‘আমি অনেক ভালো’, এই অহংটা থাকা দরকার লিটনের

নাজমূল আবেদীনফাইল ছবি

ক্রিকেট যে কতটা অনিশ্চয়তার খেলা, তা আরেকবার প্রমাণিত হলো। ৪২ মিনিটে, ২৪ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে যাওয়ার পর দিনশেষে ওই ৫ উইকেটেই ২৭৭ রান—কে ভাবতে পেরেছিল এমন!

বাংলাদেশ টসে জিতে ব্যাটিং করে বড় স্কোর গড়ার ব্যাপারে হয়তো একটু ‘অবসেসড’ ছিল। বড় স্কোরের ভাবনাতেই শ্রীলঙ্কান পেসারদের আক্রমণাত্মক বোলিংয়ের সামনে গড়বড় হয়ে গেছে সব। দেখে মনে হয়েছে ওরা প্রস্তুতই ছিল না এমন পরিস্থিতির। টেস্টের প্রথম ঘণ্টায় বা প্রথম সেশনে উইকেট থেকে যখন পেসাররা সহায়তা পাচ্ছে, একটা উইকেট পড়ে যাওয়ার পর সবার উপলব্ধি আসা উচিত ছিল—দেখে খেলতে হবে, রান যা–ই হোক না কেন। এই মানসিকতার একটু অভাব দেখেছি। কয়েকজন মারতে গিয়ে আউট হয়েছে, যেটা ভালো লাগেনি। যদি ডিফেন্সিভ খেলতে গিয়ে আউট হতো, বুঝতাম কিছু একটা করার তাড়না ছিল দলকে বাঁচাতে।

আরও পড়ুন

তবে ওই সময়টায় শ্রীলঙ্কানদের বোলিং–ও ভালো লেগেছে। টেস্ট ম্যাচের শুরুতে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় ক্রমাগত বোলিং করে গেছে, ঠিক চিরায়ত বোলিং করেনি। প্রথম বলেই জয়কে ইয়র্কার দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। বোঝাই গেছে, ওরা ব্যাটসম্যানদের নিয়ে হোমওয়ার্ক করে নেমেছে।

কয়েকজন মারতে গিয়ে আউট হয়েছে, যেটা ভালো লাগেনি। যদি ডিফেন্সিভ খেলতে গিয়ে আউট হতো, বুঝতাম কিছু একটা করার তাড়না ছিল দলকে বাঁচাতে।
শামসুল হক

এরপর যা দেখলাম, সেটি অভাবনীয়। অসাধারণ প্রত্যাবর্তন। মুশফিককে প্রথম থেকে দেখেই থিতু মনে হয়েছে। আত্মবিশ্বাসটা বোঝা যাচ্ছিল। শুরুতে জড়তা থাকলেও বল ব্যাটের মাঝখানে লাগার পর থেকে লিটন দুর্দান্ত ছিল। একটা সুযোগ দিয়েছিল। তা এত বড় জুটিতে এভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর পথে একটু ভাগ্য তো লাগেই। লিটন সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে। ওদের জুটি শ্রীলঙ্কাকে উল্টো চাপে ফেলে দিয়েছে।

আরও পড়ুন

দুজনের জুটির ছন্দটা দারুণ ছিল। প্রায় আড়াই সেশন ব্যাটিং করা চাট্টিখানি কথা নয়। শুরুতে লিটনের যখন অসুবিধা হচ্ছিল একটু, মুশফিক অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। লিটন ভালো খেলতে শুরুর পর মুশফিক একটু খোলসে ঢুকে গেছে। দ্বিতীয় দিনে এটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ ওদের সামনে।

দুজনের জুটির ছন্দটা দারুণ ছিল। প্রায় আড়াই সেশন ব্যাটিং করা চাট্টিখানি কথা নয়
প্রথম আলো

লিটনকে নিয়ে বলি। ও দারুণ মেধাবী একজন ব্যাটসম্যান, স্কিলের দিক দিয়ে অবিশ্বাস্য প্রায়। তবে যে কোনো খেলাতেই যেটি হয়, অ্যাথলেটদের মধ্যে একটা ‘সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স’ থাকা খুব জরুরি। একটু ব্যাখ্যা করি। ক্রিকেটে, বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে ওই ‘লেজিটিমেট সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স’ বা ‘অহংকারটা’ থাকবে হবে—‘আমি পারি’। ‘আমি অনেক ভালো’, এই বিশ্বাসটা ভেতরে থাকা দরকার। সাকিব, তামিম, মুশফিকরা ওইভাবে ভাবতে পারে। এটা অনেক বেশি দরকার। শুরুর দিকে লিটনের মধ্যে একটু কম ছিল এটি, এখন আসতে শুরু করেছে।

আরও পড়ুন

যখন এ মানসিকতাটা আসবে যে ‘আমি এ পর্যায়ের খেলোয়াড়, আমি টু গুড’, তখন আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যাবে। এটি যত বাড়বে, ওর ব্যাটিং আরেকটা পর্যায়ে চলে যাবে। একটা সময় আসবে যখন ওকে আরও দায়িত্ব নিতে হবে, মুশফিকরা হয়তো থাকবে না। আমি নিশ্চিত, ওকে তখন আরেকটি পর্যায়ে দেখব।

লিটন দারুণ মেধাবী একজন ব্যাটসম্যান, স্কিলের দিক দিয়ে অবিশ্বাস্য প্রায়। তবে যে কোনো খেলাতেই যেটি হয়, অ্যাথলেটদের মধ্যে একটা ‘সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স’ থাকা খুব জরুরি।
প্রথম আলো

এখন লিটন যেমন খেলছে, তাতে ওর ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে আলোচনা হওয়া স্বাভাবিক। লম্বা সময় কিপিং করে বলে ছয়-সাতেই খেলতে হবে। এখানে ভালো খেলছে, দলের কাজেও দিচ্ছে। তবে সামনেই ব্যাটিং অর্ডারে এক বা দুই ধাপ ওপরে আসতে দেখলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে ওর আশেপাশে ওর মানের ব্যাটসম্যান রাখতে পারলে ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে এত ভাবতে হবে না।

মুশফিক এখন যে অবস্থায় আছে, তাতে নিরবিচ্ছিন্ন খেলে যেতে পারলে আদর্শ হতো, ওর ফর্মটা আরেকটু পোক্ত হতো। ছুটি নিয়েছে বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে একটু ছেদ পড়বে। অবশ্য এমন এক জায়গায় এসেছে, আশা করি ছন্দেই থাকবে। আর মুশফিকের ক্ষেত্রে ওর মানসিক অবস্থাটা অনেক জরুরি। যেহেতু হজের জন্য বিরতি নিচ্ছে, এটা করে এলে ও মানসিকভাবে আরও ভালো থাকবে। সব কিছু নিয়েই ওর আত্মবিশ্বাসটা আরও দৃঢ় হবে, খেলার ক্ষেত্রেও। আমি নিশ্চিত, ও এভাবেই ভাবে। এটা ওকে বাড়তি শক্তি দেবে, আত্মবিশ্বাস দেবে।

শেষে মোসাদ্দেক হোসেনের দলে আসা নিয়ে একটু বলা দরকার। খুব অবাকই হলাম, মিরাজ বা নাঈমের পর তৃতীয় একজন অফ স্পিনারের খোঁজ না পাওয়াতে। এদিকে নজর দেওয়া দরকার। এখানে কাউকে তৈরি রাখতে হবে। যেমন স্পিনারই হোক। এ ম্যাচে যেমন চার জন বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে খেলছি, সে দিক থেকে পঞ্চম একজন জেনুইন বোলারকে মিস করব।