২১ শতকে গোল করা ও করানোয় যাঁরা এগিয়ে
প্রায় দুই দশক ধরে ফুটবল–দুনিয়াকে শাসন করেছেন লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। দলের হয়ে লড়াই করার পাশাপাশি এ দুজনের ব্যক্তিগত দ্বৈরথও কিংবদন্তিতুল্য। লড়াই অবশ্য এখনো শেষ হয়ে যায়নি। ইউরোপের বাইরে আলাদা আলাদা লিগে ভিন্ন এক লড়াই লড়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
দুটি অপরিচিত লিগকে বৈশ্বিক পরিচিতি এনে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ যে এখন তাঁদের কাঁধে। সে সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিসংখ্যানের টালি খাতাটা সমৃদ্ধ করার বিষয়টি তো আছেই। ২১ শতকে গোল করা আর করানোয় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর চেয়ে এগিয়ে আছেন লিওনেল মেসি।
লিওনেল মেসি
১১৭৪ (গোল ৮১৭, সহায়তা ৩৫৭)
ফুটবল ইতিহাসে সম্ভাব্য প্রায় সব শিরোপাই জিতেছেন লিওনেল মেসি। বিশ্বকাপ নিয়ে যে আক্ষেপ ছিল, সেটাও ক্যারিয়ারের গোধূলি লগ্নে এসে ঘুচিয়েছেন মেসি। ইউরোপে ট্রফি জয়ের বৃত্ত পূরণ করেছেন আগেই। বছরের পর বছর ধরে ব্যক্তিগত অর্জনের ঝুলিও হয়েছে পূর্ণ। মেসি ব্যালন ডি’অরই জিতেছেন ৭ বার। ২০০৩ সালে পেশাদার ফুটবলে অভিষেকের পর থেকে মেসি নিজে যেমন গোল করে গেছেন, তেমনি সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন দারুণ সব গোল।
তবে এই শতকে গোল করায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রোনালদোর চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে মেসি। রোনালদোর ৮৪৭ গোলের বিপরীতে মেসির গোল ৮১৭টি। কিন্তু গোল করানোয় মেসি বেশ ভালোভাবেই পেছনে ফেলেছেন রোনালদোকে। মেসির গোলে সহায়তা ৩৫৭, রোনালদোর ২৩৭। অর্থাৎ মেসি রোনালদোর চেয়ে ১২০টি বেশি গোল করিয়েছেন, যা সম্মিলিতভাবে গোল ও সহায়তা মিলিয়ে শীর্ষ তুলে দিয়েছে মেসিকে।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
১০৮৪ (গোল ৮৪৭, সহায়তা ২৩৭)
গোলে সহায়তায় পিছিয়ে থাকার কারণেই এ তালিকায় মেসিকে টপকাতে পারেননি রোনালদো। তবে হিসাবটা যদি গোলের করা হয়, তাহলে মেসির চেয়ে এগিয়ে থাকবেন রোনালদোই। মেসির চেয়ে ৩০ গোল বেশি করেছেন পর্তুগিজ উইঙ্গার। ৩৮ পেরোনো রোনালদো ইউরোপে তাঁর যাত্রা শুরু করেছিলেন স্পোর্তিং লিসবনের হয়ে।
এরপর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ আর জুভেন্টাসের মতো শীর্ষ ক্লাবে খেলেছেন ‘সিআর সেভেন’। জাতীয় দলের হয়েও সবচেয়ে বেশি গোল ম্যাচ খেলার রেকর্ডও তাঁর। চ্যাম্পিয়নস লিগেও সবচেয়ে বেশি গোলের মালিক রোনালদো। ইউরোপ ছেড়ে কদিন আগে রোনালদো পাড়ি জমিয়েছেন সৌদি আরবে। তাঁর জাদুতেই সৌদি ফুটবল যেন রাতারাতি বদলে গেছে। সেখানেও নিয়মিত গোল করে চলেছেন এই পর্তুগিজ তারকা। ২০০০ সালের পর গোল করা ও গোলে সহায়তা মিলিয়ে ২ নম্বরেই আছেন রোনালদো।
রবার্ট লেভানডফস্কি
৭৯২ (৬৩৬ গোল, সহায়তা ১৫৬)
কিছুদিন আগেও ৩ নম্বর স্থানটি ছিল লুইস সুয়ারেজের দখলে। কিন্তু তাঁকে পেছনে ফেলে এখন তিনে উঠে এসেছেন রবার্ট লেভানডফস্কি। পোলিশ এই স্ট্রাইকার বায়ার্ন মিউনিখে খেলার সময়ই পেয়েছিলেন গোলমেশিন তকমা। বায়ার্নের হয়ে ম্যাচের পর ম্যাচে গোল করে এনে দিয়েছেন দারুণ সব শিরোপা। তবে গোল ও গোলে সহায়তা হিসাব করলে মেসি ও রোনালদোর চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে ৩৫ বছর বয়সী পোলিশ স্ট্রাইকার। যদিও দুটি মিলিয়ে ৭৯২ গোলের এই হিসাব তাঁকে এই তালিকার ৩ নম্বরে জায়গা করে দিয়েছে। যেখানে ৬৩৬ গোলের সঙ্গে আছে ১৫৬টি সহায়তাও।
লুইস সুয়ারেজ
৭৯০ (৫৪৩ গোল, সহায়তা ২৪৭)
লিওনেল মেসির সঙ্গে জুটি বেঁধে বার্সেলোনাকে ম্যাচের পর ম্যাচ জিতিয়েছেন লুইস সুয়ারেজ। জাতীয় দলের হয়েও ছিলেন দারুণ উজ্জ্বল। একপর্যায়ে নিজেকে সময়ের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেছেন সুয়ারেজ। ৩৬ বছর পেরিয়ে এখনো মাঠে নামলে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারের বড় হুমকি ছড়ান এই উরুগুইয়ান তারকা। গোল ও অ্যাসিস্ট মিলিয়ে তিনি আছেন তালিকার ৪ নম্বরে। ৫৪৩ গোলের সঙ্গে আছে ২৪৭ অ্যাসিস্টও।
জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ
৭৮৯ (৫৭৩ গোল, সহায়তা ২১৬)
বলা হয়, সেরা ফুটবলার হয়তো অনেকেই আসবেন, কিন্তু তাঁর মতো কেউ আসবেন না। জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ এমনই একজন। পেশাদার ফুটবলকে সম্প্রতি বিদায় জানানো সুইডিশ কিংবদন্তি ইব্রাহিমোভিচ ছিলেন মাঠ ও মাঠের বাইরে বর্ণিল এক চরিত্র। গোল করা এবং করানোতে সিদ্ধহস্ত এই ছিলেন এই তারকা ফুটবলার। ২১ শতকে ৫৭৩টি গোল করার পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেছেন ২১৬ গোলে। সব মিলিয়ে ৭৮৯ গোল নিয়ে তালিকার ৫ নম্বরে জায়গা পেয়েছেন ইব্রা।
এই পাঁচজন ছাড়া এ তালিকায় সেরা দশে জায়গা পেয়েছেন নেইমার, করিম বেনজেমা, থিয়েরি অঁরি, রাউল গঞ্জালেস ও স্যামুয়েল ইতো।