না জানিয়ে ১৫ হাজার ডলার, স্যামসাং ফোন, কাপড় নেওয়ায় সাড়ে তিন বছরের নিষেধাজ্ঞা
দুর্নীতিবিরোধী ধারা ভাঙার পাশাপাশি নিষিদ্ধঘোষিত বস্তু গ্রহণের ধারা ভাঙার দায়ে জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলরকে সাড়ে তিন বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি। দুর্নীতিবিরোধী চারটি ধারার সঙ্গে ডোপিং-বিরোধী ধারা ভঙ্গ করেছেন তিনি, সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে আইসিসি। তবে টেলর শাস্তি মেনে নেওয়ায় কোনো আনুষ্ঠানিক শুনানির দরকার পড়েনি।
আইসিসির বিস্তারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৫ হাজার মার্কিন ডলার, একটি স্যামসাং এস-১০ মডেলের ফোন ও নতুন কাপড়চোপড় নেওয়ার সঙ্গে দুর্নীতির প্রস্তাব পাওয়ার কথা আইসিসিকে জানাতে দেরি করেছেন টেলর। গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের সময় টেলর কোকেন নেওয়ার টেস্টেও পজিটিভ হন। এ জন্য আলাদা করে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাঁকে, যদিও সেটি এ সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই কার্যকর হবে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন টেলর। প্রায় ১৭ বছরের ক্যারিয়ার ছিল তাঁর, ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান-সংগ্রাহক তিনি। নিষেধাজ্ঞা শেষে ২০২৫ সালের ২৮ জুলাই আবারও ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন আগামী মাসে ৩৬ পূর্ণ করতে যাওয়া এ উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান।
আইসিসি বলেছে, ২০২০ সালের ৩১ মার্চ টেলর দুর্নীতিবিরোধী বিভাগের কাছে প্রস্তাব পাওয়ার ব্যাপারে রিপোর্ট করেন। এ নিয়ে সে বছরের ১ ও ২ এপ্রিলের পর ১৭ আগস্ট ও ৮ ডিসেম্বর তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। তবে শুরুতে ঘটনার বিস্তারিত জানাতে ব্যর্থ হন টেলর।
টেলরের বর্ণনা অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ভারতীয় ব্যবসায়ী ‘মিস্টার এস’ ২০১৯ সালের আফগানিস্তান প্রিমিয়ার লিগে খেলার ব্যাপারে টেলর আগ্রহী কি না, সেটি জানতে যোগাযোগ করেন টেলরের সঙ্গে। সে সময়ে তাঁকে নিজের এজেন্টের সঙ্গে কথা বলতে বলেন টেলর। তবে এজেন্ট তাঁকে এ ব্যাপারে সময় নষ্ট করতে না করেন। কারণ, তাঁর এজেন্টের ‘ভালো লাগছিল না’ সে ব্যবসায়ীকে।
অবশ্য পরের মাসে সে ব্যবসায়ী আবার টেলরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, ভারতে তিন রাত ও চার দিন ওই ব্যবসায়ীর খরচে ভ্রমণ করতে আমন্ত্রণ জানান। মিস্টার এসের পরিবার ও সহযোগীর সঙ্গে দেখা হয় এরপর টেলরের। সে সময়ে মিস্টার এস জিম্বাবুয়েতে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট শুরু করার ব্যাপারে কথা বলতে চান টেলরের সঙ্গে, সম্ভাব্য স্পনসরশিপ নিয়ে আলোচনার পর দিতে চান ১৫ হাজার মার্কিন ডলার।
আইসিসিকে দেওয়া টেলরের ভাষ্য অনুযায়ী, সে সময় তিনি মিস্টার এসকে বলেন, ‘উল্টাপাল্টা কিছু থাকলে আমি যাব না।’ তবে মিস্টার এস বলেন, ‘আমরা অমন না, আমরা বৈধভাবে কাজ করি।’ টেলরের দাবি অনুযায়ী, ভারতে যাওয়ার পর তাঁকে স্যামসাং এস-১০ মডেলের একটা ফোন দেওয়া হয়। কারণ, তাঁর নিজেরটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ভারতে খরচ করার জন্য কিছু রুপি, নতুন কাপড়ও দেওয়া হয় তাঁকে। সঙ্গে পান বিনোদনের ব্যবস্থাও ছিল।
সে সফরের শেষদিকে স্পট ফিক্সিংয়ের ব্যাপারে আলোচনা হয়। টেলরকে বলা হয়, সম্পৃক্ত হলে ৩৫ হাজার মার্কিন ডলার আয় করতে পারবেন। আরও একজন ক্রিকেটারকে সম্পৃক্ত করতে বলা হয়, যাঁদের তাঁরাই খুঁজে দেবেন।
এরপর টেলরকে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার নগদ দেওয়া হয়। এরপর বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা সফর করার কথা ছিল জিম্বাবুয়ের। অবশ্য ১৫ হাজার মার্কিন ডলার নেওয়ার কথা উল্লেখ করলেও স্পট ফিক্সিংয়ের ব্যাপারে শুরুতে আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী বিভাগকে কিছু বলেননি টেলর। সে টাকা তাঁর ভ্রমণ খরচ বাবদ দেওয়া হয়েছে বলে ধরে নিয়েছিলেন বলে দাবি করেন তিনি।
কিন্তু পরে আইসিসির কাছে বলা গল্পটা বদলান টেলর। ১৫ হাজার মার্কিন ডলার তাঁর ভ্রমণ বাবদ দেওয়া হবে বিশ্বাস করে ভারতে গেলেও শেষে স্পট ফিক্সিংয়ের আলোচনার উল্লেখ করেন। ফিক্সিংয়ের ইচ্ছা না থাকলেও শেষ পর্যন্ত প্রস্তাব গ্রহণ করে সে টাকা নেন তিনি। টেলরের দাবি, মিস্টার এসের সঙ্গে কাজ না করলে তাঁকে ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেল করার হুমকি দেওয়া হয়। সে হুমকিতেই টাকা গ্রহণ করেন বলে দাবি করেন টেলর।
২০২০ সালে বাংলাদেশ সফরে আবার টেলরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সে ভারতীয় ব্যবসায়ী। এর আগে স্পট ফিক্সিং করেননি বলে সেবার করতে হবে বলে জানানো হয়। টেলর ফিক্সিং করতে অস্বীকৃতি জানালে আবারও হুমকি দেওয়া হয়। এরপর এসে আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী বিভাগকে (এসিইউ) জানান টেলর। তবে শুরুতে বিস্তারিত বলেননি, দুর্নীতির উল্লেখও করেননি। এরপর বারণ করা সত্ত্বেও মেসেজ মুছে ফেলেন টেলর, পরিবারকে নিয়ে আশঙ্কায় এমন করেছেন বলে দাবি করেন। আইসিসি জানিয়েছে, এখনো টেলরের কাছে ওই টাকা আছে। টেলরের মতে, তাঁর এক বন্ধু সেটি নিরাপদে রেখেছেন।
এর আগে ২৪ জানুয়ারি টুইটারে টেলর নিজেই জানিয়েছিলেন, স্পট ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব গোপন করায় একাধিক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছেন তিনি। টুইটারে চার পৃষ্ঠার দেওয়া এক বার্তায় ঘটনার বিবরণ দিয়ে টেলর জানান, ‘প্রায় দুই বছর ধরে এই বোঝা বয়ে নিয়ে চলেছি আমি। আমাকে অন্ধকার এক জগতে নিয়ে গেছে এটি, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।’
টেলরের মতে, ‘মনে হচ্ছিল, ইচ্ছাকৃতভাবে এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে নিজেকে ফেলেছি, যেটি আমার জীবন চিরতরে বদলে দেবে।’
২৫ জানুয়ারি থেকে একটি পুনর্বাসনকেন্দ্রেও যোগ দিচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন টেলর।