৫ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা যে বুদ্ধিতে আদায় করলেন ফেদেরার

টেনিসে সবচেয়ে বেশি আয় করেন ফেদেরারছবি: রয়টার্স

পৃথিবীর ইতিহাসে মাত্র ছয়জন খেলোয়াড় ক্যারিয়ারে ১০০ কোটি ডলার আয় করেছেন। টেনিস থেকে সে কাজ প্রথম করেছেন রজার ফেদেরার। অথচ ২০১৮ সালের পর থেকেই কোনো গ্র্যান্ড স্লাম জিততে পারছেন না ফেদেরার। চোটের কারণে গত দুই বছর সব কটি গ্র্যান্ড স্লামও খেলা হয়নি তাঁর। কিন্তু আয়ে এর কোনো প্রভাবই পড়েনি। কীভাবে?

খেলার দুনিয়ার ব্যবসা ও আর্থিক দিকগুলো বিশ্লেষণ করাটাই ধ্যানজ্ঞান জো পমপ্লিয়ানোর। প্রতিদিন খেলার দুনিয়ার কোনো না কোনো চমকপ্রদ আর্থিক গল্প তুলে ধরেন তাঁর নিজের ওয়েবসাইটে। সেখানেই প্রথম কোনো পুরুষ খেলোয়াড় হিসেবে ২০টি একক গ্র্যান্ড স্লাম জেতা ফেদেরারের আর্থিক বিচক্ষণতা নিয়ে লিখেছেন। কীভাবে বার্ষিক ১ কোটি ডলার আয়ের চুক্তি করতে না পারা ফেদেরার ৬০ কোটি ডলারের নিশ্চিত আয়ের ব্যবস্থা করলে, চলুন সে গল্প জেনে নেওয়া যাক—

নাইকির পর ইউনিক্লোকেই স্পনসর হিসেবে পেয়েছেন ফেদেরার
ছবি: রয়টার্স

২০১৮ সালে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছিল ফেদেরারকে। ক্রীড়াসামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নাইকির সঙ্গে ২০ বছরের বেশি চুক্তি ছিল ফেদেরারের। কিন্তু ২০১৮ সালে যখন স্পনসরশিপের চুক্তি নবায়ন করতে গেলেন, তখন ব্যাপারটা একটু ঘোঁট পাকাল। নাইকির সঙ্গে টেনিস–বিশ্বের অনেক বড় তারকারই চুক্তি ছিল। সেরেনা উইলিয়ামস, রাফায়েল নাদাল, মারিয়া শারাপোভা ও নিক কিরিয়সের মতো পরিচিত সব নামই তখন নাইকির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। আর স্পনসরশিপের দুনিয়ায় অলিখিত একটি নিয়ম আছে, খেলোয়াড়দের পৃষ্ঠপোষকতার পেছনে কখনো আয়ের ১০ শতাংশের বেশি খরচ করা যাবে না।

নাইকি নিজেদের সে সীমা অতিক্রম করেনি। ৩৬ বছর বয়সী ফেদেরারের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করে দিল নাইকি। ফল? ফেদেরার সবাইকে চমকে দিলেন, পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইউনিক্লোর সঙ্গে চুক্তি করলেন। ১০ বছরের চুক্তিতে ৩০ কোটি ডলারের চুক্তি। নাইকি বছরে যে এক কোটি ডলার দিত, তার তিন গুণ! কিন্তু গল্পের বাকি এখনো অনেক।

ফেদেরারের মাথায় এখনো ইউনিক্লো শোভা পায়
ছবি: রয়টার্স

ইউনিক্লোর সঙ্গে চুক্তিতে বিশেষ দুটি শর্ত ছিল। এক, এখানে কোনো অবসরের শর্ত ছিল না। মানে অবসর নিয়ে ফেললেও সমস্যা নেই, ৪৬ বছর পর্যন্ত বছরে ৩ কোটি ডলার পাবেন ফেদেরার। দুই, চুক্তি শুধু কাপড়ের জন্য ছিল, তাতে জুতার কোনো উল্লেখ ছিল না।

জুতার কোনো স্পনসর না থাকলে ফেদেরার নাইকিই পরতেন। কিন্তু একদিন অনুশীলনে ‘অন রানিং’ ব্র্যান্ডের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। ফেদেরার একটা বড় বাজি ধরেন। নিজের দেশ সুইজারল্যান্ডের এই ব্র্যান্ডের শুধু শুভেচ্ছাদূতই হলেন না, এর মালিকানারও কিছুটা কিনে নিলেন। সবকিছু মিলিয়ে এই ব্র্যান্ডের ৩ শতাংশের মালিক হয়ে গেলেন রজার ফেদেরার। মজার ব্যাপার? দুই বছর পরই এই ব্র্যান্ড শেয়ার মার্কেটে চলে এসেছে এবং বর্তমানে এই ব্র্যান্ডের বাজারমূল্য এক হাজার কোটি ডলার।
এর মানে এই কোম্পানিতে ফেদেরারের যে অংশীদারত্ব, তার মূল্য এখন ৩০ কোটি ডলার।

সুইস ব্র্যান্ড অন-এ অংশীদারত্ব আছে ফেদেরারের
ছবি: রয়টার্স

অর্থাৎ ২০১৮ সালে নাইকির সঙ্গে ফেদেরারের চুক্তি ছিল বছরে ১ কোটি ডলারের। সে চুক্তি না হওয়ায় ফেদেরার এমন দুটি সিদ্ধান্ত নিলেন, যার বর্তমান মূল্য ৬০ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মূল্যমানে যা ৫ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। ৪০ বছর বয়সী একজন খেলোয়াড় বিবেচনায় মন্দ নয়!

খেলোয়াড় দুনিয়ায় অনন্য এক ব্র্যান্ড সৃষ্টি করেছেন ফেদেরার। গত বছর মাত্র একটি টুর্নামেন্ট খেলেছেন ফেদেরার, তবু এই বছরে ৯ কোটি ডলার আয় করেছেন। বিশ্বে সব ধরনের খেলা মিলেই তাঁর চেয়ে বেশি আয় করেছেন মাত্র ছয়জন। এই ৯ কোটি ডলারের মাত্র ৩ লাখ ডলার হচ্ছে টেনিস থেকে প্রাপ্ত আয়।

ফেদেরারের এমন আর্থিক দূরদর্শিতা অবশ্য মানুষের উপকারে লাগছে। আফ্রিকাতে ৮০টির বেশি স্কুল খুলতে এর মধ্যে দেড় কোটি ডলারের বেশি খরচ করেছেন তিনি। করোনার সময়টায় ৬৪ হাজার আফ্রিকান শিশু যেন ক্ষুধার্ত না থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে ১০ লাখ ডলার ব্যয় করেছেন।