>ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত এই অনিশ্চিত সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। ক্ষুদ্র এক অনুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলে দিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো
আমার ডায়েরি লেখা হয় না। তবে আজকাল ফেসবুকে লেখালিখি করছি। অনেকে ভাবে আমার কোন সহযোগী আছে, যে ফেসবুকের লেখাগুলো আমার হয়ে লিখে দিচ্ছে। আসলে আমি নিজেই লিখছি, কোন সহযোগী নেই। আমি আসলে সবার সামনে কিছু বলতে গেলে গুছিয়ে বলতে পারি না। কিন্তু চিন্তা করে যদি বলি, তাহলে গুছিয়েই বলি।
করোনার সময়ে আমি আশেপাশে যা দেখছি, যা ভাবছি, সেটাই স্ট্যাটাস হিসেবে দিচ্ছি। আমাদের তো অনেক মানুষ ফলো করে। আমার স্ট্যাটাস দেখে কিছু মানুষ হয়তো সচেতন হবে। এছাড়া আর কিছুই না। অনেকে দেখি প্রশংসাও করে আমার স্ট্যাটাসের!
আসলে সবাই এখন যার যার ঘরে আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই সবার সময় কাটে। হয়তো এই কারনেই আমার স্ট্যাটাসগুলো মানুষের চোখে পড়ছে বেশিছ। তবে আমি প্রশংসার জন্য এটা করছি না। আমার যা মনে হচ্ছে, যা আমি দেখতে পাচ্ছি, সেটাই আমি বলছি।
অনেকে আবার নেতিবাচক মন্তব্যও করে। ক্রিকেটার হয়ে আমি কেন এই ধরনের কথা বলছি! কে কী বলল, এসব নিয়ে আমি ভাবি না। আমি ভয়ও পাই না। আমার মনে হয় এটা বলা উচিত, আমি তাই বলি।
আমাদের দেশে সবাই সুযোগ খুঁজে। দেশের এমন ক্রান্তিলগ্নেও অনেকে সুযোগ নিচ্ছে। যে যেভাবে পারছে টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। যাদের মধ্যে আত্মমানবতাবোধ নেই, তারাই এই সময়ে এমন করছে। যেই জিনিসটা আমি ১০ টাকায় কিনছি, সেটা যদি আমি বেশি টাকার বিক্রি করি তাহলে তো গরিবরা কিনতে পারবে না! তাদেরও তো জীবন চালাতে হবে। বিবেক বলে একটা কথা তো আছে।
দুর্দিনে সবাই সবার পাশে দাঁড়াবে, এটাই মানবতা। আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করছি। আমি এখন ম্যাচ খেলছি না। তবু যা পারছি তা করছি। ক্রিকেট খেলে কিছু অর্থ তো উপার্জন করেছি। এখান থেকে কিছু টাকা যদি দিতে পারি এই সময়ে, এটাই আমার কাছে অনেক কিছু। বাগেরহাটে আমার তিনটা বাড়ি, সেখানে যারা ভাড়া থাকছেন তাদের কাছ থেকে কোন ভাড়া নিব না। করোনাভাইরাস যতদিন আছে ততদিন কোনো ভাড়া নিচ্ছি না।
এদিকে মিরপুরের অবস্থাও খুব একটা ভালো না। করোনাভাইরাস এখানে ভয়াবহভাবে ছড়িয়েছে। আমার বাসার আশেপাশে কয়েকটা বাড়ি লকডাউন।
আমার বাসা অত বড় নয়। রানিং করার জায়গা নেই। ট্রেডমিলও নেই। এটা থাকলে ভালো হতো। এমনিতে কোরের কাজগুলো করছি। রুম বসে যা করা যায়, তার সবই করছি। করোনাভাইরাস চলে গেলে খেলা শুরু হওয়ার আগে কিছুদিন তো সময় পাবো। তখন আশা করি সব ঠিক করে ফেলা যাবে।
বাসার থাকার অভ্যাস আমার আছে। এমনিতেও খুব একটা বাসা থেকে বের হই না। অন্য ক্রিকেটাররা যেমন বাইরে যায়, আমার তেমন যাওয়া হয় না। কাজেই টানা ঘরে থাকাটা কোনো সমস্যা নয়। বাগেরহাটে থাকলে ক্যারাম খেলা হতো। এখন বাসায় বাচ্চাকে নিয়েই ব্যস্ত থাকি।
আপাতত করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়াই মূল চিন্তা। এ জন্য আমাদের সবাইকে খুবই সচেতন হতে হবে। আমাদের ঘরে থাকতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। এই রোগের কোনো প্রতিষেধক নেই। একমাত্র ঘরে থাকলেই এটার প্রকোপ কমে আসবে। বাইরে বের হলে আরও বেশি ছড়াবে। কাজেই সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাই এ মুহুর্তে আমাদের সবার কর্তব্য। সে সঙ্গে দূরে থেকে হলেও আমরা যেন অসহায় মানুষদের পাশে থাকি।