ডুপ্লান্টিসের কাছেও যে সাফল্য বাস্তব মনে হচ্ছে না
লম্বা পোল হাতে দৌড় শুরু করলেন তিনি। ৬ মিটার উচ্চতা পেরিয়ে প্যারিস অলিম্পিকের সোনা আগেই নিশ্চিত করেছেন, ৬ দশমিক ১০ মিটার উচ্চতা পেরিয়ে গড়ে ফেলেছেন অলিম্পিক রেকর্ডও। এবার লক্ষ্য ৬ দশমিক ২৫ মিটার উচ্চতা পেরিয়ে যাওয়া। স্তাদ দে ফ্রান্সের চারদিক তখন ‘মোন্দো, মোন্দো’ স্লোগানে মুখরিত। স্লোগানের তালে তালেই যেন পোল হাতে দৌড়াচ্ছিলেন আরমান্দ ‘মোন্দো’ ডুপ্লান্টিস। হাতের পোলটার সামনের প্রান্তটা জুতসই জায়গায় ঠেকা দিয়ে আকাশের দিকে উঠছিলেন তিনি। চারদিকটা তখন আবার খানিক স্তব্ধ, সবার বুকের মধ্যেই হয়তো ‘ঢিপ, ঢিপ’ করছিল, ডুপ্লান্টিস পারবেন তো!
ডুপ্লান্টিস পেরেছেন, ৬ দশমিক ২৫ মিটার ওপরে তোলা বারটা পেরিয়ে ওপারে পড়লেন ঠিকঠাকভাবে। চারদিক আবার মুখরিত—মোন্দো, মোন্দো, মোন্দো! স্তাদ দে ফ্রান্সের দর্শক কতবার ডুপ্লান্টিসের নাম নিয়েছিল, কে জানে। কিন্তু এক নয়, দুই নয়, তিন নয়...এই নিয়ে গুনে গুনে নয়বার বিশ্ব রেকর্ড ভাঙলেন ডুপ্লান্টিস। সর্বশেষ বিশ্ব রেকর্ডটাও তাঁরই ছিল, এ বছরের এপ্রিলে শিয়ামেন ডায়মন্ড লিগে যেটা গড়েছিলেন ৬ দশমিক ২৪ মিটার উচ্চতা অতিক্রম করে।
ঐতিহাসিক এ লাফে দুর্দান্ত কীর্তি গড়ার পর নিজেরই যেন বিশ্বাস হচ্ছে না ডুপ্লান্টিসের। উচ্ছ্বাসে ভেসে যাচ্ছিলেন সুইডিশ পোল ভল্টার। নবমবারের মতো বিশ্ব রেকর্ড গড়ে প্যারিস অলিম্পিকে পোল ভল্টের সোনা জিতে তিনি বলেছেন, ‘এ মুহূর্তটা কতটা দারুণ ছিল, তা আমি এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। এটা এমন বিষয়গুলোর একটি, যা কিনা আমার কাছে বাস্তব বলে মনে হয় না। অভিজ্ঞতাটা এ রকম যে মনে হয় অন্য কেউ আমার ওপর ভর করেছিল।’
এর আগে আটবার বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন। কিন্তু এবারের বিশ্ব রেকর্ডটার স্বাদ তাঁর কাছে খুবই বিশেষ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া উৎসব অলিম্পিকে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে পারা বলে কথা! লাফ শেষ করে সোনা জয়ের উচ্ছ্বাসের মধ্যেই ডুপ্লান্টিস বললেন, ‘আমি আর কী বলতে পারি? মাত্রই একজন পোল ভল্টারের জন্য সম্ভাব্য সবচেয়ে বড় মঞ্চ অলিম্পিকে বিশ্ব রেকর্ড ভাঙলাম। অলিম্পিকে বিশ্ব রেকর্ড ভাঙার স্বপ্ন শৈশব থেকেই আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন।’
সবচেয়ে বড় স্বপ্নটা পূরণের পথে স্নায়ুচাপ যে কম ছিল, সেটা তো নয়। স্তাদ দে ফ্রান্সের এত এত দর্শকের প্রায় সবাই যে তাঁর নামে স্লোগান দিচ্ছিল, সেটা কি তাঁর বুকের মধ্যে ‘ঢিপ, ঢিপ’ শব্দটা বাড়ায়নি! সেই মুহূর্তে নিজেকে কীভাবে ঠিক রেখেছেন? ডুপ্লান্টিসের সহজ উত্তর, ‘আমার পক্ষে যতটা সম্ভব ছিল, আমি নিজের চিন্তাটা পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করেছি। দর্শক উন্মাতাল হয়ে গিয়েছিল। এত শব্দ হচ্ছিল যে আমার কাছে মনে হয়েছে, এটা আমেরিকান কোনো ফুটবল ম্যাচের মতো।’
ডুপ্লান্টিস এখানেই থামেননি। সেই মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে ২৪ বছর বয়সী পোল ভল্টার বলেছেন, ‘এক লাখ ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামে (প্রতিযোগিতায় নামার) নামার অভিজ্ঞতা আমার খুবই কম। কিন্তু আমি এভাবে আকর্ষণের কেন্দ্রে কখনোই ছিলাম না। সবাই আমাকে যে শক্তিটা জোগাচ্ছিল, আমি শুধু সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। তারা আমাকে অনেক শক্তি জুগিয়েছে, এটা কাজে লেগেছে।’
ভক্ত–সমর্থকদের জোগানো এ শক্তি ও সাহস কাজে লাগিয়ে টানা দুটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ও দুটি অলিম্পিক সোনা জিতলেন ডুপ্লান্টিস। তবে প্যারিস অলিম্পিকে জেতা ডুপ্লান্টিসের সোনার পদকটিই হয়তো বেশি মনে থাকবে অ্যাথলেটিকসপ্রেমীদের। বিশেষ করে তাঁর ৬ দশমিক ২৫ মিটার উচ্চতা পেরোনো লাফটি যুগ যুগ গেঁথে থাকবে মানুষের চোখে, মনে। এ দৃশ্য যে সত্যিই অবিস্মরণীয়।