৫২ বছর বয়সে আপনি কী কী করার কথা ভাবতে পারেন? উত্তর যা-ই হোক, তাতে অন্তত টেস্ট ক্রিকেট খেলার কথা যে থাকবে না, এটি নিশ্চিত করেই বলা যায়।
অথচ উইলফ্রেড রোডস তার ৫৮ টেস্টের সর্বশেষটি খেলতে নেমেছিলেন ৫২ বছর ১৬৫ দিন বয়সে। সেটি ১৯৩০ সালে আজকের এই দিনেই। এটি যে সবচেয়ে বেশি বয়সে টেস্ট খেলার রেকর্ড, তা তো বুঝেই ফেলেছেন। অবিনশ্বর রেকর্ড, এটাও বোধ হয় না বললে চলছে।আধুনিক ক্রিকেটে কেউ ৫০ বছরে টেস্ট খেলার কথা বললে তো তা শুনে হাসতে হাসতে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা!
তবে শুধু 'বুড়ো' বয়সে খেলতে নেমেছিলেন বলেই ক্রিকেট ইতিহাস মনে রাখেনি তাঁকে, উইলফ্রেড রোডস তাঁর খেলোয়াড়ি অর্জনের কারণেই ক্রিকেটের অমর এক কিংবদন্তি। রেকর্ডও তো শুধু এই একটি নয়। শুধুই ক্রিকেটীয় বিবেচনায় এর চেয়ে অনেক বড় রেকর্ডও তাঁর আছে। সেটিও কোনোদিন ভাঙার নয়।
১৮৯৯ সালে প্রথম টেস্ট খেলেছেন, ১৯৩০ সালে শেষ। ফার্স্ট ক্লাস ক্যারিয়ার আরও এক বছর লম্বা (৩২ বছর)। টেস্টে ২টি সেঞ্চুরিসহ ২৩২৫ রান, বাঁহাতি স্পিনে উইকেট ১২৭টি। ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে ৪০ হাজারের বেশি রান, উইকেট ৪২০৪। এর চেয়ে বেশি রান আছে ১৬ জনের। তবে উইকেটের সংখ্যাটা এখনো রেকর্ড এবং এটাকেও নিশ্চিন্তে অবিনশ্বর বলে দেওয়া যায়। চার হাজার উইকেটের মাইলফলক ছোঁয়ার কৃতিত্বই তো নেই আর কোনো বোলারের।
৩৭৭৬ উইকেট নিয়ে নিকটতম আলফ্রেড ফ্রিম্যান রোডসের সময়েই খেলেছেন। খেলা ছেড়েছেন ১৯৩৬ সালে। তিন হাজারের বেশি উইকেটই আছে আর মাত্র দুজনের। চার্লস পার্কার (৩২৭৮) ও টমাস হিয়ার্নের (৩০৬১)। এই চার বোলারের ক্যারিয়ারই কোনো না কোনো বাঁকে একে অন্যের সঙ্গে মিলেছে।
বর্তমানে খেলছেন, এমন বোলারদের কারও ১৫০০ উইকেটই নেই। গত পঁচিশ বছরের মধ্যেই ১৫০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁতে পেরেছেন মাত্র দুজন বোলার। দুজনই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান। কোর্টনি ওয়ালশের ১৮০৭ আর ম্যালকম মার্শালের ১৬৫১ উইকেটের রহস্য লুকিয়ে গ্লস্টারশায়ার ও হ্যাম্পশায়ারের হয়ে দীর্ঘ দিন কাউন্টি ক্রিকেটে খেলায়।
নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, সেই ১৯৩০ সালে খেলা ছেড়ে দেওয়া রোডসের দুটি রেকর্ড কোনোদিনই আর ভাঙার নয়। ১১ নম্বরে ব্যাটিং শুরু করে জ্যাক হবসের ওপেনিং পার্টনার হওয়াটাও রোডসের আরেক অমর কীর্তি। টেস্ট ক্রিকেটে এক থেকে ১১ পর্যন্ত সব পজিশনে ব্যাটিং করার প্রথম উদাহরণও তিনি।
আরেকটি মজার রেকর্ডেও নাম আছে উইলফ্রেড রোডসের। ১৯৩০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রোডসের জীবনের শেষ টেস্টে ইংল্যান্ড দলে বয়সের হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ফেলা আরেকজনও ছিলেন। টেস্টের শেষ দিনে জর্জ গানের বয়স ছিল ৫০ বছর ৩০৩ দিন। এই দুই বুড়ো মিলে আউট করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যান ক্লিফোর্ড রোচকে (ক গান ব রোডস)। বোলার-ফিল্ডারের মিলিত বয়সটা শুনলে চমকে যাবেন। ১০৩ বছর ১০৩ দিন! বছর আর দিন কীভাবে মিলে গেল, তা একটা রহস্য বটে। এটাকে যদি রেকর্ড বলে বিবেচনা করেন, তাহলে অবিনশ্বর রেকর্ডের তালিকায় এটাকেও ঢুকিয়ে দিন।
শেষ বয়সে উইলফ্রেড রোডস চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে পুরোই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তারপরও মাঠে যেতেন, ব্যাটে বল লাগার আওয়াজ শুনেই বলে দিতেন, 'আহা, এটা তো মাঝখানে লাগল না!' কখনো বা হাততালি দিয়ে বলতেন, 'দারুণ কাভার ড্রাইভ!'
কীভাবে বলতেন, তিনিই জানেন। রহস্যময় এই পৃথিবীর কতটুকুই বা আমরা জানি!