দুপুর একটা–দেড়টা পর্যন্ত কোনো দল মাঠেই এলো না। বৃষ্টিতে মাঠ ভেজা থাকায় নির্ধারিত সময় সকাল ১০টায় খেলা শুরু হতে পারেনি। এরপর বেলা সাড়ে ১১টা এবং দুপুর ১টার মাঠ পরির্শনেও দিনের খেলা শুরুর সুসংবাদ দিতে পারেননি আম্পায়াররা। সেন্ট লুসিয়া টেস্টের চতুর্থ দিন দুপুর পর্যন্ত বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুই দলই তাই কাটিয়ে দিল হোটেলে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটারদের জন্য অপেক্ষাটা একটু বিরক্তিকরই ছিল। বৃষ্টি বাধা হয়ে না দাঁড়ালে যে ম্যাচ তারা জিতে যেতে পারতেন তৃতীয় দিনেই, সেটির জন্যই কিনা অপেক্ষা করতে হলো চতুর্থ দিন শেষ বেলা পর্যন্ত! বিকাল ৩টায় খেলা শুরুর কাঙ্ক্ষিত ঘোষণাটা এসেছে দুপুর সোয়া ২টায় মাঠ পরিদর্শনের পর।
প্রথম ইনিংসে ১৭৪ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস ব্যাট করতে নেমেছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু তৃতীয় তিন বিকেলে বৃষ্টিতে খেলা থামার আগেই বাংলাদেশের ইনিংস মোটামুটি লেজের কাছাকাছি চলে আসে। ৬ উইকেটে ১৩২ রান নিয়ে দিন শেষ করার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আরেকবার ব্যাটিংয়ে নামিয়ে ইনিংস হার এড়াতে আজ চতুর্থ দিনে হাতে থাকা ৪ উইকেটে বাংলাদেশকে করতে হতো অন্তত ৪২ রান।
নুরুল হাসানের সাহসী ফিফটির সৌজন্যে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত সেই লক্ষ্য টপকালেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে তারা দিতে পেরেছে মাত্র ১৩ রানের লক্ষ্য। দুই ওপেনার ক্রেগ ব্রাফেট আর জন ক্যাম্পবেল মিলে ২.৫ ওভারেই সেরেছেন সেই আনুষ্ঠানিকতা। ১০ উইকেটের জয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজটাও জিতে নিল ২–০ তে।
ক্যারিবীয় দুই পেসার কেমার রোচ আর আলজারি জোসেফ শুরু থেকেই বাউান্সর তাক করেছেন আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান নুরুল ও মেহেদী হাসান মিরাজের দিকে। এদিকে নুরুলও আক্রমণের জবাব দিচ্ছিলেন পাল্টা আক্রমণে। রোচের করা দিনের দ্বিতীয় বলেই স্লিপের ফাঁক গলে বের করে নেন বাউন্ডারি। রোচেরই করা ৪১তম ওভারে তো এক বাউন্ডারির সঙ্গে মেরেছেন মিড উইকেট দিয়ে একটা ছক্কাও। জোসেফের পরের ওভারে দুই শর্ট বলে মেরেছেন আরো দুই বাউন্ডারি।
নিশ্চিত হারের মুখে দাঁড়িয়েও ক্যারিবীয় গতি আর বাউন্সারের সামনে বেশ সাহসী ছিলেন নুরুল। বিশেষ করে জোসেফের বাউন্সারগুলোতে তাঁর পাল্টা আক্রমণে দ্রুতই বাংলাদেশ পার হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের লিড। ৪৪ তম ওভারে নুরুলের ব্যাট থেকেই জোসেফের পরপর দুই বলে এসেছে চার আর কাউ কর্নার দিয়ে মারা ছক্কা। দ্বিতীয় বলে কাভার দিয়ে মারা বাউন্ডারিটি তো তাঁকে ফিফটিই এনে দেয়, যেটি পেতে নুরুলের লেগেছে মাত্র ৪০ বল।
কিন্তু অন্যদিকে যে বাউন্সারের ঝড় সামলাতে পারছিলেন না কেউই! চতুর্থ দিনে দলের স্কোরবোর্ডে আর ১৬ রান যোগ হতে জোসেফের সেরকমই এক বাউন্সারে কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন মিরাজ। তার আগের বলেই অবশ্য উইকেটকিপারের মাথার ওপর দিয়ে বাউন্ডারি খুঁজে পেয়েছিল তাঁর ব্যাট।
জেইডেন সিলসের করা ৪৩তম ওভারে ফিরে যান ইবাদত আর শরীফুলও। শেষ ব্যাটসম্যান খালেদ আহমেদ রান আউট হয়ে গেলে ৫০ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ক্ষতবিক্ষত আরেকটি স্কোরকার্ডে ব্যতিক্রম কেবল দুই ছক্কা আর ছয় চারে নুরুলের ৫০ বলে ৬০ রান।
এর আগে সকাল থেকেই অপেক্ষা ছিল কখন শুরু হবে দিনের খেলা। আগের রাতে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে সেন্ট লুসিয়ায়। ভোর থেকে তো ঘন্টা দুয়েক বেশ ভারী বৃষ্টিই হলো। পরে বৃষ্টি থামলেও সূর্যের দেখা পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে বিকেল পর্যন্ত। মাঠও ছিল ভেজা। এমনিতে দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ার সুখ্যাতি আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আধুনিকতম ড্যারেন স্যামি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের। তবু এই মাঠকেই খেলার উপযোগী করতে গলদঘর্ম অবস্থা হয়েছে মাঠকর্মীদের। সুপারসপার দিয়ে আউটফিল্ডের পানি শুষে নেওয়ার পাশাপাশি উইকেট শুকাতে ব্যবহার করা হয়েছে ব্লোয়ার।
যেটার জন্য মাঠ কর্মীদের এই প্রানান্ত চেষ্টা, বিকাল ৩টায় শুরুর পর সেই খেলার স্থায়ীত্ব হলো মাত্র ১ ঘন্টা ১০ মিনিট। অবশ্য ম্যাচটা যে তৃতীয় দিনেই শেষ হয়ে যায়নি, সেটিও বাংলাদেশের জন্য অনেক। তিন বার বৃষ্টি বিঘ্নিত তৃতীয় দিনে খেলা হতে পেরেছে মাত্র ৫৬.৩ ওভার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের অপেক্ষাটাও বেড়েছে সে কারণেই। আজ শেষ বেলায় যেটির অবসান হয়েছে বড় জয়ে। সারাদিনের গোমড়া আকাশের পর স্বাগতিকদের জয় উদ্যাপন করতেই কিনা ম্যাচ শেষ হওয়ার কিছু আগে হেসে উঠেছে সেন্ট লুসিয়ার সূর্য।