ব্রাজিলের উচিত তিন লড়াকু মিডফিল্ডার নিয়ে নামা

ব্রাজিলের মহাতারকা জিকো
ব্রাজিলের মহাতারকা জিকো

চোটের কারণে বিশ্বকাপ থেকে নেইমারের ছিটকে পড়া ব্রাজিলের জন্য নিঃসন্দেহে বড় ধাক্কা। দলে তার প্রভাব ছিল বিশাল। ওর অনুপস্থিতি দলের অন্যদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলবে, সন্দেহ নেই। আমি জানতাম ব্রাজিলের বিশ্বকাপ অভিযানে তার ভূমিকা থাকবে অনন্য। আপনারা তো দেখলেন কী দারুণ একটা টুর্নামেন্ট ও কাটাল। ইউরোপে প্রথম বছরে ও নিজেকে আরও পরিণত করেছে। আমি তাই চমৎকার একটা বিশ্বকাপের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলাম।
কিন্তু হুয়ান ক্যামিলো জুনিগার কাপুরুষোচিত এক ফাউল সব হিসাব উল্টে দিল। আমি বলছি না ও নেইমারের বিশ্বকাপ শেষ করে দেওয়ার জন্য এটা করেছে, কিন্তু ট্যাকলটা তো ছিল কোমর সমান লাফিয়ে করা, তা-ও রেফারির একদম সামনে। রেফারির নির্লিপ্ততায় আমি ক্ষুব্ধ। আমি মনে করি ফিফা লুইস সুয়ারেজকে যেমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়েছে, জুনিগাকেও তেমন শাস্তি দেবে। ফুটবলে এমন ট্যাকলের জায়গা নেই।
তবে ফিফাকে আমি দোষ দেব টুর্নামেন্টজুড়ে অনেক ফাউল দেখেও না দেখার ভান করার জন্য। অনেক ম্যাচেই প্রফেশনাল ফাউল দেওয়া হয়নি, অনেক সময়ই ধস্তাধস্তি রেফারি দেখেও দেখেননি। ফিফার রেফারি কমিশনের পরিচালক মাসিমো বুসাক্কার সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। উনি বললেন তাঁরা চেষ্টা করেছিলেন শাস্তি যাতে খুব কঠিন না হয়ে যায়। কিন্তু সেটার সুযোগটাই তো খেলোয়াড়েরা নিল, কারণ ফাউল করেও ওরা পার পেয়ে যাচ্ছিল। আমার বিপক্ষে কেউ পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলার আগে বলে ফেলি শুক্রবারের খেলায় ব্রাজিলের খেলোয়াড়েরা যেভাবে হামেস রদ্রিগেজকে ফাউল করেছিল সেটাও আমাকে ক্ষুব্ধ করেছে। কড়া কোনো রেফারি হলে তো প্রথমার্ধেই ফার্নান্দিনহোকে লাল কার্ড দেখাত।
ব্রাজিল কী করবে এখন? টুর্নামেন্টে ঠিক থাকতে হলে কোনো না কোনোভাবে তো জিততেই হবে। ব্রাজিল যে অতিমাত্রায় নেইমার-নির্ভর দল ছিল সেটা তো গ্রুপপর্বেই আমরা দেখেছি। কনফেডারেশনস কাপে দলগতভাবে জিতেছিল ব্রাজিল, কিন্তু বিশ্বকাপে তেমন দেখলাম না। ক্রোয়েশিয়া আর ক্যামেরুনের সঙ্গে নেইমারই বাঁচিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু নকআউট পর্বের দুই ম্যাচে সে ছিল নিষ্প্রভ, কলম্বিয়ার সঙ্গে গোলে শট নিয়েছে মাত্র একটি।
এ থেকেই ব্রাজিলকে শিক্ষা নিতে হবে। কলম্বিয়ার সঙ্গে ব্রাজিল দেখিয়েছে নেইমারকে ছাড়াও ওরা খেলতে পারে। কলম্বিয়া নেইমারকে আটকে রেখেছিল ঠিকই, কিন্তু দলগতভাবে টুর্নামেন্টে ব্রাজিল ওদের সেরা ৪৫ মিনিট খেলেছে ওই দিন প্রথমার্ধে। কলম্বিয়ার খেলোয়াড়দের ওরা দুর্দান্ত মার্কিং করেছে, গোলের সুযোগও সৃষ্টি করেছে বেশ কয়েকবার। হাল্ক যদি আরেকটু ভালো করত, ব্রাজিল প্রথমার্ধেই তিন গোলে এগিয়ে যায়।
তবে দ্বিতীয়ার্ধ সেলেসাওদের জন্য সহজ ছিল না। বিশেষ করে কলম্বিয়ার গতিময় খেলার প্রশংসা আপনাকে করতেই হবে। কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে পারা দলটার জন্য বিশাল অনুপ্রেরণা হবে। ব্রাজিলকে বুঝতে হবে বিশ্বকাপ জিতবে দল, এককভাবে কোনো খেলোয়াড় নয়। ১৯৬২ বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল দল হতে পারে ওদের অনুপ্রেরণার উৎস, যখন পেলে টুর্নামেন্টের প্রথম দিকে চোট ছিটকে গেলেও সেলেসাওরা ঠিকই জিতে নিয়েছিল শিরোপা। সবাই অভিজ্ঞ গারিঞ্চা বা দিদির দিকে তাকিয়ে থাকলেও তরুণ আমারিলদোই নজর কেড়েছিলেন গুরুত্বপূর্ণ সব গোল করে। যদিও ব্রাজিলে কেউ ভাবেনি দলটি সেটা করতে পারবে।
জার্মানির সঙ্গে সেমিফাইনালে সেলেসাওদের গুছিয়ে খেলতে হবে। নেইমার থাকলেও ম্যাচটা কঠিনই হতো। ওদের সঙ্গে মূল লড়াইটা হবে মাঝমাঠে, সুতরাং ব্রাজিলের উচিত তিনজন লড়াকু মিডফিল্ডার নিয়ে খেলা যাতে জার্মানি নিজেদের খেলা না খেলতে পারে।
ফ্রেড অবশ্যই একটা সমস্যা। পাঁচ ম্যাচেও সে তেমন কিছু করতে পারেনি। আমার মনে হয় সময় এসেছে বিকল্প ভাবার। অস্কারও হতাশ করেছে, ওকে আরও ভালো খেলতে হবে, আর অন্যদেরও সাহায্য করতে হবে। আমি মনে করি উইলিয়ান বা বার্নার্ডের মতো গতিশীল খেলোয়াড়দের খেলানো উচিত, বিশেষ করে চেলসি মিডফিল্ডারকেই আমি সব দিক থেকে এগিয়ে রাখব।
সেলেসাওদের মনে রাখতে হবে ওরা দেশের মাটিতে সেমিফাইনাল খেলছে। জার্মানি এখনো নিজেদের সেরাটা খেলতে পারেনি, পাশাপাশি দর্শক অনুপ্রেরণা ব্রাজিলকে আত্মবিশ্বাসী করতেই পারে। মনে রাখতে হবে দলটা ব্রাজিল। আমি মনে করি না জার্মানি খেলার এক মিনিটও উপভোগ করবে। শেষ কথা হলো নেইমারের ত্যাগ থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজতে হবে ব্রাজিলকে। চার বছর ধরে ও দলকে অনেক কিছু দিয়েছে। এখন দলের পালা। সর্বস্ব দিয়ে সবাইকে নিজেদের সেরাটা খেলতে হবে ওই ছেলেটার জন্য, একটা জঘন্য ট্যাকল যার স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে।