ভারতের কারণেই বাংলাদেশকে হালকাভাবে নিচ্ছে না কাতার
প্রতিপক্ষকে কখনো খাটো করে দেখতে নেই। ক্রীড়াঙ্গনে বহুল চর্চিত এই আপ্তবাক্যের অনুসারী ভাবা যেতে পারে কারিম বুদিয়াফকে। কাতার জাতীয় ফুটবল দলের এই ডিফেন্ডার বাংলাদেশকে হালকাভাবে নিতে রাজি নন। যদিও নিজেদের মাঠে আগামী শুক্রবার বাংলাদেশের বিপক্ষে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইয়ের ম্যাচে কাতারের জয়ের পাল্লা ৯৯ ভাগ ভারী। বাকি ১ ভাগ বাংলাদেশ চেষ্টা করলে হয়তো ড্র করে দিতে পারে। যেমনটা গত বছর ১১ সেপ্টেম্বর এই বিশ্বকাপ বাছাইয়েই কাতারকে কাতারের মাটিতে রুখে দিয়েছিল ভারত (০-০)।
সর্বশেষ প্রকাশিত ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে কাতারের অবস্থান ৫৯, বাংলাদেশের ১৮৪। বাছাইপর্বে গ্রুপে এখন পর্যন্ত চার ম্যাচে বাংলাদেশের প্রাপ্তি গত অক্টোবরে কলকাতায় ভারতের সঙ্গে সেই ১-১ গোলে ড্র থেকে ১ পয়েন্ট। পাঁচ দলের গ্রুপে তলানিতে আছে বাংলাদেশ। কাতার এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচ খেলেছে, চারটি জয়ের পাশাপাশি একটি ড্র—গত সেপ্টেম্বরে সেই গোলশূন্য ড্র। ১৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে কাতার, দুইয়ে থাকা ওমানের পয়েন্ট ৫ ম্যাচে ১২। আফগানিস্তানের পয়েন্ট ৫ ম্যাচে ৪, ভারতের ৫ ম্যাচে ৩।
কিন্তু র্যাঙ্কিংয়ে-ফর্মে বাংলাদেশ যোজন যোজন পিছিয়ে থাকলেও ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচটার কথা স্মরণ করে সতর্ক কারিম বুদিয়াফ। বাংলাদেশ দলকে সহজভাবে নিতে রাজি নন তিনি। আলজেরিয়ান বংশোদ্ভূত হলেও তাঁর জন্ম ফ্রান্সে। দোহা স্টেডিয়াম নামের পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বুদিয়াফ বলেছেন, ‘দোহায় আমরা এর আগে ভারতের সঙ্গে ড্র করেছিলাম। নিজেদের দর্শকদের সামনে সেদিন আমরা জিততে পারিনি। কাজেই কোনো দলকে হালকাভাবে নেওয়ার প্রশ্ন নেই। আমরা তা ভাবনায়ও আনছি না। এবার আমাদের সতর্ক হয়ে খেলতে হবে। কেননা, খেলার আগে কোনো ম্যাচই সহজ নয়।’
ঢাকায় দুই দলের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিততে ঘাম ছুটেছিল কাতারের। শেষ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটা করেছিল এশিয়ার সেরা দলটি। বাংলাদেশ সেদিন বৃষ্টিভেজা মাঠে ভালোই চোখ রাঙায় কাতারকে। তবে এবার খেলা দোহায়। বাংলাদেশের জন্য কঠিন এক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। বুদিয়াফ অবশ্য প্রতিপক্ষ কে, সেটা ভাবছেন না। কাতার স্টারস লিগে আল দুহাইল ক্লাবে খেলা এই ফুটবলার ভাবছেন শুধু নিজেদের খেলা নিয়েই।
কীভাবে ম্যাচটা ভালোভাবে জেতা যায়, সেটাই রয়েছে কাতারের পরিকল্পনায়। বুদিয়াফ পুরো মনোযোগ দিয়ে এই ম্যাচে সেরাটা তুলে ধরতে চান। তাঁর কথা, ‘প্রতিপক্ষ কেমন বা কোনো স্তরে আছে, সেটি না ভেবে আমরা নিজেদের ঝালাই করে নিতে চাই এই ম্যাচে। ম্যাচটাকে গুরুত্বসহকারেই নিচ্ছি। আমাদের ৩ পয়েন্ট নিশ্চিত করা দরকার।’ কাতারের ৩ পয়েন্ট নিয়ে সংশয় দেখছে না কেউই। জয়ের ব্যবধানটা কেমন হয়, সেটিই বরং অনেকের কাছে কৌতূহল। তবে হিসাব পাল্টে মাঠে সমীহ আদায়ের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।
এশিয়ান চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে বাংলাদেশের ম্যাচটি শুরু হবে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা)। ম্যাচ ভেন্যু শেখ আবদুল্লাহ বিন খলিফা স্টেডিয়ামে হলেও এটি দুহাইল স্টেডিয়াম নামেই বেশি পরিচিত। লাখউইয়া ক্লাবে (লাখউইয়া কাতারের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর আরবি নাম) অবস্থিত এই স্টেডিয়ামে কাতারের বড় কোনো ম্যাচ হয় না। কাতারের লিগ পর্যায়ের ম্যাচও হয় না সেভাবে। স্টেডিয়ামের ধারণ ক্ষমতা ১০ হাজার। তবে করোনা পরিস্থিতিতে ধারণ ক্ষমতার ২০ ভাগ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে কাতার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ খেলা দেখার সুযোগ পাবেন সব মিলিয়ে দুই হাজার দর্শক।
২০১৩ সালে স্টেডিয়ামটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছিল। কাতারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ সে বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি এর উদ্বোধন করেন। কাতারের স্থানীয় ক্লাব লাখউইয়া ও আলখোরের ম্যাচ দিয়ে স্টেডিয়ামের যাত্রা শুরু। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন স্টেডিয়ামে মূল মাঠ ছাড়াও রয়েছে চারটি খেলার মাঠ। দর্শকদের আসা-যাওয়ার জন্য ২৫টি প্রবেশপথ আছে এই স্টেডিয়ামে।
বাংলাদেশ-কাতার ম্যাচের জন্য প্রস্তুত দুসাইল স্টেডিয়াম। প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশও। বাংলাদেশ কি পারবে ভারত হতে? বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বলেছেন, ‘আমরা আশাবাদী। ভারত যদি পারে, আমরাও কাতারকে রুখে দিতে চেষ্টা করব।’ গোলকিপার আশরাফুল ইসলামের কাছে এই ম্যাচ অনেক বড় চ্যালেঞ্জ, ‘কাতারের মতো দলের সঙ্গে ম্যাচ বিরাট চাপ এবং চ্যালেঞ্জ। আমরা চেষ্টা করব মাঠে সেরাটা উপহার দিতে।’
সেরাটা মাঠে দিতে পারলে ফল যা হওয়ার হবে। তখন আর আক্ষেপ থাকবে না। আপাতত এই মন্ত্রই জপছে বাংলাদেশ।