বোলার জ্যাক লিচ নিজেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না, আদতে কী ঘটল। ঘটনার ফলটা সরলই—লিচের বলে অ্যালেক্স লিসের হাতে ধরা পড়েছেন হেনরি নিকোলস। তবে ঘটনাটি যেভাবে ঘটেছে, তাতেই চলে আসে অবিশ্বাস্য শব্দটা। লিচকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলেছিলেন নিকোলস, বল যাচ্ছিল মিড অনের দিকে। নিজেকে বলের পথ থেকে সরিয়ে নিচ্ছিলেন নন-স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা ড্যারিল মিচেল। তবে বলটা ঠিক খুঁজে নিল মিচেলের ব্যাটের ‘মিডল’, এরপর সোজা মিড অফে দাঁড়িয়ে থাকা লিসের হাতে! লিচ বুঝে উঠতে পারেননি, তবে পেয়ে গেছেন উইকেট! নিকোলস অবশ্য পুরো ঘটনাই দেখেছেন, তবে তিনিও নিশ্চয়ই বিশ্বাস করতে পারেননি নিজের ভাগ্যটা!
হেডিংলি টেস্টের প্রথম দিন নিকোলসের অমন অদ্ভুত আউটের আগে-পরে অবশ্য এ সিরিজের পরিপ্রেক্ষিতে খুব নতুন ঘটনা নেই। ব্যাটিংয়ে আবার চাপে পড়েছে নিউজিল্যান্ড, আবারও তাদের উদ্ধারের দায়িত্বটা নিয়েছেন মিচেল, সঙ্গে আবার আছেন টম ব্লান্ডেল। বৃষ্টিবিঘ্নিত দিনেও ৯০ ওভারই খেলা হয়েছে, তাতে ৫ উইকেটে ২২৫ রান তুলেছে নিউজিল্যান্ড। মিচেল ও ব্লান্ডেলের জুটি অবিচ্ছিন্ন ১০২ রানে। মিচেল অপরাজিত আছেন ৭৮ রানে, ব্লান্ডেলের রান ৪৫।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামা নিউজিল্যান্ড প্রথম উইকেট হারায় দিনের প্রথম ওভারেই। ভুলে যাওয়ার মতো এক সিরিজ কাটানো টম ল্যাথাম কট বিহাইন্ড হন স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে। পুরো ওভারজুড়েই তাঁকে দারুণ সেটআপে ফেলেন ব্রড, এরপর অফ স্টাম্প লাইনের বলে খোঁচা দেন ল্যাথাম। জেমস অ্যান্ডারসনের অনুপস্থিতিতে ইংল্যান্ডের পেস বোলিংয়ের দায়িত্বটা ব্রডের কাঁধেই। নিরাশও করেননি তিনি।
প্রথম সেশনে নিউজিল্যান্ড হারায় আরও ২ উইকেট। ম্যাচে নিজের প্রথম বলেই সফল হন জ্যাক লিচ, তাঁর বলে এলবিডব্লু উইল ইয়াং। রিভিউ নিয়েছিলেন, তবে বল গিয়ে লাগত মিডল স্টাম্পের মিডলেই! বিরতির আগে আবার আঘাত করেন ব্রড, এবার তাঁর শিকার এ ম্যাচ দিয়ে ফেরা কেইন উইলিয়ামসন। ৩১ রান করে বেন ফোকসের হাতে ক্যাচ দেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। নিউজিল্যান্ড মধ্যাহ্নবিরতিতে যায় ৩ উইকেটে ৬৫ রান নিয়ে।
বিরতির পরপরই উইকেট পেতে পারত ইংল্যান্ড, তবে ম্যাথু পটসের বলে নিকোলসের বিপক্ষে নেওয়া রিভিউটা নাকচ হয় টিভি আম্পায়ার আলিম দার সূক্ষ্ম ইনসাইড এজের উপস্থিতি টের পাওয়ায়। ইংল্যান্ডকে চতুর্থ উইকেটটি এনে দেন অভিষিক্ত জেমি ওভারটন, তাঁর অফ স্টাম্পের বাইরের বলকে স্টাম্পে ডেকে আনেন ডেভন কনওয়ে। ২০২২ সালে যে ১০ বার আউট হলেন কনওয়ে, এর মধ্যে ৬টিই এসেছে ‘ইনসাইড এজ’-এ।
ইংল্যান্ড এরপর পেতে পারত মিচেলের উইকেটও। পটসের বিশাল ইনসুইং মিস করে গিয়েছিলেন মিচেল, আম্পায়ার আউট দেননি, ইংল্যান্ডও রিভিউ করেনি। তবে বল ট্র্যাকিং দেখিয়েছে, মিচেল আউটই ছিলেন। সে সময় তাঁর রান ছিল ৮।
সে সুযোগ হাতছাড়া করার মাশুল ইংল্যান্ড ভালোভাবেই গুনেছে। চা-বিরতির আগে দিয়ে নিকোলসের অমন অদ্ভুত আউটের আগে-পরে ইংল্যান্ডকে আরেকবার হতাশ করে গেছেন মিচেল। শেষ সেশনে আর কোনো উইকেট হারায়নি নিউজিল্যান্ড। ৭৪তম ওভারের পর বৃষ্টি এলে খেলা বন্ধ থাকে কিছুক্ষণ। এর আগেই ১০০ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন মিচেল। দিনের শেষ ওভারে পূর্ণ হয় দুজনের শতরানের জুটি।