নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে অভিনন্দন। একপেশে ম্যাচে তারা নিউজিল্যান্ডকে পুরোপুরি বিধ্বস্ত করে পঞ্চমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অনেক দিক দিয়েই ফাইনালটা ছিল হতাশার। মঞ্চটা জমজমাট একটা দ্বৈরথের জন্য প্রস্তুত ছিল। কারণ সেরা দুই দলই এখানে এসেছে। যা-ই হোক, দিনটা ছিল অস্ট্রেলিয়ার। তাদের পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। চাপটা তারা নিউজিল্যান্ডের চেয়ে অনেক ভালোভাবে সামাল দিয়েছে। দুঃখজনকভাবে ব্ল্যাক ক্যাপরা টুর্নামেন্টে নিজেদের সবচেয়ে খারাপ ম্যাচ খেলেছে এখানেই।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দুর্দম আকাঙ্ক্ষা নিয়েই ফাইনালে এসেছিল দুই দল। ব্ল্যাক ক্যাপদের জন্য ছিল নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটে অসাধারণ কিছু করার সুযোগ। আগের ১০ বার নিউজিল্যান্ড দল যেটি করতে পারেনি, সেটা আবার তারা করেছে। প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠে জয়টা তারা খুব করেই চেয়েছিল। ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বর বড় ভাইদের তারা হারাতে চেয়েছিল। টুর্নামেন্টে ৮ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর এই পুরস্কারটা তো তারা চাইবেই! ১৮ বছর ধরে দলের জন্য নিজেকে সঁপে দেওয়া ড্যানিয়েল ভেট্টোরির বিদায়টা রাঙিয়ে দিতে চেয়েছিল। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম আশা করেছিল, দল নিজেদের সেরাটা খেলবে। মানুষের মধ্যে যে আবেগটা ফুলেফেঁপে উঠছিল, সেটা নিশ্চয়ই সে বুঝতে পেরেছে। পুরো দেশ একসঙ্গে স্বপ্ন দেখছিল ইতিহাস গড়ার। আফসোস, সেটা হয়নি। তবে আমি নিশ্চিত, এই নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে সবাই গর্বিত।
যখন ৩৯ রানে ৩ উইকেট পড়ে গিয়েছিল, বড় স্কোরের সম্ভাবনা সুদূরপরাহত বলেই মনে হচ্ছিল। গ্র্যান্ট এলিয়ট (৮৩) ও রস টেলরের ব্যাটে ভর করে তারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু জেমস ফকনার ও মিচেল জনসনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে শেষ ৭ উইকেট পড়ে যায় ৩৩ রানেই। ১৮৪ রান নিয়ে ম্যাচ জেতার চেষ্টা করা সব সময়ই খুব কঠিন।
শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া খুব সহজেই রান তাড়া করেছে। চার বছরের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির ফসল তুলতে ৭ ঘণ্টার অসাধারণ একটা পারফরম্যান্স দরকার ছিল। কিন্তু মাত্র ৪৫ ওভার তারা ব্যাট করতে পেরেছে, পরে নিতে পেরেছে অস্ট্রেলিয়ার ৩ উইকেট। মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দলকে প্রস্তুতির জন্য কোচ অনেক খেটেছেন। তারা হয়তো আরেকটি সুযোগ নাও পেতে পারে। আর এই পরাজয়টা ওদের অনেক দিন ধরেই তাড়িয়ে বেড়াবে, তাদের সামর্থ্যের সঙ্গে এটা যে একেবারেই যায় না!
অস্ট্রেলিয়ার জন্য ম্যাচটা ছিল মধুর প্রতিশোধ। অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ড তাদের ১ উইকেটে হারিয়েছিল। সেই পরাজয়টা তাদের এককাট্টা হতে সাহায্য করেছে। এরপর তারা দারুণ ক্রিকেট খেলে সব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। মাইকেল ক্লার্কের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ ছিল এটি। দল তাকে প্রত্যাশামতোই একটা উপহার দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া সব সময় দাবি করে, তারাই টুর্নামেন্টের সেরা দল। বড় উপলক্ষে কীভাবে নিজেদের উজাড় করে দিতে হয়, তারা সেটা ভালোই জানে।
এমসিজিও নিউজিল্যান্ডের জন্য ঠিক পয়া মাঠ নয়। এখানে তারা ছয় বছর খেলেনি, ২৪ ম্যাচের মাত্র ৮টি জিতেছে। রেকর্ড ৯৩ হাজার দর্শকের গমগম করা মাঠটা অস্ট্রেলিয়ার জন্য একরকম দুর্গই। ম্যাচ শেষে জয়ী খেলোয়াড়েরা চার লাখ ডলার করে পাবে। ছয় মাসের পরিশ্রমের পর এ রকম একটা পুরস্কার মন্দ নয়! (হক-আই)।