গোলাপি বিপ্লবে বাঁচবে টেস্ট?
ক্রিকেট নতুন এক অধ্যায় লিখতে যাচ্ছে তার ইতিহাসে। অ্যাডিলেড টেস্টে নতুন লাল চেরি নয়, মিচেল স্টার্ক বা ট্রেন্ট বোল্টরা, হাতে তুলেছেন গোলাপি বল। তবে বলের রং নয়, ম্যাচটি ইতিহাসে জায়গা করে নিচ্ছে প্রথম দিবারাত্রির টেস্ট হিসেবে। প্রথমবারের মতো কৃত্রিম আলোয় ভেসে যাওয়া মাঠে সাদা পোশাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নামবেন খেলোয়াড়েরা।
চার্লস ব্যানারম্যান টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম বলটি খেলার পর ১৩৮ বছর পার হয়ে গেছে। এর মাঝে ক্রিকেট অনেক পরিবর্তনই দেখেছে। টেস্টের সময়সীমাকে বেঁধে পাঁচ দিনে আনা হয়েছে। ব্যাটসম্যানদের মাথায় হেলমেট উঠেছে। ওয়ানডে ক্রিকেট এসেছে, রঙিন পোশাক ও সাদা বলের দেখা মিলেছে। টি-টোয়েন্টি ও চিয়ার লিডারদের দেখাও পেয়েছেন দর্শকেরা! ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করতে নানা সময়ে নানা কিছুর আবির্ভাব হয়েছে, কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটের দুটি বিষয়কে কখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাঝে ফেলা হয়নি। দিনের আলো ফুরোনোর আগেই দিনের খেলা গোটানো এবং লাল বলে ম্যাচ খেলা। কিন্তু আনন্দদায়ী টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ‘যন্ত্রণা’য় টেস্ট ক্রিকেটের অস্তিত্ব নিয়েই টান পড়েছে। ব্যস্ত কর্মজীবনে পাঁচ দিনব্যাপী ক্রিকেট দেখার লোকই এখন খুঁজে পাওয়া ভার। এক অ্যাশেজই শুধু দর্শকের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু ব্যতিক্রমকে কোনোভাবেই উদাহরণ মানা যায় না। টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচানোর লক্ষ্যেই শত বছরের ঐতিহ্যে পরিবর্তন আনছে আইসিসি। মাঠে দর্শক বাড়ানোর ভাবনা থেকে আসে দিবারাত্রির টেস্ট আয়োজনের চিন্তা।
কিন্তু ফ্লাড লাইটের আলোয় টেস্ট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিলেই তো হলো না, তার জন্য ব্যবস্থাও নিতে হবে। সে চিন্তা থেকে আরেক ঐতিহ্যেও পড়ল টান। লাল বলে দিবারাত্রির টেস্ট সম্ভব নয়, তাই শুরু হলো নতুন বলের খোঁজ। সবুজ, হলুদ, কমলার পরে গোলাপি রংয়েই থিতু হলো সবাই। ভাগ্যচক্রেই ঐতিহাসিক এই টেস্টের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ল গোলাপি রং। যার জেরে টেস্টের ডাকনামই হয়ে গেছে ‘গোলাপি টেস্ট’।
গোলাপি বলে ফ্লাডলাইটের আলোয় খেলা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে অনেক দিন ধরেই। ফ্লাডলাইটে সাদা পোশাকে খেলা কেমন হবে, গোলাপি বলের আচরণ কেমন হবে, ৮০ ওভার টিকবে কি না, বল দেখা যাবে কি না—প্রশ্নের পর প্রশ্ন। সব প্রশ্নেরই জবাব মিলবে আজ। তবে এর চেয়েও বড় প্রশ্নের উত্তর মিলবে এই টেস্টের পর। ফ্লাডলাইটের আলো কি অক্সিজেন জোগাবে টেস্টকে?
যে দর্শক টানার জন্য এত আয়োজন তাতে আপাতত সফল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। প্রথম দুই দিনের সকল টিকিট এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। এই টেস্ট নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে আগ্রহের পারদও বেশ চড়া। যদিও অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মতো দেশে টেস্ট ক্রিকেট কখনোই অস্তিত্বের সংকটে পড়েনি। টেস্ট ক্রিকেট তার জনপ্রিয়তা হারিয়েছে উপমহাদেশে, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে। ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে চলমান সিরিজ কিংবা সদ্যসমাপ্ত পাকিস্তান-ইংল্যান্ড সিরিজে স্টেডিয়ামে থাকা দর্শকসংখ্যা ছিল আশঙ্কাজনক পর্যায়ে। টি-টোয়েন্টির যুগে তাই টেস্টের অস্তিত্ব রক্ষার পরীক্ষাটা করে দেখতে হবে উপমহাদেশেও।
অ্যাডিলেডে তাই যাই ঘটুক না কেন, আপাতত নিখাদ দর্শক হিসেবেই উপভোগ করুন। ইতিহাসের সাক্ষী হওয়ার এমন সৌভাগ্য তো আর সবার ভাগ্যে জোটে না। টেস্টের বাঁচা-মরা নিয়ে কঠিন আলোচনাটা ভবিষ্যতের জন্যই তোলা থাক।