষ স্থানে অনুমিতভাবেই কিলিয়ান এমবাপ্পে। ভিনিসিয়ুস নেমে গেছেন দুইয়ে। তিনে আছেন আরলিং হরলান্ড।
গত জানুয়ারিতে সিআইইএসের হিসাব অনুযায়ী ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের আনুমানিক বাজারমূল্য ছিল ১৬ কোটি ৬৪ লাখ ইউরো। দুইয়ে ছিলেন ম্যানচেস্টার সিটির ইংলিশ ফরোয়ার্ড ফিল ফোডেন (১৫ কোটি ২৬ লাখ), তিনে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের নরওয়েজিয়ান ফরোয়ার্ড আর্লিং হরলান্ড (১৪ কোটি ২৫ লাখ)। আর এমবাপ্পের দাম দেখানো হয়েছিল মাত্র ৭ কোটি ১৫ লাখ ইউরো! তালিকায় এমবাপ্পে ছিলেন ৪৮ নম্বরে।
সিআইইএস একজন খেলোয়াড়ের বাজারমূল্য বের করতে যে মানদণ্ডগুলো ব্যবহার করে, সেগুলো জানলে অবশ্য আর চমকে যাওয়ার কোনো অবকাশ থাকে না। প্রথম বিবেচনা তো অবশ্য মাঠে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স।
পারফরম্যান্সের নির্ণায়ক অনেকগুলো ধাপ আছে। প্রথমেই দেখা হয় ওই খেলোয়াড় গত ২৪ মাসে মোট কত মিনিট খেলেছেন। যে পজিশনে খেলেন, সে পজিশনে একজন খেলোয়াড় গড়ে কত মিনিট খেলেন, বিবেচনা করা হয় সেটিও। এরপর বিবেচনায় আসে ক্লাব।
রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার মতো ক্লাবে খেললে যত পয়েন্ট (পড়ুন দাম), রায়ো ভায়োকানো বা হেতাফেতে খেললে অবশ্যই তা নয়। ক্লাবের বনেদিয়ানাও অবশ্য শেষ কথা নয়। শুধু রিয়াল মাদ্রিদ বা বার্সেলোনায় খেললেই চলবে না। ফুটবলাররা যে ম্যাচে খেলছেন, সেগুলো কোন ধরনের প্রতিযোগিতায়, সেটাও বিবেচ্য। অনুমিতভাবেই ঘরোয়া কাপের ম্যাচের চেয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ বেশি গুরুত্ব পায়।
এরপর যা যা দেখা হয়—
গত ১২ মাসে একজন খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্স কেমন ছিল। সেটা এর আগের ১২ মাসের তুলনায় কেমন। উন্নতি হয়ে থাকলে ব্যবধান যত বেশি, মূল্য তত বাড়বে।
গত ২৪ মাসে একজন ফুটবলার কত গোল করেছেন, যে প্রতিযোগিতায় গোল করেছেন, সেটার মান কেমন।
গত ১২ মাসে কয়টি গোলে সহায়তা করেছেন, এ ক্ষেত্রেও প্রতিযোগিতার মান বিবেচনায় আসে।
সর্বশেষ ১২ মাসে প্রতি মিনিটের সম্পূর্ণ পাস দেখা হয়। এ জন্য আবার অন্তত ২৭০ মিনিট খেলতে হবে। দু–এক ম্যাচে বদলি নেমে পাসসংখ্যা বাড়িয়ে নিলে সেটা বিবেচ্য নয়।
সর্বশেষ ১২ মাসে একজন খেলোয়াড় কতবার ড্রিবল করেছেন। প্রতি মিনিটের ড্রিবল হিসাব করা হয়। এ ক্ষেত্রেও ন্যূনতম ২৭০ মিনিট খেলতে হয়।
এর বাইরে আরও যা যা বিবেচনায় আসে—
খেলোয়াড়ের বয়স। বয়স কম হলে দাম বাড়বে।
জাতীয় দলে কেমন করছেন। জাতীয় দলের মান, কত ম্যাচ খেলেছেন—এটাও বিবেচ্য।
নতুন ক্লাবে যোগ দিয়ে থাকলে সেই ক্লাবের আর্থিক শক্তিও বিবেচনা করা হয়।
খেলোয়াড়ের সঙ্গে ক্লাবের চুক্তির মেয়াদ। যাঁর চুক্তির মেয়াদ যত বেশি, তাঁর দামও তত বেশি। বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতিও হিসাবে থাকে।
খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের সঙ্গে তাঁর ক্লাবও যে বড় নিয়ামক—এটা তো বলা হয়েছে আগেই। দুজন খেলোয়াড়ের বয়স ও চুক্তির মেয়াদ এক থাকলেও তাঁদের ক্লাবের অবস্থান পার্থক্য গড়ে দেয়। কোনো ক্লাব যদি টিকে থাকার জন্য প্রতি মৌসুমে খেলোয়াড় বিক্রি করে, তাহলে সে ক্লাবের খেলোয়াড়ের মূল্য কম ধরা হয়।
গত জানুয়ারিতে হিসাব কষার সময় এমবাপ্পের চুক্তির মেয়াদ বাকি ছিল মাত্র ছয় মাস। এটাই তাঁর বাজারমূল্য অমন অবিশ্বাস্যভাবে কমিয়ে দিয়েছিল। যা বদলে গেছে কিছুদিন আগেই এমবাপ্পে পিএসজির সঙ্গে তিন বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন করায়। ২০২৫ সাল পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ এমবাপ্পের দাম তাই এক লাফে অনেক বেড়ে গেছে, যা এখন ২০ কোটি ৫৬ লাখ ইউরো। ওদিকে ডর্টমুন্ড ছেড়ে ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেওয়া হরলান্ডের চুক্তির মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত। ফলে তাঁর দামও বেড়ে হয়েছে ১৫ কোটি ২৬ লাখ ইউরো।
জানুয়ারিতে তিনে থাকা ফোডেন মাঝে ফর্ম হারিয়েছেন, তাঁর চুক্তিও ২০২৪ পর্যন্ত। যে কারণে তাঁর দাম কমে ১২ কোটি ৪০ লাখ ইউরো হয়ে গেছে, নেমে এসেছেন ছয়ে। ভিনিসিয়ুসের চুক্তির মেয়াদও ২০২৪ পর্যন্ত। কিন্তু লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগে দুর্দান্ত ফর্ম তাঁর। গত ১২ মাসে অবিশ্বাস্য উত্থান মিলিয়ে তাঁর দাম আরও বেড়েছে, যা এখন ১৮ কোটি ৫৩ লাখ ইউরো।
১৩ কোটি ৫১ লাখ ইউরো বাজারমূল্য নিয়ে চারে আছেন বার্সেলোনার পেদ্রি। তাঁর চেয়ে একটু পিছিয়ে ডর্টমুন্ডের জুড বেলিংহাম (১৩ কোটি ৩৭ লাখ)।
বয়স বিবেচনা করায় মেসি-রোনালদো এখন আর শীর্ষ ১০০–তে জায়গা পান না। গত জানুয়ারিতে ৮৩তম স্থানে থাকা নেইমারও সর্বশেষ হিসাবে ছিটকে পড়েছেন ১০০–এর বাইরে।
পজিশন অনুযায়ী সবচেয়ে দামি ফুটবলার:
ফরোয়ার্ড
কিলিয়ান এমবাপ্পে (পিএসজি)
২০ কোটি ৫৬ লাখ ইউরো
মিডফিল্ডার
পেদ্রি (বার্সেলোনা)
১৩ কোটি ৫১ লাখ ইউরো
ডিফেন্ডার
রুবেন দিয়াস (ম্যানচেস্টার সিটি)
১০ কোটি ৯৬ লাখ ইউরো
ফুলব্যাক
ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আরনল্ড (লিভারপুল)
৮ কোটি ৭৪ লাখ ইউরো
গোলকিপার
জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা (পিএসজি)
৭ কোটি ৩৭ লাখ ইউরো
শীর্ষ পাঁচ লিগের বাইরের দামি খেলোয়াড়
দারউইন নুনিয়েজ (বেনফিকা)
৭ কোটি ১ লাখ ইউরো
শীর্ষ ১০০–তে বেশি বয়সী খেলোয়াড়
কেভিন ডি ব্রুইনা (ম্যানচেস্টার সিটি)
৫ কোটি ৭০ লাখ ইউরো
শীর্ষ ১০০–তে কম বয়সী খেলোয়াড়
গাভি (বার্সেলোনা)
৫ কোটি ৮৫ লাখ ইউরো