সিডনিতে গত ১৪ ম্যাচের মাত্র ১টিতে জিতেছিল ভারত। বলা বাহুল্য, আন্ডারডগ হিসেবেই তারা এসেছিল। তার ওপর গত চার মাসে তারা অস্ট্রেলিয়াকে কোনো সংস্করণেই হারাতে পারেনি। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ছিল, অস্ট্রেলিয়া বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ওপর কর্তৃত্ব করতে পারবে কি না। শেষ পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া জিতল দাপটের সঙ্গেই।
ম্যাচের আগে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক বলেছিলেন, ‘আমরা ওদের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা জানি। আমরা জানি তারা বেশ ভালো ক্রিকেট খেলছে। আমাদের নিজের সামর্থ্য ভালোভাবে কাজে লাগাতে হবে। সেটা করতে পারলে আমরা যেকোনো দলকেই হারাতে পারব।’ অস্ট্রেলিয়া তাদের কথা রেখেছে।
এই বিশ্বকাপে ভারত তাদের ফর্ম ফিরে পেয়ে টানা ৭ ম্যাচ জিতে উঠে যায় সেমিফাইনালে। তাদের বোলাররা কালকের আগ পর্যন্ত সব দলকেই অলআউট করেছে। রোহিত শর্মা, অজিঙ্কা রাহানে, বিরাট কোহলি, সুরেশ রায়নাসহ টপ অর্ডার বেশ ভালো খেলছিলও।
শুরুতে ব্যাট করে মনে হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া ৩৮০-৪০০ করে ফেলতে পারে। শেষ পর্যন্ত তারা করল ৩২৮ রান। অথচ একসময় তারা ৪ উইকেট হারিয়ে ২৯০ রান তুলে ফেলেছিল। কিন্তু উমেশ যাদব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট তুলে ভারতকে খেলায় ফিরিয়েছে। আবার ইনিংসের শেষে কিছু বাজে বল করায় অস্ট্রেলিয়া হাত খুলে মারতে পেরেছে।
ভিত্তিটা অ্যারন ফিঞ্চ ও স্টিভেন স্মিথই গড়ে দিয়েছিল, ১ উইকেটে ১৯০ রান করে ফেলেছিল। স্মিথের ৯৩ বলে ১০৫ রানের ইনিংসটা দুর্দান্ত, পুরো গ্রীষ্মেই সে অসাধারণ খেলেছে। ক্রিজে তার ফুটওয়ার্ক এত দ্রুত, ওকে বল করা খুবই কঠিন ব্যাপার।
আমি অবশ্য ভারতের পেসারদের পারফরম্যান্সে একটু হতাশ। কিছু ভালো বল করলেও অনেক আলগা বল করেছে তারা। বিশেষ করে গুড লেংথের ও শর্ট বল করতে গিয়ে প্রায়ই তারা ধারাবাহিকতা রাখতে পারেনি। লেগ সাইডে অনেক বেশি পুল বা হুক হয়েছে। এভাবে কয়েকটা উইকেটও গেছে, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ানরা এ ধরনের বোলিং থেকে সুবিধা নিয়েছে। আমি বুঝলাম না কেন বোলাররা শেষ ১০ ওভারে আরও বেশি ইয়র্কার দেয়নি। ব্লকহোলে বল করতে পারাও একটা দক্ষতা। যাদব, মোহিত ও শামি প্রত্যেকেই ৭০-এর আশপাশে রান দিয়েছে।
এত বড় রান তাড়া করতে হলে ভারতের কাউকে বড় একটা ইনিংস খেলতে হতো। মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজলউড ও মিচেল জনসনের বলের সামনে তারা খাবি খেয়েছে। কোহলির আউটটাই দলকে বড় একটা ধাক্কা দিয়েছে। দর্শকদের কেউ কেউ তখন কেঁদেই ফেলেছে, সবার আশা ছিল সে বড় রান করবে। কোহলির বিশ্বকাপটা শেষ পর্যন্ত ভুলে যাওয়ার মতো হলো। চাপটা হয়তো বেশিই নিয়ে ফেলেছিল সে।
ধোনি ও জাদেজার কাছে শেষ ১০ ওভারে ১৫ রান করে নেওয়াটা একটু বেশিই চাওয়া ছিল। শেষ পর্যন্ত ভালো দলটাই জিতেছে। কেউ কেউ বলতে পারে ভারত যুবরাজ সিংয়ের অভিজ্ঞতার অভাবটা টের পেয়েছে। আমার মনে হয় দল নির্বাচনে ভারত কোনো ভুল করেনি। গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচগুলোতে তো তারা অপ্রতিরোধ্য ছিল।
গত কিছুদিনে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার কথার লড়াই বেশ উত্তাপ ছড়িয়েছে। খেলা শুরুর আগে থেকে জনসন বিপক্ষদের তাতিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। ভারতের সঙ্গে আগের ম্যাচে (ত্রিদেশীয়) ঘটনা কম ঘটেনি। জনসন এমন ঘোষণাও দিয়েছিল, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে স্লেজিংয়ের দায়িত্ব নেবে। ব্যাপারটা অনেক দূর গড়ানোর আশঙ্কা ছিল। ভাগ্য ভালো, সেমিফাইনালে এমনটা হয়নি। এসব নিয়ে আরেকটু সতর্ক হতে হবে। এসব আসলে ছেলেমানুষি। খেলায় এসব ঠিক শোভা পায় না।
শেষ পর্যন্ত ভারত মাথা উঁচু করেই বিদায় নিতে পেরেছে। কিন্তু ১ নম্বর দলকে হারানোর জন্য যে রকম খেলা দরকার ছিল সেটা করতে পারেনি। এখন রোববার অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের ফাইনালের দিকে তাকিয়ে আছি আমি। আশা করছি, দুর্দান্ত একটা বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখার মতো উপলক্ষ এনে দেবে ম্যাচটি। (হক-আই)।