রান তুলতে রীতিমতো গদলঘর্ম অবস্থা হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের, তবে অধিনায়ক ক্রেগ ব্রাফেট ও জন ক্যাম্পবেলের উদ্বোধনী জুটি অবিচ্ছিন্ন রেখেই অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম দিন চা-বিরতিতে গেছে স্বাগতিকেরা। ১৫ ওভারে তারা তুলেছেন ১৫ রান। ব্রাফেট ৯ রানে অপরাজিত ৫৫ বল খেলে। ক্যাম্পবেল ৩৬ বল খেললেও করেছেন মাত্র ১ রান। বাংলাদেশকে ১০৩ রানে আটকে দেওয়ার পর প্রথম ইনিংসে তারা এখন পিছিয়ে ৮৮ রানে।
অবশ্য চিত্রটা ভিন্ন হতে পারত সহজেই। শূন্য রানেই ফিরতে পারতেন ব্রাফেট। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। মোস্তাফিজুর রহমানের বলে ফাঁদে পা-ও দিয়েছিলেন ব্রাফেট, ফ্লিক করতে গিয়ে লেগ স্লিপে ক্যাচ তুলেছিলেন। তবে মোটামুটি সহজ ক্যাচটি নিতে পারেননি সদ্য সাবেক হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক।
বাংলাদেশ অবশ্য আঁটসাঁট বোলিং করেছে এরপরও। পিচের সুবিধা আদায় করলেও উইকেটের দেখাই শুধু পায়নি তারা। হয়তো ক্যাচ উঠেছে, তবে সেটি পড়েছে ফিল্ডারদের সামনেই।
ষষ্ঠ ওভারে গিয়ে প্রথম রানের দেখা পায় উইন্ডিজ। ইনিংসে প্রথম ১৩ ওভারের মধ্যে ছয়টিই হয় মেডেন। ১২তম ওভারে প্রথম বারের মতো বোলিংয়ে আসেন সাকিব, তবে এরপরই নিজেকে সরিয়ে নেন তিনি। সে প্রান্ত থেকে আনেন মেহেদী হাসান মিরাজকে। তবে ওই ওভারেই ব্যাট থেকে প্রথম বাউন্ডারির দেখা মেলে ইনিংসে, স্লগ সুইপে সেটি মারেন ব্রাফেট। তবে এরপর ইবাদত এসে করেন আরেকটি মেডেন।
এর আগে দেড় সেশন ও ৩২.৫ ওভার ব্যাটিং করেই প্রথম ইনিংসে থামে বাংলাদেশ। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ৫১ রান করলেও ইনিংসে দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেন আর মাত্র দুজন—তামিম ইকবাল (২৯) ও লিটন দাস (১২)।
মূলত তিন দফার ধসেই শেষ হয় বাংলাদেশ। মোটামুটি কঠিন উইকেটে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম দফা ১৬ রানের মধ্যে বাংলাদেশ হারায় মাহমুদুল হাসান, নাজমুল হোসেন ও মুমিনুল হককে। বিপর্যয়ের শুরুটা ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই। রোচের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বলে খোঁচা মেরে স্লিপে ক্যাচ দেন মাহমুদুল, পরের ওভারে এসে রোচ ফেরান নাজমুলকে। ফুললেংথের বলটা নাজমুলের ব্যাট-প্যাডের ফাঁক দিয়ে ঢুকে ভাঙে স্টাম্প। এরপর জেইডেন সিলসের বলে শরীর থেকে দূরে শক্ত হাতে ডিফেন্ড করতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন মুমিনুল, এ নিয়ে টানা ৯ ইনিংস দুই অঙ্কের আগেই ফিরলেন তিনি, সর্বশেষ তিন ইনিংসের দুটিতেই আউট হলেন কোনো রান না করেই। বাংলাদেশের দুই থেকে চার নম্বর ব্যাটসম্যানের কেউই রান করতে পারেননি—নিজেদের ইতিহাসে এমন ঘটনাও ঘটল এই প্রথম বার।
১৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা বাংলাদেশকে একটু স্থির করার চেষ্টা করেন তামিম ও লিটন দাস। মুশফিকুর রহিমের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ৫ হাজার রানও পূর্ণ করেন তামিম। তবে প্রথম ঘণ্টায় পানি-পানের বিরতির পরপরই আবার বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ, এবার ৪ রানের ব্যবধানে পড়ে ৩ উইকেট। আলজারি জোসেফের লেগ স্টাম্পের বাইরের নিরীহ বলে ব্যাট চালিয়ে উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ দেন তামিম। প্রথম ওভারে বোলিং করতে এসেই কাইল মায়ার্স ফেরান লিটন ও নুরুলকে। অফ স্টাম্পের বাইরে লাইন ধরে রাখা বলে কট-বিহাইন্ড লিটন, বেশ বাইরে থেকে ভেতরের দিকে ঢুকতে থাকা বলে শট না খেলে এলবিডব্লু হন নুরুল হাসান।
এরপর বাংলাদেশকে একটু উদ্ধারের চেষ্টা করেন সাকিব ও মিরাজ। সাকিব প্রতি-আক্রমণের চেষ্টা করেছেন, মধ্যাহ্নবিরতিতে মিরাজের সঙ্গে তাঁর জুটি অবিচ্ছিন্নই থাকে। তবে দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ওভারে জেইডেন সিলসের লেগ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে উইকেটের পেছনে জশুয়া ডা সিলভার হাতে ধরা পড়েন মেহেদী হাসান মিরাজ, ২২ বলে ২ রান করে।
সাকিবকে সঙ্গ দেওয়ার মতো শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যানই ছিলেন মিরাজ, ফলে কাজটা এরপর আরও কঠিন হয়ে পড়ে তাঁর জন্য। মিরাজকে আউট করার পরের ওভারে আবার আঘাত করেন সিলস। এবার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ইনসাইড-এজে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মোস্তাফিজুর রহমান।
এর মধ্যে ক্যারিয়ারের ২৮তম অর্ধশতক পূর্ণ করেন সাকিব, সিলসের বলে চার মেরে, ৬৩ বলে। তবে পরের ওভারে আলজারি জোসেফকে তুলে মারতে গিয়ে লং-অন বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন বাংলাদেশ অধিনায়ক। সে ওভারেই খালেদ আহমেদকে ফিরিয়ে ইনিংস শেষ করেন জোসেফ। এ পেসার ৩৩ রানে ৩ উইকেট নেন, এখন পর্যন্ত যেটি তাঁর ক্যারিয়ারসেরা বোলিং।
বাংলাদেশ ইনিংসে ছয় জন ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন শূন্য রানে। এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে হয়েছিল এমন। ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে পর পর দুই টেস্টে কমপক্ষে ছয় জন ব্যাটসম্যানের কোনো রান না করেই ফিরে যাওয়ার কীর্তি গড়ল বাংলাদেশ।