বার্সাকে বাঁচাতে চাই প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা
বার্সেলোনার আর্থিক দুরবস্থা এখন আর নতুন কিছু না। জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ সভাপতি থাকতেই একবার শোনা গিয়েছিল দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে কাতালান ক্লাবটি।
বার্তোমেউয়ের জায়গায় নতুন সভাপতি হিসেবে হোয়ান লাপোর্তা গত বছর আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পর জানান, বার্সার মোট ঋণের পরিমাণ ১৩৫ কোটি ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা প্রায় ১৩ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা)।
তখন থেকেই আর্থিক দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে বার্সা। খেলোয়াড়দের বেতনে কাঁচি চালানো ছাড়াও ব্যয় সংকোচনমূলক নানা পদক্ষেপ নিয়েও ক্লাবটির তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি। এবার বার্সার সহসভাপতি এদুয়ার্দ রোমেউ জানালেন, ঠিক কত টাকা হলে এই আর্থিক দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারবে ক্লাব।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘স্পোর্ত’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রোমেউ জানান, ৫০০ মিলিয়ন ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা) পেলে দিন বদলে যেতে পারে বার্সার।
‘ক্লাবে মুমূর্ষু অবস্থা থেকে কীভাবে তুলে আনা যায়’—এ বিষয়ে ১৬ মে সাধারণ সম্মেলনে ভোটাভুটিতে বসবেন বার্সার কর্তা–ব্যক্তিরা। রোমেউ জানিয়েছেন, এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।
ক্লাবের টিভি স্বত্ব ও মার্চেন্ডাইজিংয়ের কিছু অংশ বিক্রি করতে এরই মধ্যে সমর্থকগোষ্ঠী ‘সোসিওস’–এর কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। টাকার অভাবে নতুন মৌসুমের জন্য স্কোয়াডের শক্তিও বাড়াতে পারছে না বার্সা।
সের্হিও বুসকেটস, জর্দি আলবা ও জেরার্দ পিকেরা বেতন কমাতে বাধ্য হয়েছেন। খরচ কমাতে এর পাশাপাশি আঁতোয়ান গ্রিজমান, এমারসন রয়্যাল, জুনিয়র ফিরপো ও মিরালেম পিয়ানিচদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ধরে রাখা যায়নি ক্লাবের ইতিহাসেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসিকেও।
এই মৌসুম শুরুর আগে ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংকেও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে ছেড়ে দিতে পারে বার্সা। তবুও আর্থিক দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। রোমেউয়ের বিশ্বাস, অর্ধবিলিয়ন ইউরো হলে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।
‘স্পোর্ত’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বার্সার এই সহসভাপতি বলেছেন, ‘সম্পদের ভারসাম্যহীনতাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে। আমরা ৫০ কোটি ইউরো ঘাটতিতে আছি। কোনো চেষ্টা না করে হাত গুটিয়ে থাকলে এই ঘাটতির সঙ্গে এ মৌসুমে আরও ১৫ কোটি ইউরো যোগ হতো। আগেও বলেছি, কেউ আমাকে ৫০ কোটি ইউরো দিলে...বার্সাকে বাঁচাতে এখন এই অঙ্কটা দরকার আমাদের।’
করোনাভাইরাস মহামারিতে প্রায় ১৮ মাস দর্শকহীন স্টেডিয়ামে খেলেছে বার্সা। আয়ে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে মহামারির সময়ের চেয়ে এখন অন্তত অবস্থা কিছুটা ভালো বলেই মনে করেন রোমেউ। তার কারণও ব্যাখ্যা করলেন তিনি, ‘এখনো বিপদ আছে। তবে এক বছর আগের তুলনায় পরিস্থিতি এখন ভালো। সমস্যাটা কি এবং কোথায়, তা অন্তত আমরা ধরতে পেরেছি।’
বার্সার এই আর্থিক দুরবস্থার পেছনে সাবেক সভাপতি বার্তোমেউ দায়ী কি না, এ প্রশ্নের জবাবে কিছুটা কূটনৈতিক উত্তর দিলেন রোমেউ।
সরাসরি বার্তোমেউকে দোষারোপ না করলেও বুঝিয়ে দিয়েছেন সবই আসলে অতীতের কর্মফল, ‘বর্তমান অবস্থা তো পরম্পরা ধরেই হয়েছে। যে কাজগুলো করা হয়েছে, যে কাজগুলো ভালোভাবে শেষ করা হয়নি এবং যে কাজগুলো করা হয়নি, সেসবের ফল। যদি উদাহরণ হিসেবে “এসপাই বার্সা”র (ক্যাম্প ন্যু সংস্কার প্রকল্প) কথা বলি, প্রথম তিন বছর কিন্তু এখান থেকে তেমন আয় হবে না।’
গত আগস্টে বার্সা ১৩৫ কোটি ইউরো ঋণের কথা জানানোর পরই ক্যাম্প ন্যু সংস্কার প্রকল্প হাতে নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
ঋণ থেকে ঘুরে দাঁড়াতে আয়ের কিছু পথও বের করেছে বার্সা। সুইডিশ মিউজিক স্ট্রিমিং প্রতিষ্ঠান স্পটিফাইয়ের সঙ্গে চার বছরের চুক্তিতে ২৮ কোটি ইউরো পাবে বার্সা, এই চুক্তি কার্যকর হবে জুলাই থেকে। বার্সার জার্সি, অনুশীলনের সরঞ্জামে প্রতিষ্ঠানটির লোগো ব্যবহার করা হবে। ক্যাম্প ন্যু স্টেডিয়ামের নামও হবে ‘স্পটিফাই ক্যাম্প ন্যু।’ এর পাশাপাশি ক্যাম্প ন্যুতে টাকার বিনিময়ে ভক্তদের খেলাধুলা এবং বিয়ে করার অনুমতিও দিয়েছে বার্সা।