‘কে কী বলল, তাতে স্টোকসের কিছু যায় আসে না’
জো রুট দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর সবচেয়ে উপযুক্ত ‘প্রার্থী’ তিনিই ছিলেন। কিন্তু ইংল্যান্ডের অধিনায়কত্বের ক্ষেত্রে বেন স্টোকসকে নিয়ে ‘শঙ্কা’ ছিল—এটি বাড়তি বোঝা হয়ে ভর করবে না তো তাঁর ওপর? মাঠের পারফরম্যান্সে দুর্দান্ত, কিন্তু নেতৃত্বের ক্ষেত্রে গুবলেট পাকানো—অলরাউন্ডারদের নিয়ে ইংল্যান্ডের অতীত অভিজ্ঞতা এমনই। ইয়ান বোথাম, অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফদের নিয়ে অমন অভিজ্ঞতাই হয়েছে তাদের।
তবে এখন পর্যন্ত অধিনায়কত্ব স্টোকসের ওপর চাপ ফেলছে বলে মনে হচ্ছে না। বরং রোমাঞ্চকর এক ধরনের ক্রিকেটই খেলছে স্টোকসের দল, টেস্ট ক্রিকেটের ধারাই বদলে দেওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। এজবাস্টনে ভারতের বিপক্ষে ৩৭৮ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড গড়া স্টোকস তাই বলেন, ‘এক-দুই সপ্তাহ আগে ৩৭৮ (তাড়া করা) ভীতি-জাগানিয়া হতো। কিন্ত এখন সব ঠিকঠাক।’ অথবা, ‘আমি আসলে চাইছিলাম, তারা (ভারত) ৪৫০ রানের লক্ষ্য দিক। তাহলে আমরা কী করি, সেটি দেখতে চাচ্ছিলাম।’
এর আগে ইংল্যান্ডের শুধু নয়, বিশ্ব ক্রিকেটেই ওয়ানডের ধরনকে বলতে গেলে বদলে দিয়েছিল এউইন মরগানের দল। এবার টেস্টে সে ধরনের কিছু করার পথে স্টোকসের ইংল্যান্ড। সাবেক অধিনায়ক নাসের হুসেইন বলছেন, শুরুতে স্টোকসকে নিয়ে যে সব শঙ্কা ছিল, সেগুলো উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। কে কী বলল, তাতে যে পাত্তা দিতে বয়েই গেছে স্টোকসের!
গত অ্যাশেজে ভরাডুবির পর থেকেই পরিবর্তনের শুরু ইংল্যান্ডের। একে একে সরে গেছেন বোর্ডের ছেলেদের ক্রিকেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাশলি জাইলস, কোচ ক্রিস সিলভারউড, টেস্ট অধিনায়ক জো রুট। জাইলসের জায়গায় রব কির নিয়োগ নিয়েও সমালোচনা হয়েছে, এর আগে এমন কাজের অভিজ্ঞতা নেই বলে। নাসের বলছেন, কি এরই মধ্যে তাদের ভুল প্রমাণ করেছেন। যে রোমাঞ্চকর ক্রিকেটের আশা দেখিয়েছিলেন, সেটিও সত্যি হচ্ছে।
তবে মাঠে স্টোকসের অধিনায়কত্ব আরও বেশি মুগ্ধ করার মতো, ডেইলিই মেইলের কলামে এমন লিখেছেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ও এখনকার অন্যতম সেরা ধারাভাষ্যকার নাসের, ‘মাঠে স্টোকসের নেতৃত্ব এখন পর্যন্ত যুগান্তকারী। সে যেভাবে এই কাজটা করছে, ফিল্ডিং সাজাচ্ছে, সেটি আসলে অনেক বেশি মুগ্ধ করার মতো।’
স্টোকসের কোন দিকটা পছন্দ, নাসের লিখেছেন সেটিও, ‘আমি আসলে তাঁর একগুঁয়ে ভাবটা পছন্দ করি। (এজবাস্টনে) প্রথম ইনিংসে ভারতের টেলএন্ডারদের শর্ট বল করেছিল ইংল্যান্ড, যেটি বুমেরাং হয়ে গেছে। দ্বিতীয় ইনিংসে এরপর স্টোকস কী করল? ওই একই। এবার ৯২ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে গেল ভারত। আর ইংল্যান্ড পেল ইতিহাস গড়ার সুযোগ।’
স্টোকসের কাছে বাইরের কোনো কথা প্রভাব ফেলে না বলেও মনে করেন ইংল্যান্ডকে ৪৫টি টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়া নাসের, ‘কে কী বলল, তাতে স্টোকসের কিছু যায় আসে না। সে নিজের মতো করে করছে এগুলো। স্টুয়ার্ট ব্রডকে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামানোর জন্য প্রস্তুত রাখছে, ব্রডকে আপনি কবে রক্ষণাত্মক শট খেলতে দেখেছেন?’
এখন পর্যন্ত জো রুট, জনি বেয়ারস্টোরা স্বপ্নের সময় পার করলেও এখন পর্যন্ত সে ভাবে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি স্টোকস নিজে। তবে নাসের বলছেন, স্টোকস আসলে ভিন্ন একটা ভূমিকা পালন করছেন, ‘এ মুহূর্তে স্টোকস আসলে সুরটা ধরিয়ে দিচ্ছে। দলকে একটা বার্তা দিচ্ছে। তবে আমার মনে হয় সে নিজেও থিতু হবে। কারণ সে খুবই স্মার্ট ক্রিকেটার, রুট-বেয়ারস্টোর সঙ্গে ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান।’
এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত চারটি টেস্টই রান তাড়া করে জিতেছে ইংল্যান্ড। তবে সব সময় এমন হবে না, নাসের মনে করিয়ে দিয়েছেন সেটিও, ‘এউইন মরগানের সীমিত ওভারের দলের মতো এই টেস্ট দলও মাঝে মাঝে পা হড়কাবে। তারা ভুল করবে। তবে এই পথে তাদের কোনো সংশয় থাকবে না, যেটিই করুক না কেন। নিজেদের মতো করেই করতে থাকবে। আশা করি, এটি দীর্ঘদিন ধরেই চলবে।’