কাভার পয়েন্ট দিয়ে চার মেরে এক হাতে ব্যাটটা উঁচিয়ে ধরলেন বেন স্টোকস। যেন একটা বার্তা দিলেন—নতুন ইংল্যান্ডের বার্তা। এ সিরিজের আগে থেকেই তাদের নতুন কোচ, নতুন অধিনায়ককে ঘিরে অনেক কথা হয়েছে। লর্ডসের জয় যদি ট্রেলার হয়ে থাকে, ট্রেন্ট ব্রিজে তাহলে সে সিনেমাটা ‘মুক্তি’ দিল ইংল্যান্ড—যাতে মিশে থাকল ওই বার্তা। প্রথম ইনিংসে ৫৫৩ রান করে, আড়াই সেশনে ২৯৯ রানের লক্ষ্য দিয়েও ট্রেন্ট ব্রিজে হেরে যাওয়া নিউজিল্যান্ড সে বার্তা পেল প্রত্যক্ষভাবেই।
জনি বেয়ারস্টোর দুর্দান্ত ইনিংস, স্টোকসের সঙ্গে তাঁর অবিশ্বাস্য জুটিতে ৫ উইকেটের জয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জিতে গেছে ইংল্যান্ড। তবে শেষ সেশনে ইংল্যান্ড যেভাবে ব্যাটিং করেছে, তাদের জয়ের মাহাত্ম্যই তাতে বেড়ে গেছে কয়েক গুণ! টেস্টেও তারা আসলে করেছেন টি-টোয়েন্টি মেজাজের ব্যাটিং-ই। টেস্টের পঞ্চম দিনে এসে ইংল্যান্ড ২৯৮ রান তাড়া করেছে ৫০ ওভারে। ট্রেন্ট ব্রিজে চতুর্থ ইনিংসে এটি সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডও।
তাদের শেষ সেশনের ব্যাটিং দেখে মনে হবে, নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে ছেলেখেলাই করলেন বেয়ারস্টো ও স্টোকস। দুজনের জুটিতে ১২১ বলে উঠেছে ১৭৯ রান। টি-টোয়েন্টিতে শেষ যে পাঁচবার আগে ব্যাটিং করেছে ইংল্যান্ড, এর মধ্যে চারটিতেই তারা তুলেছে এর চেয়ে কম রান! বেয়ারস্টো-স্টোকসের এমন ব্যাটিংকে আসলে অবিশ্বাস্যই বলতে হয়!
চা-বিরতির সময়ও ইংল্যান্ডের রান ছিল ৪ উইকেটে ১৩৯। শেষ সেশনে কমপক্ষে ৩৮ ওভারে তাদের প্রয়োজন ছিল ১৬০ রান। বিরতির পর ঠিক প্রথম ওভারে ম্যাট হেনরিকে তিন চার মারলেন বেয়ারস্টো ও স্টোকস মিলে। সেই যে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হলো, তাঁরা থামলেন না দ্রুতই। তাতে মূল ‘দায়’টা বেয়ারস্টোরই। তাঁর দুর্দান্ত হিটিংয়ের দর্শকই বনে গিয়েছিলেন এক সময় স্টোকসও। চা-বিরতির আগে ৪৮ বলে ৪৩ রান ছিল তাঁর। সেই বেয়ারস্টোই শতক পেয়ে গেলেন ৭৭ বলে। এক বলের জন্য গিলবার্ট জেসপের ইংল্যান্ডের হয়ে দ্রুততম শতকের রেকর্ডটা ছুঁতে পারেননি, তবে তাতে অবশ্য কিছু যায় আসেনি তাঁর। টিম সাউদির বলে তিন রান নিয়ে ঠিকই মেতেছেন উল্লাসে, ক্যারিয়ারের নবম শতক এটি তাঁর।
শেষ পর্যন্ত বেয়ারস্টো করেছেন ৯২ বলে ১৩৬ রান। ১৪৭.৮২ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে ১৪টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ৭টি ছয়। বোল্টের বলে কট-বিহাইন্ড হয়ে ফিরেছেন জয় থেকে ২১ রান বাকি থাকতে। তবে বেন ফোকসকে নিয়ে বাকি কাজ সেরেছেন স্টোকস। ৭০ বলে ৭৫ রান করে অপরাজিত ছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক।
এর আগে শেষ দিনটা শুরু হয়েছিল সব রকম ফলের সম্ভাবনা নিয়েই। সকালে আবার ইংল্যান্ডকে ভুগিয়েছেন ড্যারিল মিচেল। আজ শেষ ৩ উইকেট নিয়ে কিউইরা যোগ করে আরও ৬০ রান। দুর্দান্ত এক সিরিজ কাটানো মিচেল অপরাজিত থাকেন ৬২ রানে। ১৮ রান করা ম্যাট হেনরি ও ১৭ রান করা ট্রেন্ট বোল্ট ভালোই সঙ্গ দেন তাঁকে। এ ইনিংসের পথে মুত্তিয়া মুরালিধরনকে ছাড়িয়ে টেস্টে ১১ নম্বরে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড হয়ে যায় বোল্টের।
প্রায় আড়াই সেশনে করতে হবে ২৯৯ রান, ইংল্যান্ডের সামনে এমন চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দেয় নিউজিল্যান্ড। অ্যালেক্স লিসের ব্যাটিং অবশ্য বলছিল, চ্যালেঞ্জটা নেওয়ার লক্ষ্যেই নেমেছে বেন স্টোকস-ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নতুন ইংল্যান্ড! দ্বিতীয় ওভারেই জ্যাক ক্রলিকে হারালেও মধ্যাহ্নবিরতির আগে ৯ ওভারে ৩৬ রান তোলে তারা। ১৪তম ওভারেই ৫০ পূর্ণ হয় তাদের। মাঝে ৬ রানে জীবন পান ওলি পোপ, ইংল্যান্ড তাই এগোতে থাকে ঠিক পথেই।
তবে পরপর ২ ওভারে পোপের পর জো রুটও ফিরলে বেশ বড় ধাক্কাই খায় স্বাগতিকেরা। ম্যাট হেনরির দারুণ এক ডেলিভারিতে কট-বিহাইন্ড হন পোপ, রুট ফিরতি ক্যাচ দেন ট্রেন্ট বোল্টের বলে। লিসকে নিয়ে সে চাপ অবশ্য সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন বেয়ারস্টো, তবে ৪৪ রান করে ম্যাচে সাউদির প্রথম শিকারে পরিণত হন লিস। ৬ উইকেট নিয়ে তখনো ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ২০৭ রান।
তবে ইংল্যান্ড তাতেও দমবে না, এমন ইঙ্গিত দেন স্টোকস—মুখোমুখি দশম বলে সাউদিকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে ছয় মেরে। চা-বিরতির আগেই বেয়ারস্টোর সঙ্গে তাঁর জুটিতে ৭ ওভারে ওঠে ৪৪ রান, তবে সেটি ছিল ঝড়ের পূর্বাভাসই।
এরপর যা হলো, তাতেই তো উড়ে গেল নিউজিল্যান্ড।