খেলোয়াড়ের জন্মসনদ জালিয়াতির অভিযোগ, কালই ইকুয়েডরের বিশ্বকাপ–ভাগ্য নির্ধারণ
দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল থেকে দল বাছাই চূড়ান্ত হয়েছে আগেই। চূড়ান্ত হয়েছে কাতার বিশ্বকাপের সূচিও। ২১ নভেম্বর কাতারের মুখোমুখি হয়ে বিশ্বকাপ শুরু করবে এই মহাদেশ থেকে চতুর্থ দল হিসেবে সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাওয়া ইকুয়েডর।
কিন্তু গত মাসেই ফিফার কাছে চিলি ফুটবল ফেডারেশন অভিযোগ করে, বাছাইপর্বে নিয়ম ভেঙে ‘অযোগ্য’ খেলোয়াড় মাঠে নামিয়েছে ইকুয়েডর। ফিফা এ অভিযোগের তদন্ত করছে। প্রশ্ন উঠেছে, ইকুয়েডর শেষ পর্যন্ত কাতার বিশ্বকাপে খেলতে পারবে তো?
দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের বাছাইপর্ব থেকে পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষ চার দল সরাসরি জায়গা করে নিয়েছে কাতার বিশ্বকাপে। পঞ্চম দল পেরুকে প্লে–অফের পরীক্ষা দিতে হবে। ছয়ে কলম্বিয়া ও সাতে চিলি এবার বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। ইকুয়েডরের রাইটব্যাক বায়রন কাস্তিলোকে নিয়ে অভিযোগটা তুলেছে চিলি।
ফিফার তদন্তে যদি প্রমাণ হয়, কাস্তিলো তাঁর জন্মসনদ নিয়ে জালিয়াতি করেছেন এবং তাঁর জন্ম কলম্বিয়ায়, তাহলে কাতার বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েও নিষিদ্ধ হতে পারে ইকুয়েডর। কাল এ নিয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা ফিফার।
চিলির এই অভিযোগে তাদের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন এদুয়ার্দো কারলেজ্জো। ব্রাজিলিয়ান এই আইনজীবী নিজে তদন্ত করে কিছু তথ্য বের করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন, কাস্তিলোর জন্মসনদ ভুয়া। ২৩ বছর বয়সী এ ডিফেন্ডার ইকুয়েডরে জন্ম নেননি। উইকিপিডিয়াসহ অন্যান্য জায়গায় তাঁর জন্মস্থান দেখানো হয়েছে ইকুয়েডরের প্লেয়াসে। ১০ নভেম্বর ১৯৯৮ সালে তাঁর জন্ম।
কারলেজ্জোর দাবি এই তথ্য ভুয়া। ইকুয়েডরের জন্মসনদের নথিপত্রে কারলেজ্জোর আঙুলের ছাপও নেই। চিলির দাবি, ইকুয়েডরের সিভিল রেজিস্ট্রি অফিস এবং ফুটবল ফেডারেশন মিলে এই জালিয়াতি করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে কারলেজ্জো দাবি করেন কাস্তিলোর জন্ম কলম্বিয়ার তুমাকোয়, ‘তাঁর মা–বাবার বিয়ে তুমাকোয়। বায়রনের জন্মও তুমাকোয়। ১৯৯৮ সালে তাঁর জন্ম, কিন্তু নথিভুক্ত করা হয় ২০১২ সালে। আমরা এখানে এসেছি, কারণ নিজেদের যুক্তি ও প্রমাণ ন্যায্য এবং পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে চাই।’
কারলেজ্জোর এই মন্তব্য প্রকাশ করেছেন মেক্সিকান সংবাদমাধ্যম ‘টিভিঅ্যাজটেকা।’
এই অভিযোগ প্রমাণ হলে, ইকুয়েডরের হয়ে কাস্তিলো বাছাইপর্বে যে আট ম্যাচ খেলেছেন, তার সবগুলোতেই পয়েন্ট কাটতে পারে ফিফা। অর্থাৎ, কাস্তিলো যেসব ম্যাচে ইকুয়েডরের হয়ে খেলেছেন, সেসব ম্যাচে পূর্ণ পয়েন্ট পাবে প্রতিপক্ষ দলগুলো।
সে ক্ষেত্রে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে নেমে যাবে ইকুয়েডর এবং চারে উঠে আসতে পারে চিলি—অর্থাৎ, কাতার বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার টিকিট পেয়ে যেতে পারে দেশটি। পাঁচে থাকা পেরুর অবস্থানের নড়চড় হবে না। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাদের প্লে–অফ পরীক্ষা দিতে হবে।
বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বুঝতে আরেকটু ব্যাখ্যা করা যায়। ১৯ পয়েন্ট নিয়ে সাতে চিলি, ২৩ পয়েন্ট নিয়ে ছয়ে কলম্বিয়া। তাহলে কলম্বিয়াকে টপকে চিলি চারে উঠবে কীভাবে? বাছাইপর্বে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে ইকুয়েডরের হয়ে খেলেননি কাস্তিলো। তাই কলম্বিয়া পয়েন্ট পাবে না। কিন্তু চিলির বিপক্ষে তিনি দুই ম্যাচেই খেলেছেন।
অর্থাৎ, এ দুই ম্যাচ থেকে ৬ পয়েন্ট পেলে কলম্বিয়া ও পেরুকে টপকে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে চারে উঠবে চিলি। ২৪ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে থাকা পেরুর বিপক্ষে কাস্তিলোকে খেলায়নি ইকুয়েডর।
বাছাইপর্ব টেবিলে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইকুয়েডর। কাস্তিলো যে আট ম্যাচে খেলেছেন, সেখান থেকে ১৫ পয়েন্ট তুলে নিয়েছে ইকুয়েডর। এর মধ্যে সাত ম্যাচেই ছিলেন একাদশে। খেলেছেন মোট ৬১৪ মিনিট। একটি গোলও বানিয়ে দেন। এই ১৫ পয়েন্ট কাটা পড়লে ১৮ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে তলানির দিকে নেমে আসবে ইকুয়েডর। ১৮ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে এখন টেবিলে সবার শেষে রয়েছে ভেনেজুয়েলা।
সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, চিলির অভিযোগ প্রমাণ হলে এমনও হতে পারে ইকুয়েডরকে এবারের বাছাইপর্ব থেকেই নিষিদ্ধ করতে পারে ফিফা। সে ক্ষেত্রে তাদের ১৮ ম্যাচের ফল কোনো কাজে আসবে না। তখন কলম্বিয়ারও সুবিধা হবে। ফিফা যদি টেবিলে ইকুয়েডরের পরের দলকে তুলে আনার সিদ্ধান্ত নেয় তখন পেরু চারে উঠে যাবে এবং পাঁচে প্লে–অফ খেলার জন্য উঠে আসবে কলম্বিয়া। চিলির তাতে কোনো লাভ হবে না। শীর্ষ পাঁচের বাইরেই থাকতে হবে।
অযোগ্য খেলোয়াড় খেলানো কিংবা অন্যান্য নিয়ম ভাঙার কারণে এর আগে বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ার নজির রয়েছে। চোট নিয়ে জালিয়াতি করায় ১৯৯৪ বিশ্বকাপ থেকে চিলিকে নিষিদ্ধ করেছিল ফিফা। ১৯৯০ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে ব্রাজিলের বিপক্ষে ১–০ গোলে পিছিয়ে ছিল চিলি। ম্যাচটা হারলে বাছাইপর্ব থেকেই বাদ পড়ত তারা। ম্যাচের ৬৭ মিনিটে চিলি গোলকিপার রবার্তো রোহাস মাঠেই পড়ে যান। বলা হয়, দর্শকদের ছুড়ে মারা আগুনের কুণ্ডলীতে তিনি আহত হয়েছেন। চিলি ম্যাচটি আর খেলেনি।
পরে ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, দর্শকদের ছুড়ে মারা কোনোকিছুই তাঁর শরীরে লাগেনি। লুকিয়ে রাখা ব্লেডে হাত কেটে চোটের অভিনয় করেন রোহাস। এতে চিলিকে ১৯৯৪ বিশ্বকাপ থেকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি রোহাসকেও আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করে ফিফা।
কনক্যাকাফ অনূর্ধ্ব–১০ চ্যাম্পিয়নশিপে বেশি বয়সী চার ফুটবলার খেলানোর অপরাধে ১৯৯০ বিশ্বকাপে নিষিদ্ধ হয়েছিল মেক্সিকো। ২০১১ সালে এশিয়ার বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিল সিরিয়া। ফিফার আইন মেনে জাতীয় দল না পাল্টানো জর্জ মৌরাদকে খেলানোয় এই শাস্তি পেয়েছিল সিরিয়া। মৌরাদ সুইডেনের হয়ে বয়সভিত্তিক দলে আগে খেলেছিলেন।