নড়াইলে টিটি উপেক্ষিত, এক কক্ষেই আটকে আছে প্রশিক্ষণ
আগে ছিল ৬০ ফুট দীর্ঘ ও ১৮ ফুট চওড়া একটি টিনের ঘর, এখন তা এক কক্ষবিশিষ্ট একতলা একটি ঘর। তবে প্রস্থ ঠিক থাকলেও দৈর্ঘ্যে অর্ধেক কমে ৩০ ফুট হয়েছে। নড়াইল পৌরসভার পুকুরপাড়ের এই ঘর দেখে কে বলবে, এটাই বাংলাদেশের টেবিল টেনিসের (টিটি) একটি উজ্জ্বল অধ্যায়ের সূতিকাগার।
মোস্তফা বিল্লাহ, মাহাবুব বিল্লাহ, এডিসন, গৌতম, পাপ্পু, সালেহা, রুমি, মিশু, মীম, মৌ, সিন্থি, ঐশী, স্নিগ্ধা, সাব্বির, জয়, অন্তরের মতো দেশের টিটি অঙ্গনের নামী খেলোয়াড়েরা এই নড়াইলেরই সন্তান। সবার টেবিল টেনিসের দীক্ষা এই ঘরেই। বছরের পর বছর জাতীয় টিটি দলের খেলোয়াড় জোগান দিয়ে চলেছে যে নড়াইল, তার মূলে আছে এই ঘর। এটাই নড়াইল টেবিল টেনিসের একমাত্র সম্বল।
সত্তরের দশকের সেই সময়ের নড়াইল মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমের হাত ধরে নড়াইল টেবিল টেনিসের গোড়াপত্তন। পরে আরও অনেকের সহযোগিতায় সেটি ডালপালা ছড়িয়েছে। তারই ফল ভোগ করছে দেশের টেবিল টেনিস। কিন্তু নড়াইল টিটির প্রাণকেন্দ্র এক কক্ষের ছোট আয়তনেই রয়ে গেছে।
প্রায় সারা বছরই এখানে অনুশীলন চলে। খেলোয়াড়ের সংখ্যা বেড়েছে। সে তুলনায় বাড়েনি সুযোগ-সুবিধা। অনুশীলনের জন্য দুটি মাত্র টেবিল। তার একটি ভাঙা। পালাক্রমে অনুশীলন করতে হয় টিটি খেলোয়াড়দের। বিছা, পিঁপড়া, আরশোলা, টিকটিকির সঙ্গে ভ্যাপসা গরমে মানিয়ে নিয়ে এখানে অনুশীলন করতে হয় নবীন প্রশিক্ষণার্থীদের। সারা বছরই অনুশীলন চলে। দিনে ছোটদের, রাতে বড়দের।
সন্ধ্যায় সেখানে নিয়মিত অনুশীলন করতে আসেন জাতীয় পর্যায়ে মেয়েদের টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায় একাধিকবারের চ্যাম্পিয়ন সাদিয়া রহমান মৌ। তিনি বলেন, দুটি মাত্র টেবিল রাখা আছে। এর মধ্যে একটি নষ্ট। অনুশীলনের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ভ্যাপসা গরমে ছোট ছেলেমেয়েরা এত কষ্ট করে যে দেখলে মন খারাপ হয়ে যায়। পোশাক পরিবর্তন বা বাথরুমের কোনো ব্যবস্থাও নেই।
পুকুরপাড় ভাঙনের কবলে পড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ঘরটি। অনুশীলনের জন্য প্রয়োজনীয় যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকা প্রয়োজন, বলতে গেলে তার কিছুই নেই। অর্থসংকটে ভুগতে থাকা জেলা ক্রীড়া সংস্থার যৎসামান্য সহযোগিতা এবং টিটির জাতীয় তারকাদের ঐকান্তিক চেষ্টায় চলে অনুশীলন। টেবিল টেনিসের বড় কর্মকর্তাসহ নামীদামি অনেকেই এখানকার পরিবেশ দেখে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেই প্রতিশ্রুতিও আলোর মুখ দেখেনি।
এভাবে আর কত দিন ? অনাদর, অবহেলা, অনুশীলনের একটি ঘর, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং মিথ্যা প্রতিশ্রুতি-আশ্বাস নিয়ে আর কত দিন চলবে নড়াইল টিটির এই প্রাণকেন্দ্র? এ অবস্থা চলতে থাকলে কি আর জাতীয় টিটিতে মানসম্পন্ন খেলোয়াড়ের অন্তহীন প্রবাহ ধরে রাখতে পারবে নড়াইল? এ প্রশ্ন আজ বড় হয়ে উঠেছে। স্থানীয় খেলোয়াড়দের দাবি, অনুশীলন করার মতো একটি জিমনেসিয়াম দরকার।
জাতীয় খেলোয়াড় হওয়ার সুবাদে মাহাবুব বিল্লাহ বিভিন্ন দেশে টেবিল টেনিস খেলতে গেছেন। তিনি বলেন, এখানে যে কষ্ট করে অনুশীলন করতে হয় তাঁদের, এমনটা আর পৃথিবীর কোথাও নেই। জিমনেসিয়ামের দাবি ছিল তাঁদের, সেটিও পূরণ হয়নি।
নড়াইল থেকে উঠে আসা জাতীয় টিটি তারকাদের ক্ষোভ, তাঁরা ছোট শহর নড়াইল থেকে উঠে এসে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যে পরিবেশে নড়াইলের ছেলেমেয়েরা অনুশীলন করে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার উপায় নেই। অনেকেই সাহায্য-সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু কেউ কথা রাখেননি। নড়াইল টিটির উন্নয়নে টিটি ফেডারেশন কয়েক বছর আগে কয়েকটি টেবিল, খেলার ব্যাট ও বল দেওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব সেরেছে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক, ভলিবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উপমহাসচিব আশিকুর রহমান মিকু ক্রীড়া সংস্থার আর্থিক দৈন্যের কথা স্বীকার করে বলেছেন, টিটি ঘরের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য তহবিল সংগ্রহ করে এক কক্ষবিশিষ্ট একটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে সহযোগিতা পাওয়া গেলে ঘর সম্প্রসারণের কাজ করা হবে।