কোহলির আগেই শতকের খরা কাটালেন তামিম
খরা!
শব্দটা বিরাট কোহলির সঙ্গে একেবারেই বেমানান। কোহলি বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। তাঁর সঙ্গে রানের বিষয়ে যেকোনো ‘খরা’র থাকবে অহি–নকুল সম্পর্ক, খরা উত্তরে তো কোহলি দক্ষিণে, তা না, জোর করেই কি একসূত্রে গাঁথা হচ্ছে!
না, জোর করে তো নয়ই, বরং পরিসংখ্যান বলছে, সেই যে ২০১৯ সালের নভেম্বরে কলকাতায় বাংলাদেশের বিপক্ষে শতক পেয়েছিলেন কোহলি, তার পর থেকেই তিন সংস্করণেই একটি শতকের জন্য মাথা কুটে মরছেন। কোহলির সঙ্গে তামিম ইকবালের তুলনা চলে না। সেটি করার চেষ্টাও করা হচ্ছে না। তবে একটি জায়গায় অন্যরকম একটা তুলনা তো হতেই পারে।
কোহলি কিছু দিন আগেও ছিলেন ভারতের অবিসংবাদিত সেরা ব্যাটসম্যান। তাঁর সাম্প্রতিক রানখরা ও লোকেশ রাহুল–রোহিত শর্মাদের আরও উঠে আসায় ‘অবিসংবাদিত’ শব্দটা হয়তো ক্ষণস্থায়ীকালের জন্য কাটা পড়েছে। কোহলির সঙ্গে এখন আরও কিছু নাম উঠে আসে।
একইভাবে তামিম ইকবালও একসময় ছিলেন বাংলাদেশের অবিসংবাদিত সেরা, কিন্তু মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান ব্যাটের পারফরম্যান্সে তামিমের পাশ থেকে ওই ‘অবিসংবাদিত’ শব্দটা কেটেছেন।
সেরা ব্যাটসম্যান প্রসঙ্গে এখন আর শুধু তামিম নয়, মুশফিকের নামও উঠে আসে, মাঝেমধ্যে সাকিবও।
মজার বিষয়, কোহলি কলকাতায় দিবারাত্রির সেই টেস্টে শতক পেয়েছিলেন ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর। তারপর থেকেই এ সংস্করণে শতকের খরায় ভুগছেন। তামিম টেস্টে সর্বশেষ শতক পেয়েছিলেন কোহলির শতকের খরা শুরু হওয়ার বছরেই—২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
তিন বছর ধরে কোহলি ও তামিম দুজনেই টেস্টে শতকের খরায় ছিলেন, সেখানে কোহলির আগেই আজ সেই খরা কাটালেন বাংলাদেশ ওপেনার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আজ চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনে ৫১তম ওভারে আসিতা ফার্নান্দোর বলে এক রান নিয়ে এই সংস্করণে নিজের ১০ম শতক তুলে নেন তামিম। অন্যদিকে কোহলির অপেক্ষা এখনো কাটেনি।
বাংলাদেশের বিপক্ষে সেই শতকের পর টেস্টে ৩০ ইনিংসে আর কোনো শতকের দেখা পাননি কোহলি। এর মধ্যে অর্ধশতক আছে ছয়টি, সর্বোচ্চ ৭৯ এ বছর কেপটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। তামিম কোহলির মতো এই তিন বছরে এত টেস্ট খেলার সুযোগ পাননি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেই শতকের পর ১৬ ইনিংস ধরে আর তিন অঙ্কের দেখা পাননি তামিম। আজ ১৭তম ইনিংসে এসে শতকের খরা কাটালেন।
তবে কোহলির মতোই মধ্যের এই তিন বছরে তামিমের অর্ধশতকও ছয়টি! পার্থক্য হলো, তামিম দুবার আউট হয়েছেন ‘নার্ভাস নাইন্টিজ’–এ আর তিনবার ৭০–৮০–এর মধ্যে। কোহলি এ সময়ে তিনবার নিজেকে সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৮০–এর ঘরে নিতে পেরেছেন।
তবু কোহলির সামর্থ্যের সঙ্গে তামিমের তুলনা কোনোভাবেই চলে না। সেটি পরিসংখ্যানই বুঝিয়ে দেয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন সংস্করণ মিলিয়ে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ২৫টি শতক পেলেন তামিম। ১৫ শতক পাওয়া মুশফিক তাঁর ধারেকাছেও নেই। আর কোহলি? শুধু টেস্টেই আছে তাঁর ২৭ শতক, ওয়ানডেতে ৪৩টি! কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কোহলির শতকের খরা নিয়ে কথা হচ্ছে বেশ ভালোই। এর মধ্যে তামিমও যে টেস্টে শতকের খরায় ছিলেন, তা বোধহয় অনেকেরই মনে ছিল না। যেহেতু তিন সংস্করণ মিলিয়ে (আজসহ) শেষ ১০ ইনিংসেই তামিমের রয়েছে দুটি শতক, একটি ৮৭ রানের অপরাজিত ইনিংস এবং দুটি চল্লিশের ওপাশে ইনিংস। সব সংস্করণ মিলিয়ে শেষ চার ইনিংসে তাঁর স্কোর ৮৭*, ৪৭, ১৩ ও ১০৩*। পারফরম্যান্স এমন হলে নির্দিষ্ট একটি সংস্করণের খরা কে মনে রাখে!
কোহলির এখন তামিমকে তাই হিংসে হতেই পারে। টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি কোহলির মতো ভালোবাসা কম ক্রিকেটারেরই আছে। ভালোবাসার এই সংস্করণে তিনি শতক পাচ্ছেন না, অথচ অন্যরা বাগিয়ে নিচ্ছেন—এসব দেখে কার ভালো লাগবে!