২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ওরা আমাদের শাস্তি দিচ্ছে

কাইল মায়ার্সের ইনিংস থেকে শিক্ষা নিতে বলছেন ডমিঙ্গোএএফপি

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি, চট্টগ্রাম টেস্ট। চতুর্থ ইনিংসে ৩৯৪ রান তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অবিশ্বাস্য এক জয়ের পথে এগিয়ে নিচ্ছেন কাইল মায়ার্স, ওই টেস্টেই যাঁর অভিষেক। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে চোটের কারণে মাঠে নেই সাকিব আল হাসান। তবে কোনো এক ফাঁকে মাঠের বাইরে যাওয়া মুমিনুল হককে পরামর্শ দিতে দেখা গেল সাকিবকে। আইসিসির নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা সাকিবের টেস্ট ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তনের ম্যাচ ছিল সেটি।

২০২২ সালের জুন, সেন্ট লুসিয়া টেস্ট। এবার সাকিব নিজেই অধিনায়ক, মুমিনুল এ টেস্টের দলেই নেই। মাঝে ২১টি ইনিংসে কোনো শতক না পাওয়া মায়ার্স তাঁর দ্বিতীয়টি পেলেন ওই বাংলাদেশের বিপক্ষেই। সাকিব এবার মাঠে থেকেও মায়ার্সকে আটকাতে পারলেন না। তাঁর দুর্দান্ত ইনিংসে বাংলাদেশের অবস্থা এখন বেশ কোণঠাসা।

আরও পড়ুন

মূলত সহ-অধিনায়ক জার্মেইন ব্ল্যাকউডের পর জশুয়া ডা সিলভার সঙ্গে মায়ার্সের দুটি জুটিতেই দ্বিতীয় দিন শেষে ১০৬ রানের লিড ক্যারিবীয়দের। প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের কী করা উচিত, সেটি দেখাচ্ছেন মায়ার্সরাই। চট্টগ্রামে মায়ার্স যা করেছিলেন, সেন্ট লুসিয়ায় যা করলেন—এমন কিছু বাংলাদেশের কেউ করতে পারছেন না, সেটিও মনে করিয়েছেন তিনি। সব কিছু মিলিয়ে ডমিঙ্গোর মনে হচ্ছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাংলাদেশকে শাস্তিই দিচ্ছে।

চট্টগ্রামের ওই ইনিংস মনে করালেন মায়ার্স
ফাইল ছবি

মায়ার্সের অমন ইনিংস, প্রথম সেশনে বোলিংয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর পর আবার সুযোগ হারানোর কথা এলেও ঘুরেফিরে আসলে আসছে বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতার চিত্রটাই। প্রথম ইনিংসে ২৩৪ রানে গুটিয়ে গেলে সে প্রসঙ্গ আসাটা অবশ্য খুবই স্বাভাবিক। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ডমিঙ্গো নিজেই বললেন, দুই দলের পার্থক্যটা মূলত ওই ব্যাটিংয়েই বেশি ধরা পড়ছে, ‘ব্যাটিং ও বোলিং নিয়ে কঠিন প্রশ্ন তোলার আছে। কারণ এটা ২৩০ এর উইকেট না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে কেনো ওরা এই সংস্করণে আমাদের চেয়ে ভালো দল। ওদের একজন একশ রানে অপরাজিত আছে। ওদের সামনে বড় রান করার সুযোগ আছে। কারণ ওরা জুটি গড়তে সক্ষম হয়েছে, লম্বা সময় ব্যাটিং করেছে। ওরাই দেখাচ্ছে আমাদের কী করা উচিত।’

আরও পড়ুন

মায়ার্স কীভাবে ইনিংসটা গড়েছেন, ডমিঙ্গো ব্যাখ্যা করেছেন নিজের পর্যবেক্ষণও, ‘এই ম্যাচে এখনো অনেক খেলা বাকি। (কিন্তু) মায়ার্সকে দেখবেন ইতিবাচক ব্যাটিং করেছে। কাভারে অনেক রান করেছে সে। নিজের ব্যাটিং পরিকল্পনা অনুযায়ী যতক্ষণ পেরেছে খেলেছে। ভাগ্যও তাঁর সঙ্গে ছিল। কিছু এজ স্লিপ ফিল্ডারের মাথার ওপর দিয়ে গিয়েছে। এক-দুটি বল গিয়েছে স্লিপের পাশ দিয়ে। কিন্তু নিজের ভাগ্য তো নিজেকেই গড়তে হয়। সে দারুণ ইন্টেনসিটি দেখিয়েছে। বাজে বলকে শাসন করেছে।’

দারুণ শতক করেছেন মায়ার্স
এএফপি

বাংলাদেশের ব্যাটিং দুর্দশার এই অবস্থায় মায়ার্সের ব্যাটিং যে একটা শিক্ষা হতে পারে, সেটিও বললেন ডমিঙ্গো, ‘আমাদের দলের অনেক ক্রিকেটার ফর্ম খুঁজে বেড়াচ্ছে, রানের পেছনে ছুটছে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার একটাই উপায়, লম্বা সময় ধরে ব্যাট করা। অনেক ৩০-৪০ রানের ইনিংস হচ্ছে। কেউ কেউ ৫০ রান করছে। (তবে) কাইল মায়ার্স যা করছে, সেটা কেউই করছে না। কারণ এটাই ২৩০ আর ৪০০ রানের মধ্যে পার্থক্য। আমাদের ওর মতো ১২০ রানের ইনিংস খেলতে হবে।’

ছেলেদের জন্য এটা অনেক বড় শিক্ষা। টেস্ট ম্যাচ ক্রিকেট কঠিন। যখন আপনি যতটা দীর্ঘ সময় ব্যাট করা উচিত, ততটা করছেন না, তখন ভালো দল আপনাকে শাস্তি দেবে। এখন আমাদের ওরা শাস্তিই দিচ্ছে।
রাসেল ডমিঙ্গো, বাংলাদেশের প্রধান কোচ

মায়ার্সের কথা উঠলে চট্টগ্রাম টেস্ট প্রসঙ্গ চলে আসে। ডমিঙ্গোও ভোলেননি সেটি, ‘ওরা আমাদের বিপক্ষে ৪০০ (৩৯৪) রান তাড়া করেছিল চট্টগ্রামে। মায়ার্স ২০০ (২১০*) রান করেছিল সেদিন। আমরা এ ধরনের ইনিংস পাচ্ছি না। ছেলেদের জন্য এটা অনেক বড় শিক্ষা। টেস্ট ম্যাচ ক্রিকেট কঠিন। যখন আপনি যতটা দীর্ঘ সময় ব্যাট করা উচিত, ততটা করছেন না, তখন ভালো দল আপনাকে শাস্তি দেবে। এখন আমাদের ওরা শাস্তিই দিচ্ছে।’

আরও পড়ুন

ব্যাটিং ব্যর্থতার সঙ্গে বোলিংয়ে অধারাবাহিকতার প্রসঙ্গটিও অবশ্য এড়িয়ে যাননি ডমিঙ্গো, ‘দেখুন, আমাদের টেস্ট ক্রিকেটের এই মুহূর্তের গল্পটা এমনই। আমরা এক সেশনে খুব ভালো, কিন্তু এরপর খুব বাজে আরেকটি সেশন খেলছি। হতে পারে ছেলেরা একটু অধৈর্য। যথেষ্ট আঁটসাঁট ওভার এক টানা করতে পারছে না, যা প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। যেমনটা আমরা প্রথম টেস্টে করেছিলাম। সেদিক থেকে খুব হতাশ লাঞ্চের পরে যা হয়েছে। আমরা প্রথম সেশনে খুব ভালো বোলিং করেছি। এরপর উইকেটের খোঁজে অনেক বেশি আলগা বল দিয়েছি। মৌলিক দিকগুলো ভুল করেছি। আর যথেষ্ট ধৈর্য দেখাইনি।’