তৃতীয় দিনের খেলা শেষে বলেছিলাম, অভাবনীয় কিছু হলেই শুধু এই টেস্টে ফল আসা সম্ভব। তবে সেটি বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বলা, আমাদের দিকে ম্যাচটা আসতে পারে, সে আশা থেকে। কিন্তু ব্যাপারটা যে পুরো ১৮০ ডিগ্রি বিপরীত হয়ে যাবে, সেটি চাইনি স্বাভাবিকভাবেই।
প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসের বিপর্যয়ে আবার সে জায়গাতেই পৌঁছে গেলাম! একই ম্যাচে পরপর দুবার এমন হওয়া খুবই শঙ্কার কথা। টেস্টের এমন পরিস্থিতিতে উচিত ছিল দিনটা শেষ করে আসার চেষ্টা করা। তবে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আক্রমণাত্মক মানসিকতা, একটু বেশি ইতিবাচক থাকার চেষ্টা দেখলাম। নিজেদের কন্ডিশনে, পেসারদের খুব একটা সহায়তা নেই যেখানে, সেখানে ওপরের সারির ব্যাটসম্যানদের এমন ব্যাটিং আসলেই ভাবনার কারণ।
চট্টগ্রামে মুশফিকের ধীরগতির ব্যাটিং নিয়ে হয়তো অনেকে হাসাহাসি করেছে। যারা এমন করেছে, তাদের টেস্ট ক্রিকেট বোঝাটা জরুরি। এখানে অনেক সময় মাথা নিচু করে, মাটি কামড়ে পড়ে থেকে খেলতে হয়। খেলার ওই স্কিল, মানসিকতা, সামর্থ্য থাকাটা জরুরি। সাধারণ মানুষ যা পছন্দ করে—চার, ছক্কা বা সোশ্যাল মিডিয়ায় যা চলে, সব সময় সেসব অনুসরণ করলে চলে না। টেস্টে একজন খেলোয়াড়কে নানা রকম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়, তার ক্যারেক্টারের পরীক্ষা হয়। চট্টগ্রামে আমরা এর আদর্শ উদাহরণ দেখেছি—কারা ইনিংস ধরে রাখতে পারে, কঠিন সময়ে নিজেকে অ্যাপ্লাই করতে পারে।
মুমিনুলকে দেখে আজ খারাপই লেগেছে। ওর উচিত ছিল বলটা ছেড়ে দেওয়া। শান্তর (নাজমুল) রান নেওয়ার তাড়াহুড়াও বুঝে উঠতে পারিনি। আমি নিশ্চিত, টিম ম্যানেজমেন্ট উইকেটে থাকার বার্তাই দিয়েছিল। মুশফিক ও লিটন আবার বিশ্ব রেকর্ড করবে, সবাই হয়তো সেটির আশায় বসে আছে। আমিও অমন আশাই করি। কিন্তু সেটি একটু বেশি আশা হয়ে যায়। সবারই দায়িত্ব নেওয়া উচিত ছিল। ম্যাচ বাঁচাতে যে লড়াকু চরিত্রটার দরকার পড়ে, সেটি দেখানো জরুরি ছিল বেশি। আমাদের স্বনামধন্য কোচরা আছেন, যাঁদের কাজ ব্যাটসম্যান-বোলারদের ভালো করাটা নিশ্চিত করা। টিম ম্যানেজমেন্টেরও তাই একটা দায় নিতে হবে এমন বিপর্যয়ে।
বোলারের বদলে আমরা যে অতিরিক্ত একজন ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলছি, তা এই ইনিংসে ‘ব্লেসিং ইন ডিজগাইজ’ বা শেষ পর্যন্ত আশীর্বাদ হতে পারে। মুশফিক, লিটন, সাকিবের পর এখন মোসাদ্দেকও আছে। সে ভালো ব্যাটসম্যান, আশা করি, ধরে খেলার চেষ্টা করবে। তবে কাল প্রথম সেশনে উইকেট না হারানোটা জরুরি।
প্রথম দিনই দল নির্বাচনের গলদ নিয়ে বলেছিলাম। একজন বোলার কম নিয়ে খেললে কী হতে পারে, তা তো বোঝাই গেল। বড় জুটি হলে, বেশি ওভার মাঠে থাকতে হলে যে বোলারদের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার আশঙ্কার কথা বলেছিলাম। আজ আরেকবার সেটি অনুভূত হলো। দলে একজন অফ স্পিনার না থাকায় আরেকটা যে ঝামেলায় পড়লাম, সেটি একটু ব্যাখ্যা করি। ম্যাথুস ও চান্ডিমালের জুটিটা আমাদের সবচেয়ে বেশি ভোগাল, ওরা দুজনই ডানহাতি। ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ক্রিজের অফ সাইডে যে রাফ প্যাচ বা ফুটমার্ক থাকে, বাঁহাতি স্পিনারদের ক্ষেত্রে সেটি কাজে লাগানোর কোনো সুযোগই থাকে না। ডানহাতি বোলাররা সেখান থেকে বল ভেতরে ঢোকাতে পারে। টেস্ট ক্রিকেটে ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের জন্য সেটিই চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে। এই সুযোগই আমরা নিতে পারিনি।
ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনেও সাকিব সেটিই বলল শুনলাম। তবে এমন উইকেটে বোলারদের খুব দায় দিতে পারছি না। তবে হ্যাঁ, পঞ্চম একজন জেনুইন বোলার না থাকায় ওরা আরও বেশি অনায়াসে খেলতে পেরেছে। তার ওপর আমাদের একজন পেসার বেশ নির্বিষ বোলিং করেছে। ইবাদত অবশ্য আজও ভালো করেছে। খরুচে হলেও উইকেট নেওয়া দরকার ছিল। সেটি নিয়েছে।
তবে বোলারের বদলে আমরা যে অতিরিক্ত একজন ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলছি, তা এই ইনিংসে ‘ব্লেসিং ইন ডিজগাইজ’ বা শেষ পর্যন্ত আশীর্বাদ হতে পারে। মুশফিক, লিটন, সাকিবের পর এখন মোসাদ্দেকও আছে। সে ভালো ব্যাটসম্যান, আশা করি, ধরে খেলার চেষ্টা করবে। তবে কাল প্রথম সেশনে উইকেট না হারানোটা জরুরি।
লিটনের ব্যাটিংয়ে শুরুতে যে জড়তা থাকে, আশা করি, সেটি কাটিয়ে উঠে বড় ইনিংস খেলতে পারবে। আশা করি, মুশফিক আবার চ্যালেঞ্জটা নিতে পারবে। আশা করি, উইকেটটা এমনই থাকবে। প্রথম সেশন উইকেটশূন্য কাটাতে পারলে এই টেস্টও মাথা উঁচু করে শেষ করার একটা সুযোগ আছে।
জয়-পরাজয়ের মতো টেস্ট ম্যাচে ড্রয়েরও একটা তাৎপর্য আছে। টেস্টে চ্যালেঞ্জ নিয়ে দীর্ঘ সময় টিকে থেকে ফিরে আসার মধ্যে একটা কৃতিত্বের ব্যাপার আছে। যদিও আমরা এতে খুব বেশি অভ্যস্ত নই, এখন অসাধারণ কিছুই করতে হবে। তবে লড়াই করে ড্র করার মধ্যে একটা তৃপ্তি আছে, আলাদা একটা সম্মান আছে। আশা করি বাংলাদেশ কাল সে লড়াইটা করতে পারবে।