নতুন মেসিদের নতুন মাসিয়া
কার্লেস রেজাস ছিলেন পাকা জহুরি। রত্ন চিনতে একদমই ভুল করেননি। প্রথমে দেখেই বুঝেছিলেন, ছোট্ট এই ছেলেটিই একদিন বিশাল তারকা হবে। সঙ্গে কাগজ ছিল না। কিন্তু সই করানোর জন্য তরও সইছিল না। ফলে সঙ্গে থাকা ন্যাপকিন পেপারটাকেই বানানো হলো চুক্তিপত্র। আর এভাবেই ‘লা মাসিয়া’য় পা রাখলেন লিওনেল মেসি। এর পর? বাকিটা ইতিহাস!২০০০ সালের অক্টোবরে বার্সার বিখ্যাত খামারবাড়ি মাসিয়ায় এসেছিলেন মেসি। এখানে তিন বছর কাটিয়ে রপ্ত করেছেন বার্সার ফুটবল-বিদ্যা। মেসির পাশাপাশি লা মাসিয়া জন্ম দিয়েছে আজকের বড় তারকাদের অনেককেই। বার্সার বর্তমান কোচ পেপ গার্দিওলা নিজেও লা মাসিয়ার ছাত্র। এই দলের জাভি, ইনিয়েস্তা, ফ্যাব্রিগাস, পিকে, পুয়োল, পেদ্রোও। বার্সেলোনার মূল দলে খেলেন এমন ১১ জন ফুটবলার উঠে এসেছেন এই যুব প্রকল্প থেকে। পৃথিবীর শীর্ষ লিগগুলোর আর কোনো দলের এই কৃতিত্ব নেই। অন্যদিকে রিয়াল মাদ্রিদের যুব একাডেমির বর্তমান প্রথম একাদশে একমাত্র খেলোয়াড় ইকার ক্যাসিয়াস। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে আছেন ছয়জন।বার্সেলোনা আর স্পেনের বর্তমান এই সাফল্য-যাত্রার অবদান তাই অনেকেই দেন লা মাসিয়াকে। এই লা মাসিয়া পরশু থেকে চলে গেল নতুন ঠিকানায়। পুরোনো খামারবাড়িতে আর চলছিল না। এবার তাই দেড় কোটি ডলার খরচ করে বানানো হলো নতুন ভবন। বার্সার বিভিন্ন দলে খেলা ৮০ জন কিশোরের ঠাঁই হবে এখানে। যাদের কেউ কেউ হয়তো নতুন মেসি হয়ে উঠবে। বৃহস্পতিবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসেছিলেন মেসিও।নতুন ঠিকানা মানে নতুন উৎসব। কিন্তু পুরোনো ঠিকানার সঙ্গে মেসিদের অনেক স্মৃতি আর আবেগ জড়িয়ে আছে। সেই স্মৃতি রোমন্থনই চলছে এখন। লা মাসিয়ায় মেসিদের কোচ ছিলেন অ্যালেক্স গার্সিয়া। শৈশবে মেসি-ফ্যাব্রিগাসরা কেমন ছিলেন, কতটা দুষ্টুমি করতেন, সেসব শোনালেন তিনি, ‘ওরা ছিল খুবই শান্ত, শিখতে প্রচণ্ড আগ্রহী। তবে মাঠে বেশ পরিণত ছিল। ওরা এতটাই প্রতিদ্বন্দ্বী মানসিকতার ছিল, কখনো হারলে মেজাজ চরম খারাপ করে গোসল করতে যেত। ওরা সেই সময়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলোই ধরে রেখেছে। এখন যে ওরা বিশ্বের সেরা ১০ ফুটবলারের মধ্যে আছে।’আর লা মাসিয়া নিয়ে নিজের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে টানা দুবারের ফিফা বর্ষসেরা মেসি বলেছেন, ‘প্রতিদিন সেখানেই খেতাম, অনেক সময় কাটাতাম। তাই আমার অসংখ্য স্মৃতি আছে। মাসিয়াই আমাকে বার্সার খেলার ধরনে মানিয়ে নিতে সাহায্য করেছে। নতুন ভবন দেখে আমি মুগ্ধ।’তবে নতুন মাসিয়া কি পারবে নতুন মেসি উপহার দিতে? যুব একাডেমির বর্তমান প্রধান কার্লেস ফল্গুয়েরা যতটা না আশাবাদী, তার চেয়েও বেশি বাস্তববাদী, ‘অনেক কঠিন হবে। কারণ, মেসির মতো খেলোয়াড় শতাব্দীতে একজনই জন্মায়।’ রয়টার্স।