বাংলাদেশের সেই ম্যাচ থেকেই ফুটবলের প্রেমে মঙ্গোলিয়ার অধিনায়ক
১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০০১। ছোট্ট ছেলেটির বয়স তখন মাত্র ১১। দেশের খেলা দেখতে বসেছিল টিভির সামনে। ২০০২ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ১০ নম্বর অঞ্চলের খেলা চলছিল সৌদি আরবের দাম্মামে। মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে পিছিয়ে পড়েও ২-১ গোলে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় শেষক্ষণে। অতিরিক্ত ৪ মিনিট সময়ে শেষ কয়েক সেকেন্ড আগে ম্যাচটি নাটকীয়ভাবে ড্র করে মঙ্গোলিয়া। বাংলাদেশ ২, মঙ্গোলিয়া ২।
সেই ছোট্ট ছেলেটিই আজকের আয়িস খুরেলবাত্তার। সিলেট সফরে আসা মঙ্গোলিয়া জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক। যিনি কিনা ১১ বছর বয়সে বাংলাদেশের সঙ্গে মঙ্গোলিয়ার সেই ড্র দেখে ফুটবলের প্রতি উজ্জীবিত হয়েছিলেন। আগামীকাল তাঁর নেতৃত্বেই সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ফিফা প্রীতি ম্যাচে বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে মঙ্গোলিয়া।
দাম্মামে বাংলাদেশের কাছে প্রথম লেগে ৩-০ গোলে হেরেছিল মঙ্গোলিয়া। ফিরতি ম্যাচে ২-২ ড্র আজও খুরেলবাত্তার মনে দোলা দেয়। সেই ম্যাচ নিয়ে অতীতে ফিরে আপ্লুত হয়ে ওঠেন ৩২ বছর বয়সী মিডফিল্ডার। আজ সোমবার দুপুরে সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে খুলে বললেন ২১ বছর আগে বাংলাদেশ-মঙ্গোলিয়া ম্যাচ তাঁকে কতটা ফুটবলে টেনে নিয়েছিল।
ফুটবলার কীভাবে হলেন এমন প্রশ্নে উত্তর দিলেন নিজের ভাষাতেই। দোভাষির ভূমিকায় পাশে বসা দলীয় ডাক্তার ইংরেজিতে তরজমা করে দেন সেটি। যা এমন, ‘বাংলাদেশ ফুটবল দলকে নিয়ে আমার রয়েছে দারুণ একটি সুখস্মৃতি। ২১ বছর আগে আমরা বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেছিলাম। সেই ম্যাচ ২-২ ড্র করি। সত্যিই অসাধারণ ছিল সেটা। ম্যাচটা আমি টিভিতে দেখি। আমার কিশোর বয়সে বাংলাদেশের সঙ্গে মঙ্গোলিয়ার সেই ড্র ভীষণ দাগ কেটেছিল।’
‘৯৪তম মিনিটে সেদিন নাটকীয়ভাবে গোল করে ম্যাচ ড্র করলেন মঙ্গোলিয়ার অধিনায়ক। খুরেলবাত্তার তা মনে আছে ভালোভাবেই,’ মঙ্গোলিয়ার সুপারস্টার বুমান উচরাল ওই গোলটা করেছিলেন। এখন টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর হিসেবে মঙ্গোলিয়া ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে কাজ করছেন এবং সিলেটে এসেছেন আমাদের সঙ্গে। সেটি ছিল কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে আমাদের দেশের প্রথম পয়েন্ট অর্জন। আমরা ভীষণ খুশি ছিলাম সেই ড্রতে। সেই থেকে আমি গভীর মনোযোগে ফুটবল খেলতে থাকি।’
২০০৭ সালে মঙ্গোলিয়া জাতীয় দলে খেলা শুরু তাঁর। ১৫ বছর ধরে জাতীয় দলে খেলে চলেছেন ১০ নম্বর জার্সিধারী এই ফুটবলার। পেশায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেন। তবে সারাক্ষণ নাকি ফুটবলে মন পড়ে থাকে তাঁর।
অধিনায়কের কাছেই জানা গেল, তুষারপাতের কারণে বেশির ভাগ সময়ই অনুশীলন করতে পারেন না মঙ্গোলিয়ার ফুটবলাররা। জনপ্রিয়তায় দেশটিতে ফুটবল অনেকটা পিছিয়ে। আমজনতার জীবনে এখনো এই খেলাটি সেভাবে জায়গা করে নিতে পারেনি। তবে অধিনায়ক বলছিলেন, ‘খোঁজখবর নিয়ে যতটা জানতে পেরেছি, বাংলাদেশে এক নম্বর খেলা ক্রিকেট। এখানে ফুটবলও ভীষণ জনপ্রিয়। কিন্তু আমাদের দেশে এক নম্বর খেলা রেসলিং। লোকে রেসলিং খুব উপভোগ করে। তবে এখন ফুটবলেও আগ্রহ বাড়ছে। অনেক কিশোর এখন ফুটবল খেলেছে।’
খেলছে বটে কিন্তু মঙ্গোলিয়ায় ফুটবল খেলা নাকি সহজ নয়। আবহাওয়া একটা বড় কারণ। গত নভেম্বরে ঘরোয়া খেলা শুরু হয়ে দুই সপ্তাহ পর নাকি বন্ধ হয়ে যায় তীব্র শীতের কারণে। ফলে মঙ্গোলিয়ার খেলোয়াড়েরা অনুশীলনের মধ্যে ছিলেন না গত কয়েক মাস। সংবাদ সম্মেলনে জাপানি কোচ ইচিরো ওসুকা তাই বারবারই বলেন, ‘আমরা ভিন্ন আবহাওয়ায় এসেছি। মাইনাস থেকে ১৩-১৪ থেকে। আমাদের প্রস্তুতি ভালো নয়।’
অবশ্য সিলেটে ভিন্ন কন্ডিশন দলে প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন কোচ, ‘এখানে তাপমাত্রা খুব বেশি নয় (আজ ৩০ ডিগ্রি)। আমাদের জন্য এটা সহনীয় এবং ভালোই হবে আশা করি।’ দিলেন চমকপ্রদ এক তথ্যও, ‘দেখুন, আমি খেলোয়াড়দের নিয়ে কাজ করতে পারিনি। ফলে আমি এখনো আমার সব খেলোয়াড়ের নামও জানি না। জানি না ওদের অবস্থাও। আমার মনে হয় অবস্থা খুব একটা ভালা নয়। তবে আমাদের দেশে তাপমাত্রা মাইনাস হলে ফুটবলারদের মনের তাপমাত্রা বেশিই আছে।’
বাংলাদেশের বিপক্ষে নতুন কতজনের অভিষেক হবে মঙ্গোলিয়া দলে? ‘সবাই তো আমার কাছে নতুন। আমি এদের নিয়ে কাজ করতে পারিনি।’ অধিনায়ককে পাশে বসিয়ে হেসে বলছিলেন জাপানি ভদ্রলোক।
আগামীকাল ম্যাচের ফল যা–ই হোক, সেটা জুনে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের আগে দলের জন্য সহায়ক মনে করেন মঙ্গোলিয়ান কোচ। বাংলাদেশের সঙ্গে ড্র কি জয়ের সমান হবে? সেটাও খারাপ ফল হবে না। বুঝিয়ে দেন ড্র-ই হবে মঙ্গোলিয়ার কাছে জয়ের সমান।
সিলেট আসার আগে ২৪ মার্চ লাওসের কাছে লাওসের মাঠে ফিফা প্রীতি ম্যাচে মঙ্গোলিয়া হেরেছে ১-০ গোলে। মালেতে যেমন একই দিনে মালদ্বীপের কাছে ২-০ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। এই জায়গায় দুই দলই দাঁড়িয়ে সমান্তরালে। তাই দুই দলই কালকের ম্যাচ জিততে মরিয়া। মঙ্গোলিয়ার কোচ ও অধিনায়ক যেমন অভিন্ন সুরে বলেন, ‘আমরা এখানে জিততেই এসেছি।’
কৃত্রিম মাঠে খেলেন মঙ্গোলিয়ান ফুটবলাররা। সিলেটের ঘাসের মাঠে খেলতে সমস্যা হবে না বলেন কোচ। বালাদেশ দল সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন, ‘বাংলাদেশ আক্রমণাত্মক খেলে। অধিনায়ক তার চারপাশে বল বাড়ায়। গোলকিপার জিকো...। ব্রাজিলিয়ান জিকো...(হাসি)।’
অধিনায়ককে সঙ্গে নিয়ে এরপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা মঙ্গোলিয়ান কোচের। বাংলাদেশের কোচ-অধিনায়ক এলে চারজনের ফটোনেশন হলো। সৌহার্দ্য বিনিময় করলেন তাঁরা। সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে তৈরি হলো অন্য রকম পরিবেশ। তবে আগামীকাল মাঠে এই সৌহার্দ্য আর থাকবে না দুই পক্ষে।