নাচুনে গোলকিপারের হাতেই অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপের টিকিট
টাইব্রেকারে শেষ শটটি নিতে প্রস্তুত পেরু ফরোয়ার্ড অ্যালেক্স ভ্যালেরা। গোলপোস্টে অস্ট্রেলিয়ান গোলকিপারের প্রস্তুতিটা একটু অন্যরকম।
পোস্টের দু-দিকে দুই হাত বাড়িয়ে কোমর বাঁকিয়ে একটু নেচে-কুঁদে নিলেন। তাতে অস্ট্রেলিয়ার সমর্থকদের ভরসা পাওয়ার কথা সামান্যই।
পেরুর আগের পাঁচটি টাইব্রেকারের মধ্যে অ্যান্ড্রু রেডমাইন একটাও সেভ করতে পারেননি। তৃতীয় শটটি পোস্টে লেগে লক্ষ্যভ্রষ্ঠ হয়। যেখানে একটাও সেভ করতে পারেননি, সেখানে নাচার মতো অদ্ভুত প্রস্তুতি কারও কারও চোখে বিঁধার কথা। বিঁধে রইলও, সেটা প্রায় সবার চোখেই শেষ শটে, কিন্তু তাতে ব্যথা নয় রেডমাইনকে অস্ট্রেলিয়ার সমর্থকদের সারাজীবন মনে থাকবে।
ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভ্যালেরার শট ঠেকিয়ে রেডমাইনের সে কী উল্লাস! তখন তাঁর আত্মবিশ্বাস দেখে কে বলবে, ৩৩ বছর বয়সী সিডনি এফসির এই গোলকিপার কখনো অস্ট্রেলিয়ান লিগের বাইরে খেলেননি, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এর আগে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছেন একটি, নেপালের বিপক্ষে। প্লে অফ জয়ের পর সতীর্থরাও তাঁকে নিয়ে মেতেছে বুনো উল্লাসে। রেডমাইনের হাতের ইশারায়ই তো কাতার বিশ্বকাপের টিকিট পেল অস্ট্রেলিয়া।
অথচ ম্যাচে রেডমাইন বদলি গোলকিপার। নির্ধারিত সময়ে গোলশুন্য ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে (১২০) নিয়মিত গোলকিপার ম্যাট রায়ানকে তুলে নেন অস্ট্রেলিয়া কোচ গ্রাহাম আর্নল্ড। সেটা যে টাইব্রেকারের ভাবনায় তা সবাই বুঝলেও দলের তৃতীয় গোলকিপারকে নামানোয় অনেকের ভ্রু কুঁচকেছে। টাইব্রেকারে সেটাই হয়ে যায় কোচের মাস্টারস্ট্রোক।
পেনাল্টি শুটআউটে ৫-৪ ব্যবধানে জয়ের পর বিষয়টি খোলাসা করেন অস্ট্রেলিয়ান এই কোচ, 'সে (রেডমাইন) ভালো পেনাল্টি সেভ করতে পারে। আর আমি ওদের (পেরু) মানসিকভাবে নড়বড়ে করতে চেয়েছি। ওরা ভাবতে পারে, ওকে (রেডমাইন), কেন নামাল নিশ্চয়ই ভালো! এসব ভেবেই ওরা হয়তো পোস্টে মেরেছে। পেরুর হয়ে পেনাল্টি যারা নেবেন, তাদের সমস্যায় ফেলতে এটা ছিল এক শতাংশ মানসিক চেস্টা। হ্যাঁ, ঝুঁকি ছিল কিন্তু কাজে লেগেছে।'
টাইব্রেকারে পেরুর খেলোয়াড়েরা শট নেওয়ার আগে গোল লাইনের ওপর একটু নেচে নেন রেডমাইন। দুই হাত দুই পোস্টের দিকে জোরে ঘুরিয়ে কোমরটাও ডান-বাম করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর পেনাল্টি ঠেকানোর ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেরই চোখেই তিনি অস্ট্রেলিয়াকে জেতানোর নায়ক। কিন্তু রেডমাইন একা এই কৃতিত্ব নিতে নারাজ, 'ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এটা দলীয় খেলা। এখানে উপস্থিত দলের বাকি ২৭ জনের চেয়ে এতটুকু বেশি কৃতিত্ব নেই আমার।'
ম্যাচে টাইব্রেকারের মতো মুহূর্ত আসতে পারে, তখন দাঁড়াতে হতে পারে গোলপোস্টে, এই ভাবনা ছিল রেডমাইনের। ছিল প্রস্তুতিও।
সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, 'দল চূড়ান্ত হওয়ার আগে এমন পরিস্থতির কথা সবাই ভেবেছে যে, তখন এমন কিছু কাজে লাগতে পারে। সেটা আমার মাথায়ও ছিল। অনুশীলনে প্রস্তুতিও নিয়েছি। কিন্তু দিন শেষে এটা তো ভাগ্য পরীক্ষা। তাই আমি নায়ক নই, শুধু নিজের দায়িত্বটুকু পালন করেছি।'