অসম্ভব নয়, তবে কঠিন
প্রথমেই একটা কথা বলে রাখি—এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে আমি বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় সমর্থক। দলের সর্বোচ্চ সাফল্যের প্রত্যাশাই আমি করি। আর সবার মতো আমিও চাই বাংলাদেশ দল তাদের সামর্থ্যের সর্বস্ব ঢেলে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে যাক, সেখান থেকে যাক যতদূর পারা যায়।
তার পরও বাস্তবতার কারণে কিছু কিছু বিষয় সামনে চলে আসে। প্রত্যাশার সীমাটা সেসবের বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করেই ঠিক করা উচিত। অতীত পারফরম্যান্স, খেলোয়াড়দের সামর্থ্য, দলগত শক্তি—বাস্তবতানির্ভর প্রত্যাশার জন্য এই কয়েকটি জিনিস বিবেচনা করা খুবই জরুরি বলে মনে করি।
বিশ্বকাপে আমাদের গ্রুপটা বেশ কঠিন। ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা তো আছেই, বিশ্বকাপের দুই স্বাগতিক দলকেও আমরা পাচ্ছি। এ রকম একটা গ্রুপে থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে হলে বাংলাদেশের মতো দলের খুবই ভালো পারফরম্যান্স করা দরকার। আমরা আসলেই সেটা করার মতো অবস্থানে আছি কি না, আমি নিশ্চিত নই। ক্রিকেট যেহেতু অনিশ্চয়তার খেলা, সম্ভাবনার দ্বার সব সময়ই খোলা থাকবে, আছে। তবে আমি বলব, বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার ব্যাপারটা শুধু আমাদের সাফল্যের ওপরই নির্ভরশীল নয়, আমাদের গ্রুপে থাকা দুটো সহযোগী দলের সফলতার ওপরও তা খানিকটা নির্ভর করছে। সব মিলিয়ে আমাদের কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়াটা অসম্ভব না হলেও কঠিন তো অবশ্যই।
কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে হলে আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডকে হারাতেই হবে। একই সঙ্গে গ্রুপের বড় একটা দলকেও হারাতে হবে। আবার তাকিয়ে থাকতে হবে আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ডের অন্য ম্যাচের দিকেও। আমাদের সম্ভাবনা বাড়বে, যদি এই দুটো দলও কোনো না কোনো বড় দলকে ঘায়েল করতে পারে। আর একটা ব্যাপার, বাংলাদেশের সফলতার জন্য আমি মনে–প্রাণেই চাইব অস্ট্রেলিয়া যেন প্রতিটি ম্যাচ জেতে। আমি মনে করি না আমাদের গ্রুপের অন্য কোনো দলের সব ম্যাচ জেতার শক্তি আছে। সে ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া সব ম্যাচ জিতলে আমাদের সম্ভাবনা কিছুটা হলেও বাড়বে।
এর আগেও একটা লেখায় লিখেছি, গ্রুপের বড় দলগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জেতাই আমাদের জন্য সহজ হবে। নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপের আগে খুবই ভালো করেছে। তার ওপর ‘বাংলাওয়াশের’ কথাও তারা নিশ্চয়ই ভোলেনি। যেমন ইংল্যান্ড ভুলবে না ২০১১ বিশ্বকাপে আমাদের কাছে হারের কথা। এই দুই দল তাই বাংলাদেশকে কোনোভাবেই হালকাভাবে নেবে না। সে তুলনায় শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমাদের মানসিক দূরত্বটা কম। এটা ঠিক তাদের তিলকরত্নে দিলশান, কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে আছে। তবে এই তিনজনের ক্যারিয়ারই এখন পড়ন্ত বিকেলে।
টিম কম্বিনেশন নিয়ে একটু বলি। দুঃখজনক হলেও সত্যি, অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন বিবেচনা করলে আমার মনে হয় না আমাদের বোলিং আক্রমণ খুব একটা গোছানো। কে কখন এসে কোন জায়গায় বল করবে, কী পরিকল্পনা নিয়ে আসবে, সেগুলো স্পষ্ট নয়। আর অনভিজ্ঞতা তো আছেই।
প্রস্তুতি ম্যাচে দেখলাম তামিম, মাহমুদউল্লাহ ভালো খেলেছে। তবে এই টুর্নামেন্টে যদি জয়ের দেখা পেতে হয়, যে বড় ইনিংস খেলবে তার স্ট্রাইক রেট হতে হবে শতভাগের ওপরে। অস্ট্রেলিয়ার মতো জায়গায় ৭০-৮০ স্ট্রাইক রেট নিয়ে ১০০ করলে সেটা মানা যাবে না। এখানে রানের খেলাই হবে। বাংলাদশের মতো বোলিং আক্রমণ নিয়ে ২৫০-৬০ রান করে ম্যাচ জেতা কঠিন। আমি মনে করি বাংলাদেশের ওপরের দিকের চার ব্যাটসম্যানের ওপরই দায়িত্বটা বেশি থাকবে। টপ অর্ডার না পারলে টেল এন্ডাররা ওখানকার কন্ডিশনে দলকে ভালো অবস্থানে নিতে পারবে না। একটা ম্যাচে সবাই সফলতার মুখ দেখবে না, এটাই স্বাভাবিক। তবে যারাই উইকেটে টিকে যাবে, তাদের স্ট্রাইক রেট ভালো হতে হবে। বাঘা বাঘা খেলোয়াড়ের বিপক্ষে যদি জয় বের করে আনতে হয়, তাদের সেরাটার কাছাকাছি মানের ক্রিকেটই আমাদের খেলতে হবে। নয়তো প্রতিপক্ষকে চাপের মধ্যে ফেলা যাবে না।
সব দলেই কিছু কিছু খেলোয়াড় থাকে, যাদের প্রতি প্রত্যাশা থাকে বেশি। আমি যেমন সিমারদের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে মাশরাফিকে এগিয়ে রাখব। রুবেল আর তাসকিনও ভালো করতে পারে। তবে তাসকিনের ওপর বেশি নির্ভর না করাই ভালো। ওর তরুণ বয়সটা ভুলে গেলে চলবে না।
আমি বরং বেশি করে তাকিয়ে থাকব আল আমিনের দিকে। তার মতো ভেতরে বল আনতে পারে, এমন একটা বোলার দরকার। আল আমিনের ফিল্ডিং ও ক্যাচিং দুর্বলতার কথা মাথায় রেখেই বলছি, ওর মতো বোলারকে আমাদের প্রয়োজন হবে। তাঁর ভেতরে আসা বল ডানহাতি, বাঁহাতি দুই ধরনের ব্যাটসম্যানকেই সমস্যায় ফেলবে। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তামিম ইকবালকে এই টুর্নামেন্টে ভালো খেলতেই হবে। সেটা না হলে তা হবে আমাদের জন্য অনেক বড় ধাক্কা। পরিমিত স্ট্রোক খেললে চার নম্বরে নেমে মাহমুদউল্লাহও আশা করি দলের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। আর সাকিব আল হাসান তো আছেই। তার কাছে প্রত্যাশার কথা নতুন করে না-ই বলি। তবে বাংলাদেশ দলের কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার লক্ষ্য পূরণ তাকিয়ে থাকবে সাকিবের ব্যাট আর বলের দিকেও।
অনুলিখন: তারেক মাহমুদ