গলফের হাতে সবজি চাষ
>সিদ্দিকুর সর্বশেষ খেলেছেন মার্চের প্রথম সপ্তাহে। তারপর থেকেই ঘরবন্দী। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে তবেই খেলতে চান দেশসেরা গলফার।
আজ এই শহর তো কাল ওই শহর। একের পর এক খেলা। এভাবেই দিন কাটত। দম ফেলার ফুরসত ছিল না। বছরে প্রায় ২০টির ওপরে টুর্নামেন্ট তো খেলতে হয়ই। এক কোর্সে খেলা শেষ করে সেখান থেকেই আরেক টুর্নামেন্টে খেলতে বিমানবন্দরে ছুটেছেন, এমন কতই হয়েছে। সদা সেই মহাব্যস্ত মানুষটি এখন ঘরে বন্দী।
গলফার সিদ্দিকুর রহমানের ব্যস্ত জীবন হঠাৎই যেন থেমে গেছে। গলফ কোর্সে ছুটে বেড়ানোর তাড়া নেই। ভোর ছয়টায় ঘুম থেকে না উঠলেও চলে। ভিসা, টিকিট, ভ্রমণ—এগুলো সবই এখন পেছনের পাতায়। সিদ্দিকুর বলেন, 'আগে ভীষণ ব্যস্ত থাকতাম। সেটা এখন মিস করি। দেশের বাইরে যাওয়া, খেলা, হোটেলে ওঠা, চেক ইন, চেক আউট কিছুই নেই। জীবন থেকে ব্যস্ততা শব্দটা হঠাৎ এভাবে ছুটি নেবে ভাবিনি।'
'বাংলাদেশের টাইগার উউসের' প্রায় ২০ বছরের খেলোয়াড়ি জীবনে এমন সময় আগে আসেনি। এ বছর খেলেছেন মাত্র দুটি টুর্নামেন্ট। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে নিউজিল্যান্ডে একটি টুর্নামেন্ট খেলে 'কাট' পাননি। মার্চের শুরুতে মালয়েশিয়ায় ৩১তম হয়েছেন। কোভিড-১৯–এর হানায় এরপর থেকেই ঘরবন্দী। এই সময়ে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গলফ স্থগিত হয়ে গেছে। ভারত, থাইল্যান্ডে (২টি) এবং মালয়েশিয়ায় বাতিল হয়েছে ৫-৬টি টুর্নামেন্ট।
সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও জাপানে অনুষ্ঠেয় তিনটি টুর্নামেন্ট এখনো আন্তর্জাতিক সূচিতে আছে। তবে সমস্যা হয়েছে, জাপান ও কোরিয়ায় আপাতত বাংলাদেশিদের যাওয়া-আসা বন্ধ। পরিস্থিতি না পাল্টালে সেপ্টেম্বরে জাপান-কোরিয়ায় খেলা হলেও সিদ্দিকুরের পক্ষে অংশ নেওয়া তাই সম্ভব নয় বলেই মনে হচ্ছে। তাইওয়ানে খেলতে যাওয়ারও ঝক্কি আছে। মালয়েশিয়া গিয়ে ভিসা নিতে হবে এবং কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে ১৪ দিন। কাজেই সেপ্টেম্বরে খেলা শুরু হলেও দুটি পেশাদার গলফ ট্রফি জেতা বাংলাদেশের সেরা গলফারকে সম্ভবত আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে।
নভেম্বরে প্যানাসনিক ওপেন, হিরো ইন্ডিয়া এবং নতুন একটি টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা। পরিস্থিতি ভালো হলে হয়তো এগুলোয় খেলা হবে সিদ্দিকুরের। তবে এখন আশাবাদী হতেও ভয় পাচ্ছেন তিনি, 'পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই টুর্নামেন্টগুলোও সম্ভবত হবে না। আর আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেলব না। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার অর্থ পুরস্কার থাকলেও নয়। আগে আমার স্বাস্থ্য ও নিরাপাত্তা। তারপর খেলা।'
পিজিএ ট্যুরের খেলা শুরু হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। এশিয়ার কোনো কোনো দেশেও গলফ কোর্স খুলেছে, তবে খেলা শুরু হয়নি। গত ২০ জুন মালয়েশিয়ার ক্রীড়া কর্তৃপক্ষ দেশটিতে দুজনের গ্রুপ করে খেলার অনুমতি দিয়েছে। কোর্সে কোনো অতিথি আনা যাবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুরে প্রচুর গলফার আছে। এই দেশগুলোতে গলফ কোর্স খুললেও কেউই সেভাবে অনুশীলন করতে পারছে না।
ঢাকায় কুর্মিটোলা গলফ কোর্সও সহসা খোলার সম্ভাবনা কম। সিদ্দিকুরও তাড়াহুড়ো চান না, 'এখন আসলে খেলার সময় নয়। আমাদের দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। কাজেই সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে।' ৩৫ বছর বয়সী সিদ্দিকুর বেশি চিন্তিত আগামীর গলফ নিয়ে। কী হবে সামনে, সেটি যে আজানা!
ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় নিজের বাসা থেকে খুব প্রয়োজন না হলে বের হন না। বাসায় ফিটনেস অনুশীলন করতে ট্রেডমিল, ডাম্বল কিনেছেন। তাঁর সংগ্রহে কিছু ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম আছে। অনুশীলনে টেকনিক্যাল ভুল করলে যন্ত্র সব বলে দিচ্ছে। করোনার এই সময়ে মানসিক, শারীরিক ও টেককিন্যাল—এই তিনটি দিক নিয়েই কাজ করছেন বলে জানালেন সিদ্দিকুর।
বাসায় এক টুকরা জায়গা আছে বাগান করার। সেখানে শাক, সবজি লাগিয়েছেন লকডাউনের শুরুতে। সেই খবর দিয়ে মজা করে বলছিলেন, 'বাগানের কুমড়াগাছে ফুল এসেছে, লাউয়ের শাক তো দুই মাস ধরে খাচ্ছি (হাসি)। দুই–তিন দিন পরপরই আমরা এগুলো খাই। বেশি লাগে না, বাসায় তো শুধু আমি আর আমার স্ত্রী।' স্ত্রী সামাউন আঞ্জুমও গলফ কোচ। খেলাবিহীন জীবনে স্বামীকে আরও বেশি করে সহায়তা করতে পারছেন তিনি।
কয়েক মাস আগেও যিনি ছিলেন মহাব্যস্ত এক গলফার, করোনাকাল সেই সিদ্দিকুরের জীবনটাও কেমন বদলে দিয়েছে।