অ্যান্টিগার ‘অপ্রিয়’ মাঠ বাংলাদেশেরও দুঃস্বপ্নের
একসময় অ্যান্টিগায় টেস্ট মানেই অ্যান্টিগা রিক্রিয়েশন গ্রাউন্ডে খেলা (এআরজি)। ১৯৮০-৮১ সালে এআরজিতে প্রথম ম্যাচেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ এক শতক পেয়েছেন অ্যান্টিগার ঘরের ছেলে ভিভ রিচার্ডস। এই ভেন্যুতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মানেই ছিল অন্য রকম এক দ্যোতনা। ক্যালিপসোর সুরমূর্ছনা এই মাঠে ঢেউ তুলত ক্রিকেট দেখতে আসা দর্শকদের মনে। এই মাঠে খেলাটা আনন্দ-উৎসবের উপলক্ষ হয়ে উঠত অ্যান্টিগার ক্রিকেটপ্রেমী মানুষের জন্য।
কিন্তু সেই দিন এখন আর নেই। অ্যান্টিগার সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদের নামে তৈরি হয়েছে স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়াম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেখানেই। ২০০৭ সালে তৈরি স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস ক্রিকেট স্টেডিয়াম কিন্তু অ্যান্টিগার মানুষের কাছে এআরজির মতো জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। এর সবচেয়ে বড় কারণ, ভেন্যুটির দূরত্ব। ধারেকাছের এআরজি ছেড়ে অ্যান্টিগাবাসীর তাদের প্রিয় ভিভের নামে তৈরি স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখায় যে বড় অনীহা।
আগামীকাল থেকে স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামেই শুরু হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট। এ ভেন্যু যেমন অ্যান্টিগাবাসীর ক্রিকেট উপভোগের প্রিয় ভেন্যু হতে পারেনি; ঠিক তেমনি এই মাঠ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কাছে খুব একটা পয়া বলা যাবে না।
এ মাঠেই যে ২০১৮ সালের সফরে প্রথম টেস্টটি খেলেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৪৩ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল সফরকারীরা, যেটা বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসেই সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর। দ্বিতীয় ইনিংসেও ১৪৪ রানের বেশি করতে না পেরে ক্যারিবীয়দের কাছে হেরেছিল ইনিংস ব্যবধানে। এবার নতুন করে এ মাঠে ফিরে চার বছর আগের দুঃসহ স্মৃতি যে সাকিব, তামিম, লিটনদের তাড়া করবে না, সেটি বলা যাচ্ছে না। তবে ক্রিকেটাররা আদৌ পেছনের ইতিহাস মাথায় রেখে খেলতে নামেন কি না, সেটি নিয়ে কথা হতে পারে।
প্রতিষ্ঠার পর ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে কয়েকবারই। এ মাঠের উইকেট ও আউটফিল্ড নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন ছিল। ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সময় সেটি নতুন করে তৈরি করা হয়। কিন্তু তাতে কী,২০০৯ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটি টেস্ট বোলারদের রানআপের জায়গা বিপজ্জনক হওয়ার কারণে ১০ ওভার হয়েই পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়েছিল। অ্যান্টিগার সবচেয়ে আদরের ক্রীড়াবিদ ভিভ রিচার্ডসের নামখচিত এ মাঠ কখনোই কিংবদন্তির নামের সঠিক মূল্যায়ন করেনি!
এ মাঠে প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোট ১১টি টেস্ট হয়েছে। আগামীকাল বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ মাঠের ১২তম টেস্ট ম্যাচটি খেলতে নামবে। ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে এই ১১ টেস্টে সর্বোচ্চ ৩টি জয় পেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভারত পেয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২টি জয়। আর এই মাঠে বাংলাদেশের স্মৃতি যে দুঃসহ, সেটি তো আগেই বলা হয়েছে।
২০১৮ সালে অ্যান্টিগা টেস্টে বাংলাদেশের ৪৩ রানে গুটিয়ে যাওয়া ইনিংসে সর্বোচ্চ ২৫ রান এসেছিল লিটন দাসের ব্যাট থেকে। বাংলাদেশ হেরেছিল ইনিংস ও ২১৯ রানে। সে টেস্ট সাকিবের নেতৃত্বেই মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ।
অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামের কিছু রেকর্ড:
সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ: ভারত ৫৬৬/৮ (ডিক্লে.),২০১৬-১৭
সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ: বাংলাদেশ ৪৩ অলআউট, ২০১৮-১৯
সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস: বিরাট কোহলি ২০০,২০১৬-১৭
সেরা বোলিং: রবিচন্দ্রন অশ্বিন ৭/৮৩,২০১৬-১৭
ম্যাচে সেরা বোলিং: ইশান্ত শর্মা ৮/৭৪,২০১৬-১৭