কোচিংয়ে নেমেই তেভেজের চোখ দি মারিয়ায়
খেলা থেকে তিনি দূরে ছিলেন অনেক দিন ধরেই। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায়। বাবার মৃত্যুতে অনেকটা ভেঙে পড়া কার্লোস তেভেজ মৌসুম শেষে বোকা জুনিয়র্স ছেড়ে দেন। এরপর অবসরের ঘোষণা না দিলেও প্রতিযোগিতামূলক কোনো ম্যাচ খেলা হয়নি আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের।
বয়সও হয়ে গিয়েছিল ৩৮, তাই তেভেজের বুট তুলে রাখার সম্ভাবনাই বাস্তবতা বলে মেনে নিয়েছিলেন সবাই। মাঝখানে অবশ্য তাঁর আবার খেলায় ফেরার সম্ভাবনা জেগেছিল, তবে কদিন আগে তেভেজ সব গুঞ্জনে জল ঢেলে দিয়ে জানিয়ে দেন—খেলোয়াড়ি জীবনকে বিদায়। এরপর কী করবেন আর্জেন্টিনার জার্সিতে ৭৬ ম্যাচ খেলা তেভেজ, এ প্রশ্নের উত্তর মিলতে বেশি সময় লাগেনি। অবসর ঘোষণার সপ্তাহখানেকের মধ্যেই কোচিংয়ে নেমে গেছেন তেভেজ।
আর্জেন্টিনারই ক্লাব রোজারিও সেন্ট্রাল এক বছরের চুক্তিতে কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে তেভেজকে। আজ তাঁর অধীনে দলের প্রথম অনুশীলন সেশন হয়ে গেছে, এরপর সংবাদমাধ্যমেরও মুখোমুখি হয়েছেন তেভেজ। নতুন ভূমিকায় এসেই তেভেজকে কথা বলতে হলো সাবেক সতীর্থ আনহেল দি মারিয়াকে নিজের ক্লাবে নিয়ে যাওয়া নিয়ে। দি মারিয়ার ক্যারিয়ারের শুরু রোজারিও সেন্ট্রালে কিনা!
দি মারিয়ার ভবিষ্যতও আর্জেন্টিনায় বড় এক আলোচনার ব্যাপার। পিএসজির সঙ্গে চুক্তি শেষ ৩৪ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন উইঙ্গারের, ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে আবার রোজারিও সেন্ট্রালে ফেরার ইচ্ছা তাঁর অনেক পুরোনো। কিন্তু এ বছরের নভেম্বরে কাতারে বিশ্বকাপ বলে এ মুহূর্তে ইউরোপের বাইরে যেতে চাচ্ছেন না দি মারিয়া। তাঁর চাওয়া, এক বছরের পাকা ও শর্তসাপেক্ষ আরেক বছরের চুক্তিতে ইউরোপেরই কোনো বড় ক্লাবে যাওয়া। জুভেন্টাস আর বার্সেলোনার নাম জড়িয়ে তাঁকে ঘিরে গুঞ্জন ছড়াচ্ছে অনেক।
সে কারণেই কি না, দি মারিয়াকে নিয়েই প্রশ্ন হলো তেভেজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে। দি মারিয়ার সঙ্গে কথা হয়েছে কি না, তাঁকে রোজারিও সেন্ট্রালে ফেরানোর ব্যাপারে কী ভাবছেন তেভেজ—এসবই আরকি! তাতে তেভেজের উত্তর, ‘ফিদেও-র (দি মারিয়ার ডাকনাম) সঙ্গে এখনো কথা বলতে পারিনি। বলব কী, আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গেই আমার চাকরিটা নিয়ে এখনো সেভাবে কথা বলতে পারিনি।’
তবে দি মারিয়াকে ফেরানোর ইচ্ছা যে তাঁর পুরোপুরিই আছে, এ নিয়ে সংশয় রাখেননি তেভেজ, ‘আশা করি (দি মারিয়াকে ফেরাতে পারব)। ওকে কে না দলে চাইবে! জানি ওকে দলে পাওয়ার মানে কী হতে পারে। যখন সবকিছু অনেকটা গুছিয়ে উঠবে, তখন ওকে ফোন করে ওর ইচ্ছাটা কী, সেটা বোঝার চেষ্টা করব। ফিদেও কী, ওর অভিজ্ঞতা তরুণদের কীভাবে সাহায্য করতে পারে, সেটা আমরা বুঝি।’
তেভেজের কোচিং ক্যারিয়ারের শুরু হবে আগামী শুক্রবার, যখন তাঁর রোজারিও সেন্ট্রাল আতিথ্য দেবে হিমনাসিয়া দে লা প্লাতাকে। গতকাল অবশ্য তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার আগে সর্বশেষ ম্যাচে ভেলেজ সার্সফিল্ডের কাছে ২-০ গোলে হেরেছে রোজারিও। সে সময় তেভেজের কী মনে হচ্ছিল? হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘বিরতির সময় হাত-পা নিশপিশ করছিল, মনে হচ্ছিল খেলতে নেমেই যাই!’
তবে কদিন আগে ফেলে আসা জীবনের সঙ্গে এ জীবনের পার্থক্যটা ঠিকই বোঝেন তেভেজ, ‘সত্যিটা হচ্ছে যখন কেউ টাচলাইনের অন্য প্রান্তের এই জীবনে চলে আসে, তাঁর ভেতরের খেলোয়াড়টা মরে যায়। তখন সে অন্যভাবে ভাবতে শুরু করে, আরও ঠান্ডা মাথায়। এখন আমি একজন কোচ, আর এই পেশা আমার ভালোই লাগে।’