কে জিতবে ইউরো? প্রশ্নটা আসলেই প্রায় ১০০ কোটি টাকার। ইউরোর চ্যাম্পিয়ন দল ১ কোটি ইউরো পাবে, বাংলাদেশি মুদ্রায় সেটা তো প্রায় ১০০ কোটি টাকাই। সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুরু হবে ১১ জুন, শেষ ১১ জুলাই। ইউরোতে অংশ নিতে যাওয়া ২৪টি দলের খুঁটিনাটি জেনে নিলে এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা সহজ হতে পারে আপনার জন্য।
২০১২ ইউরো ও ২০১৪ বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ড, ২০১৬ ইউরোতে দ্বিতীয় রাউন্ড, ২০১৮ বিশ্বকাপে ফাইনাল—ক্রোয়েশিয়ার এ প্রজন্মের দলটার উন্নতি লক্ষণীয়। একসময় যারা ‘আন্ডারডগ’ ছিল, তারাই এখন যেকোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ফেবারিটদের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিশ্বকাপ না পাওয়ার আক্ষেপ কি ক্রোয়েশিয়া ঘোচাতে পারবে ইউরোতে?
দল: ক্রোয়েশিয়া
ফিফা র্যাঙ্কিং:১৪
যাঁরা আছেন দলে
গোলরক্ষক
দমিনিক লিভাকোভিচ (দিনামো জাগরেব), লভরে কালিনিচ (হাদজুক স্প্লিত), সিমোন স্লুগা (লুটন টাউন)
সেন্টারব্যাক
দেয়ান লভরেন (জেনিত সেন্ট পিটার্সবার্গ), দমাগোয় ভিদা (বেসিকতাস), দুজে কালেতা-কার (অলিম্পিক মার্শেই), ইয়োসকো গভিয়ারদোল (আরবি লাইপজিগ), মাইল স্কোরিচ (ওসিয়েক)
রাইটব্যাক/রাইট উইংব্যাক
সিমে ভ্রসালিয়োকো (আতলেতিকো মাদ্রিদ), ইয়োসিপ জুরানোভিচ (লেগিয়া ওয়ারশ)
লেফটব্যাক/লেফট উইংব্যাক
বরনা বারিসিচ (রেঞ্জার্স), দমাগোয় ব্রাদারিচ (লিল)
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার/ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার
লুকা মদরিচ (রিয়াল মাদ্রিদ), মাতেও কোভাচিচ (চেলসি), মার্সেলো ব্রোজোভিচ (ইন্টার মিলান), মিলান বাদেল (জেনোয়া)
অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার
নিকোলা ভ্লাসিচ (সিএসকেএ মস্কো), মারিও পাসালিচ (আতালান্তা), লুকা ইভানুসেচ (দিনামো জাগরেব)
উইঙ্গার/ওয়াইড মিডফিল্ডার
ইভান পেরিসিচ (ইন্টার মিলান), ইয়োসিপ ব্রেকালো (ভলফসবুর্গ), মিসলাভ অরসিচ (দিনামো জাগরেব), আন্তে রেবিচ (এসি মিলান)
স্ট্রাইকার
আন্দ্রে ক্রামারিচ (হফেনহেইম), ব্রুনো পেতকোভিচ (দিনামো জাগরেব), আনতে বুদিমির (ওসাসুনা)
কোচ
জ্লাতকো দালিচ
অধিনায়ক
লুকা মদরিচ
ইউরোতে সেরা সাফল্য
কোয়ার্টার ফাইনাল (১৯৯৬, ২০০৮)
গ্রুপে প্রতিপক্ষ
ইংল্যান্ড (১৩ জুন)
চেক প্রজাতন্ত্র (১৮ জুন)
স্কটল্যান্ড (২৩ জুন)
শক্তি
বিশ্বকাপের পর ইভান রাকিতিচ অবসর নিয়েছেন। তারপরও ক্রোয়েশিয়ার বড় শক্তির জায়গা মিডফিল্ড। ৩৫ বছর বয়সী লুকা মদরিচ এখনো রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাবের প্রাণভোমরা। তাঁকে ঘিরেই ক্রোয়েশিয়ার কৌশল সাজানো হবে। সঙ্গে ইন্টার মিলানের হয়ে এ মৌসুমে জেতা মার্সেলো ব্রোজোভিচ ও চেলসির হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা মাতেও কোভাচিচ তো আছেনই। যদিও সুযোগ পেলেই সরাসরি বক্সে ঢুকে গিয়ে শট নেওয়া ও আক্রমণাত্মক মানসিকতার কারণে কোভাচিচের চেয়ে সিএসকেএ মস্কোর নিকোলা ভ্লাসিচকে বেশি কার্যকর মনে হয় অনেক সময়। এ কারণে ক্রোয়েশিয়া ভ্লাসিচকে খেলাতে পারে রাকিতিচের জায়গায়।
আতালান্তার হয়ে কয়েক মৌসুম ধরে ফর্মে থাকা মারিও পাসালিচ, ইউরোপা লিগে হ্যাটট্রিক করে টটেনহামকে বিদায় করে দেওয়া মিসলাভ অরসিচকেও চাইলে সময়-সুযোগমতো ব্যবহার করতে পারেন কোচ জ্লাতকো দালিচ।
দুর্বলতা
গত বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার সাফল্যের পেছনে গোলরক্ষক দানিয়েল সুবাসিচ, মিডফিল্ডার ইভান রাকিতিচ ও স্ট্রাইকার মারিও মানজুকিচের ভূমিকা ছিল অনেক। এবার এই তিনজনের না থাকার অভাব ক্রোয়েশিয়া অনুভব করবে কিছুটা। মানজুকিচের জায়গায় দিনামো জাগরেবের ব্রুনো পেতকোভিচের ওপর আস্থা কোচ দালিচের। লম্বা, শক্তিশালী, প্রথাগত স্ট্রাইকারের মতো ডি-বক্সে ওত পেতে থাকা পেতকোভিচের ফর্মের ওপর ক্রোয়েশিয়ার ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করছে।
রক্ষণভাগটাও দালিচের চিন্তার জায়গা। নেশনস লিগের ছয় ম্যাচে ১৬ গোল হজম করেছে ক্রোয়েশিয়া। সেট পিসে এখনো বেশ দুর্বল। রাইটব্যাক আতলেতিকোর ভ্রসালিয়োকো পুরো ফিট হতে পারেন কি না, সেটা নিয়েও শঙ্কা আছে। ক্রোয়েশিয়ার আরেকটা চিন্তার জায়গা ডান উইং। দলে যত উইঙ্গার আছেন, সবাই বাঁ উইংয়ে খেলতে পছন্দ করেন। গত বিশ্বকাপে ডান উইংয়ে খেলা এসি মিলানের আন্তে রেবিচের ওপর তাই এবারও আস্থা রাখতে হবে দালিচকে। তবে চোট সমস্যা আছে রেবিচেরও। ঠিক সময়ে ফিট না হলে দালিচের সমস্যা আরেকটা বাড়বে।
সম্ভাব্য একাদশ ও খেলার কৌশল (৪-২-৩-১/৪-৩-১-২)
লিভাকোভিচ; ভ্রসালিয়োকো, লভরেন, কালেতা-কার, বারিসিচ; মদরিচ, ব্রোজোভিচ; রেবিচ, ভ্লাসিচ, পেরিসিচ; পেতকোভিচ
ক্রোয়েশিয়ার মূল ছক ৪-২-৩-১। বেশি রক্ষণাত্মক খেললে যা ৪-১-৪-১ এ রূপান্তরিত হবে। গোলকিপার লিভাকোভিচের সামনে যথারীতি সাবেক লিভারপুল সেন্টারব্যাক দেয়ান লভরেন থাকছেন। লভরেনের সঙ্গী হিসেবে মার্শেইর প্রতিভাবান ডিফেন্ডার দুজে কালেতা-কারের খেলার সম্ভাবনা বেশি। ফুলব্যাক হিসেবে ডান দিকে ভ্রসালিয়োকো, বাঁ দিকে বারিসিচ। সদ্যই রেঞ্জার্সের হয়ে লিগ জেতা বারিসিচকে নিয়ে ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর আগ্রহ বাড়ছে।
বিশ্বকাপের সময় মদরিচকে একটু সামনে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় খেলানো হলেও এবার যথারীতি দুই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারের একজন হিসেবে খেলতে পারেন ক্রোয়েশিয়ান অধিনায়ক, ব্রোজোভিচের সঙ্গে জুটি বেঁধে। ওদিকে তিন আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে ডানে রেবিচ, বাঁয়ে পেরিসিচ ও মাঝে ভ্লাসিচ। একক স্ট্রাইকার হিসেবে পেতকোভিচের খেলার সম্ভাবনাই বেশি। তবে পেতকোভিচ প্রত্যাশিত পারফর্ম না করতে পারলে ছক বদলে ৪-৩-১-২ এ যেতে পারে ক্রোয়েশিয়া। সে ক্ষেত্রে পেরিসিচকে উইঙ্গার নয়, বরং দুই স্ট্রাইকারের একজন হিসেবে খেলতে হতে পারে। মাঝমাঠে তখন মদরিচ, ব্রোজোভিচের পাশাপাশি কোভাচিচ, বাদেলও সুযোগ পেয়ে যাবেন। ছক না বদলে পেতকোভিচকে একাদশ থেকে সরাতে চাইতে ওসাসুনার স্ট্রাইকার আনতে বুদিমিরকে খেলাতে পারেন দালিচ।
কৌশলগতভাবে আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। ক্রোয়েশিয়াকে দল হিসেবে নেশনস লিগে যেমন ছিল, তার চেয়ে আরও অনেক উন্নতি করতে হবে।
প্রত্যাশা ও বাস্তবতা
তিন বছর আগে বিশ্বকাপে যারা ফাইনাল খেলেছে, এবার ইউরোতে তাদের লক্ষ্য শিরোপাই হওয়ার কথা। তবে প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তবতা তখনই মিলবে, রাকিতিচ, মানজুকিচ ও সুবাসিচের মতো খেলোয়াড়দের অভাব যদি ক্রোয়েশিয়া ঠিকঠাক পূরণ করতে পারে। গ্রুপ পেরিয়ে নকআউট পর্বে যাওয়াটা অবশ্য সমস্যা হওয়ার কথা ক্রোয়েশিয়ার জন্য।