৪ ঘন্টা ২০ মিনিটের রোমাঞ্চ শেষে নাদালই জয়ী

২৩তম গ্র্যান্ড স্লামের স্বপ্ন এখনো উজ্জ্বল নাদালেরছবি: রয়টার্স

: কীভাবে সম্ভব হলো এই জয়?

: আমি নিজেও জানি না!

কী সরল স্বীকারোক্তি রাফায়েল নাদালের! ৪ ঘন্টা ২০ মিনিটের লড়াইয়ে চোটের সঙ্গে যুঝেছেন, ভুগেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী টাইলার ফ্রিটজের দারুণ গতির সার্ভ আর তারুণ্যের সঙ্গে লড়াইয়ে। ৩৬ বছর বয়সী শরীরটা এখন আগের মতো সায় দিতে চায় না, কিন্তু মনের জোরে রাফায়েল নাদালকে হার মানাতে পারেন কজন!

টাইলার ফ্রিটজ আজ উইম্বলডনের কোয়ার্টার ফাইনালে আরেকবার সেটি টের পেলেন। দুবার এগিয়ে গিয়েও নাদালকে হারানো হলো না ২৪ বছর বয়সী মার্কিন তরুণের। ৩-৬, ৭-৫, ৩-৬, ৭-৫, ৭-৬ (১০/৪) গেমে জিতে সেমিফাইনালে উঠে গেছেন নাদাল।

শুরুটাই নাদাল করেছেন ফ্রিটজের সার্ভিস ব্রেক করে। দুই গেম যেতে না যেতে নাদাল ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে। তখন তো মনে হচ্ছিল, ১১তম বাছাই যুক্তরাষ্ট্রের তরুণকে হয়তো হেসেখেলেই হারিয়ে দেবেন নাদাল।

কিন্তু ভাবনায় জল ঢেলে উল্টো ভেলকি দেখালেন ফ্রিটজ। ষষ্ঠ ও অষ্টম গেমে পরপর দুবার নাদালের সার্ভিস ব্রেক করে সেটের হিসাবই উল্টে দিলেন। যে সেটে নাদাল ২-০ গেমে এগিয়ে ছিলেন, সেটিই ফ্রিটজ উল্টো জিতে গেলেন ৬-৩ গেমে।

দ্বিতীয় সেটের শুরুতে আবার প্রথম সেটের কপি-পেস্ট। নিজের সার্ভ জেতার পর ফ্রিটজের সার্ভিস ব্রেক করে দুই গেম পর ২-০ গেমে এগিয়ে নাদাল। তিন গেম পর হলো ৩-০। কিন্তু এরপর আবার ফ্রিটজের ফেরা। পঞ্চম গেমে নাদালের সার্ভিস ব্রেক করে ম্যাচে ফিরলেন, একটু পর ৩-৩ সমতা!

কিন্তু সপ্তম গেম জিতে ৪-৩ করেই নাদাল আর কোর্টে থাকতে পারলেন না। পেটের ব্যথা ভোগাচ্ছিল আরও আগ থেকেই, 'মেডিক্যাল টাইমআউট' নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। কোর্টে তখন শঙ্কা, নাদাল খেলতে পারবেন তো!

না জিতলেও ম্যাচটা অনেক কিছু শেখাবে ফ্রিটজকে
ছবি: রয়টার্স

নাদাল খেললেন, সেটটা সমতায় শেষ হওয়ার পর টাইব্রেকারে জিতে ম্যাচে সমতাও ফেরালেন। পরের দুই সেটেও গল্পটা অনেকটা একই ছাঁচে লেখা। এই দুই সেটে জয়-হারের ব্যবধানটা থাকল আগের দুই সেটের মতো। পেটের ব্যথায় ভোগা নাদালকে দেখে ক্লান্ত লাগছিল, পয়েন্টের নিষ্পত্তিও তাই হচ্ছিল দ্রুতই। তবু হারতে হারতেও শেষ পর্যন্ত হার না মেনে ম্যাচটাকে পঞ্চম সেটে নিয়ে যান নাদাল।

সেখানে কী হলো? রক্তের ঘ্রাণ পাওয়া হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়লেন নাদাল। রেকর্ড ২২টি গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের অভিজ্ঞতার সামনে একটু নড়বড়েই লেগেছে এর আগে কখনো কোনো গ্র্যান্ড স্লামের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে না পারা ফ্রিটজকে।

বারে বারে ভুল করেছেন। কখনো নাদালকে কুপোকাত করার সহজ সুযোগ পেয়েও শট মেরেছেন নেটে, তো কখনো শটে জোরটা একটু বেশি হয়ে যাওয়ায় বল পড়েছে কোর্টের বাইরে। একটা পর্যায়ে পরিসংখ্যান এল, পঞ্চম সেটে নাদালের আনফোর্সড এরর যখন ৫, ফ্রিটজের ততক্ষণে সংখ্যাটা দুই অঙ্কে।

তবু পাগলাটে ম্যাচটাতে কীভাবে যেন সেট ৬-৬ সমতায় শেষ। কতটা পাগলাটে? সপ্তম গেমে নাদাল ফ্রিটজের সার্ভিস ব্রেক করেছেন, তার পরের সেটে আবার পাল্টা নিলেন ফ্রিটজ! ৬-৬ সমতায় শেষ সেট, হয়তো টাইব্রেকারেই এই ম্যাচের নিষ্পত্তিই যথার্থ ছিল। কিন্তু সেখানে আর পাত্তাই পেলেন না ফ্রিটজ! ১০-৪ গেমের সহজ জয় নাদালের।