১২ বলে ২১ রান দরকার ছিল শ্রীলঙ্কার। কিন্তু ভুবনেশ্বর কুমারের করা ইনিংসের ১৯তম ওভারটা লঙ্কানদের কাজটা সহজ করে দিল একেবারে। দুই ওয়াইডের সঙ্গে দুই চারসহ ওই ওভার থেকেই ১৪ রান নিলেন দাসুন শানাকা ও ভানুকা রাজাপক্ষে। সমীকরণ হয়ে গেলে ৬ বলে ৭ রানের। এরপর আর এই ম্যাচ শ্রীলঙ্কা হারে নাকি!
অর্শদীপের করা শেষ ওভারেও অবশ্য নাটক কম হয়নি। ২ বলে ২ রান দরকার, শানাকা ব্যাটে বল লাগাতে না পারলেও রানের জন্য দৌড় শুরু করেন। ভারতীয় উইকেটকিপার ঋষভ পন্ত থ্রো করেছিলেন, স্টাম্পে তো লাগাতে পারলেনই না, উল্টো ১ রানের জায়গায় ২টি বাই রান হয়ে গেল। ১ বল বাকি থাকতে ৬ উইকেটে ম্যাচ জিতে গেল শ্রীলঙ্কা।
এ জয়ে এশিয়া কাপের ফাইনাল প্রায় নিশ্চিত বলা যায় শ্রীলঙ্কার। আগামীকাল যদি পাকিস্তান হারিয়ে দেয় আফগানিস্তানকে, তাহলে শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান এই দুই দল উঠে যাবে ফাইনালে।
তাড়া করতে নেমে শ্রীলঙ্কা ব্যাট করছিল কোনো চাপ-টাপ পাত্তা না দিয়ে, বড় স্কোরের পেছনে ছুটতে গিয়ে যেভাবে ব্যাট চালাতে হয়, সেভাবেই। দুই ওপেনার কুশল মেন্ডিস-পাতুম নিশাঙ্কা রান তুলেছেন একে অন্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। অর্শদীপ সিং, যুজবেন্দ্র চাহাল কিংবা হার্দিক পান্ডিয়া বল হাতে পাত্তা পাচ্ছিলেন না কেউই। ১১ ওভার শেষেই তাই শ্রীলঙ্কার রান হয়ে যায় ৯৭, উইকেটের ঘরে তখনো শূন্য। ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে উদ্বোধনী জুটিতে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড ততক্ষণে ভেঙে দিয়েছেন মেন্ডিস-নিশাঙ্কা। আগের রেকর্ডটা ছিল ৬৭ রানের, এ বছরই ধর্মশালায়।
ম্যাচটা রং বদলায় ১২তম ওভারে, যুজবেন্দ্র চাহাল নিজের তিন নম্বর ওভারটা করতে আসার পর। প্রথম বলেই ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন নিশাঙ্কা, তাঁর রান তখন ৩৭ বলে ৫২। ওই ওভারের চতুর্থ বলে চারিত আসালাঙ্কাও চাহালের শিকার হলেন কোনো রান করার আগেই। এক ওভার পরে দানুস্কা গুনাতিলকাও ফিরে গেলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনের শিকার হয়ে, মাত্র ১ রান করে।
তবে শ্রীলঙ্কা সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খায় চাহালের শেষ ওভারের প্রথম বলেই কুশল মেন্ডিস এলবিডব্লু হয়ে গেলে। ৩৭ বলে ৪টি চার ও ৩ ছক্কায় ৫৭ রান করা মেন্ডিস রিভিউ নিয়েছিলেন, তবে বড় পর্দায় রিপ্লে দেখার পর আর থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত আসার অপেক্ষার করেননি। শ্রীলঙ্কার রান তখন ৪ উইকেটে ১১০, জিততে দরকার ৩৫ বলে ৬৪ রান। সেখান থেকে ম্যাচ জেতানো জুটি গড়েন দাসুন শানাকা ও ভানুকা রাজাপক্ষে।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ১৩ রান তুলতেই ভারত ২ উইকেট হারালেও অধিনায়ক রোহিত ছিলেন রুদ্রমূর্তিতে। পাওয়ারপ্লের সুবিধা নিয়েছেনই, মাঝের ওভারেও ব্যাট চালিয়ে গেছেন একই গতিতে। ৪১ বলে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ৭২ রানের ইনিংস খেলে রোহিত আউট হলেও বাকিদের জন্য চালিয়ে খেলার মঞ্চটা তৈরি করে দিয়ে যান তিনি। তবে তাঁর পরে ব্যাটিংয়ে নামা সতীর্থরা সেই সুযোগ খুব ভালোভাবে নিতে পারেননি। ঝড় তোলার চেষ্টা করেছেন কেউ কেউ, কিন্তু ইনিংস বড় হয়নি কারোরই। না হলে ২০ ওভার শেষে ৮ উইকেটে ১৭৩ না হয়ে ভারতের স্কোরটা আরও বড়ই হতে পারত।
মারতে গিয়ে দ্রুত ফিরে গেছেন লোকেশ রাহুল ও বিরাট কোহলি। রাহুল ক্রিজ ছেড়ে এসে মহীশ তিকশানাকে লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে বিভ্রান্ত হন অবিশ্বাস্য ড্রিফটে। এলবিডব্লু থেকে বাঁচতে রিভিউ নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি তাঁর। আর কোহলি তো আড়াআড়ি ব্যাট চালিয়ে বোল্ড হন বাঁহাতি পেসার দিলশান মাদুশঙ্কার বলে।
এরপর জুটি গড়েন রোহিত-সূর্যকুমার। আইপিএলে দুজনই খেলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়ে। বোঝাপড়াও তাই আগে থেকেই ভালো দুজনের। কালও দুজনের জুটিতে ৫৮ বলে আসে ৯৭ রান। রোহিত চালিয়ে খেলেছেন, সূর্যকুমার প্রান্ত বদল করে তাঁকে স্ট্রাইক দিয়ে গেছেন। ১৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে পাতুম নিশাঙ্কার ক্যাচ বানিয়ে রোহিতকে ফেরান চামিকা করুনারত্নে। এর ২ ওভার পরে ২৯ বলে ৩৪ রান করে সূর্যকুমারও ফেরেন দাসুন শানাকার শিকার হয়ে। এরপর আর ছন্দটা ধরে রাখতে পারেননি হার্দিক পান্ডিয়া, ঋষভ পন্তরা। নতুন বলে কোহলির স্টাম্প উড়িয়ে দেওয়া মাদুশঙ্কা ডেথ ওভারে এসেও ফুল লেংথে বল করে আউট করেছেন পান্ডিয়া-পন্তকে। ভারতের রানটা ১৮০ ছাড়ানোর আশা শেষ হয়ে যায় আসলে তখনই।