বাংলাদেশের আরেকটি হতাশার দিন

দারুণ শুরুর পরও ইনিংস বড় করতে পারেননি তামিম ইকবালএএফপি

অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম দিনের মতো না হলেও সেন্ট লুসিয়ার প্রথম দিনটিও হতাশার মধ্য দিয়েই শেষ হলো বাংলাদেশের। আগে ব্যাটিং করে ২৩৪ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর ১৬ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোনো উইকেট নিতে পারেনি সাকিব আল হাসানের দল। ক্রেগ ব্রাফেট ও জন ক্যাম্পবেলের উদ্বোধনী জুটিতে উঠেছে ৬৭ রান, ১০ উইকেট বাকি রেখে ১৬৭ রানে পিছিয়ে তারা। শেষ দিকে রানের গতি একটু কমে এলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওপেনাররা শুরুতে চড়াও হয়েছিলেন বেশ, প্রথম ১২ ওভারেই তারা তোলেন ৬৭ রান।

আরও পড়ুন

ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই জন ক্যাম্পবেলকে এলবিডব্লু করেছিলেন খালেদ, তবে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান ক্যারিবীয় ওপেনার। ১১তম ওভারে ইবাদতের বলে ইনসাইড-এজে বোল্ড হতে ধরেছিলেন ক্যাম্পবেলই। এ ছাড়া সে অর্থে বাংলাদেশ বোলাররা সুযোগ তৈরি করতে পারেননি। অষ্টম ওভারে ম্যাচে প্রথম স্পিনার হিসেবে আসা সাকিব আল হাসান বা পরে মেহেদী হাসান মিরাজ—কার্যকর হয়নি কারও বোলিং-ই। ড্যারেন স্যামি স্টেডিয়ামের এ উইকেট বেশ ব্যাটিং সহায়ক, পেসাররা সে ভাবে মুভমেন্ট পাননি। বাংলাদেশের ব্যাটিং পারফরম্যান্স তাই হয়ে উঠেছে আরও বেশি হতাশার।

২ উইকেট নেন অ্যান্ডারসন ফিলিপ
এএফপি

অ্যান্টিগার তুলনায় অবশ্য বেশ ইতিবাচক শুরুই হয়েছিল বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। প্রথম সেশনে দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল হাসানকে হারিয়ে বাংলাদেশ তোলে ৭৭ রান। মধ্যাহ্নবিরতির ঠিক আগ দিয়ে আলজারি জোসেফের বলে আলগা শটে আউট হওয়ার আগে দাপুটে ব্যাটিং-ই করছিলেন তামিম ইকবাল, ৯ চারে তিনি করেন ৪৬ রান। রিভিউয়ের সহায়তায় দুইবার বেঁচে যাওয়া মাহমুদুল হাসান অবশ্য এর আগেই অভিষিক্ত অ্যান্ডারসন ফিলিপের ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেটে পরিণত হন—ভেতরের দিকে ঢোকা বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে হন বোল্ড।

আরও পড়ুন

দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশের ব্যাটিং ফেরে পুরোনো চেহারায়। নাজমুল হোসেন ও আট বছর পর টেস্টে ফেরা এনামুল হক—দুজনই থিতু হচ্ছিলেন। তবে আম্পায়ার্স কলের ‘কবলে’ পড়েন দুজনই। ফিলিপের বলে এনামুলের নেওয়া রিভিউয়ে ইমপ্যাক্ট ছিল আম্পায়ার্স কল, কাইল মেয়ার্সের বলে নাজমুলের রিভিউয়ে আম্পায়ার্স কল ছিল উইকেটের ক্ষেত্রে। হক আই দেখায়, লেগ স্টাম্পের একেবারে চূড়া শুধু যেত মেয়ার্সের বলটি। নাজমুল করেন ২৬ রান। মুমিনুল হকের বদলে দলে আসা এনামুল করেন ২৩।

৮ বলের ব্যবধানে ১০৫ রানেই ২টি উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশ আরও চাপে পড়ে সাকিব আল হাসান ও নুরুল হাসানের উইকেটে। এ দুজন ফেরেন ১৩ রানের ব্যবধানে। সিলসের অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্টাম্পে ডেকে আনেন সাকিব, নুরুল পরাস্ত হন জোসেফের বাউন্সারে। ১৩৮ রানে ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশ এরপরও ২৩৪ পর্যন্ত যেতে পারে লিটন দাসের অর্ধশতক ও টেল-এন্ডে শরীফুল ইসলাম ও ইবাদত হোসেনের ব্যাটিংয়ে ভর করে।

আরও পড়ুন

চা-বিরতির পরপরই মেহেদী হাসান মিরাজের উইকেট দিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশের তৃতীয় সেশন। কাইল মেয়ার্সের বলে গালিতে ডেভন থমাসের বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে নেওয়ার দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন মিরাজ। লিটন দাসকে সঙ্গ দেওয়ার মতো থাকেন এরপর টেল-এন্ডের ব্যাটসম্যানরা। ১৬৫ রানেই সপ্তম উইকেট হারানোর পর শেষ অষ্টম ও নবম উইকেট জুটিতে ওঠে ৬২ রান।

আট বছর পর টেস্টে ফিরে এনামুল ফিরেছেন ২৩ রান করে
এএফপি

জেইডেন সিলসকে চার মেরে মাত্র ৬৬ বলে ক্যারিয়ারের ১৪তম অর্ধশতক পূর্ণ করা লিটন অবশ্য এরপর বেশিক্ষণ টেকেননি, জোসেফের শর্ট অব আ লেংথের বলে তুলে মারতে গিয়ে মিড-অনে ধরা পড়েন। ক্যারিবীয়দের এরপর হতাশ করেন শরীফুল ইসলাম ও ইবাদত হোসেন। ১৭ বলে ৫ চারে ক্যারিয়ারসর্বোচ্চ ২৬ রান করেন শরীফুল। সিলসকে তুলে মারতে গিয়ে শরীফুল ফিরলে ভাঙে দুজনের ৩২ রানের জুটি। এরপর খালেদ আহমেদ অবশ্য খুব বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি ইবাদতকে, সিলসের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি। ইবাদত অপরাজিত থাকেন ৩৫ বলে ২১ রান করে, মারেন ৩টি চার। শুধু টেস্ট নয়, প্রথম শ্রেণিতেই ইবাদতের এটি সর্বোচ্চ স্কোর।

আরও পড়ুন

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিলস ও আলজারি জোসেফ নেন ৩টি করে উইকেট, ২টি করে নিয়েছেন কাইল মেয়ার্স ও অ্যান্ডারসন ফিলিপ। ২৫০তম উইকেটের অপেক্ষা আরেকটু বেড়েছে কেমার রোচের। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এ ইনিংসে মেরেছে ৩৯টি চার, মানে ৬৬.৬৭ শতাংশ রানই এসেছে চার থেকে। এর আগে এত কম রানের স্কোরে কখনোই এতগুলো চার মারেনি বাংলাদেশ। তবে বাউন্ডারিই এসেছে শুধু, স্কোরটা বড় হয়নি, লম্বা ইনিংসও খেলতে পারেননি কেউ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

১ম দিন

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৬৪.২ ওভারে ২৩৪ (তামিম ৪৬, নাজমুল ২৬, এনামুল ২৩, লিটন ৫৩, ইবাদত ২১, শরীফুল ২৬, খালেদ ১; জোসেফ ৩/৫০, সিলস ৩/৫৩, ফিলিপ ২/৩০, মেয়ার্স ২/৩৫)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস : ১৬ ওভারে ৬৭/০ (ব্রাফেট ৩০, ক্যাম্পবেল ৩২)