২৬ তলা থেকে লাফ দিতে চেয়েছিলেন তিনি
ইয়েলেনা ডকিচ—নামটা শুনলেই ১৯৯৯ উইম্বলডন মনে পড়তে পারে। ১৬ বছর বয়সে উইম্বলডনে পা রেখে হারিয়েছিলেন তখনকার র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ খেলোয়াড় মার্টিনা হিঙ্গিসকে। বাছাইপর্ব পেরিয়ে আসা কোনো খেলোয়াড়ের কাছে র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ কারও হারার সেটাই একমাত্র নজির হয়ে আছে উইম্বলডনে।
কোর্টের বাইরেও সাহসের পরিচয় দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই টেনিস তারকা। বাবা এবং কোচ দামির ডকিচের পরামর্শে ২০০০ সালে জাতীয়তা পাল্টানোর পাশাপাশি বাবার কাছে যে শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচারিত হয়েছেন, সে কথাও নিজের আত্মজীবনী ‘আনব্রেকবল’ বইয়ে জানান ডকিচ।
মানসিকভাবে শক্তিশালী এই মেয়েটিই গত এপ্রিলে ভেঙে পড়েছিলেন। আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন!
নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে আজ একটি পোস্ট করেন ৩৯ বছর বয়সী সাবেক এই টেনিস তারকা। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, ‘কষ্ট ও মানসিক ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে’ গত এপ্রিলে তিনি ২৬ তলা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন।
ক্রোয়েশিয়ার ওসিজেকে জন্ম নেওয়া ডকিচ সাবেক যুগোশ্লোভিয়ার হয়েও খেলেছেন। ২০০২ সালে ডব্লিউটিএ র্যাঙ্কিংয়ে সর্বোচ্চ চতুর্থস্থানে উঠে আসা এই সাবেক খেলোয়াড় পোস্টে নিজের কান্নাভেজা একটি ছবিও পোস্ট করেন। অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মানসিকভাবে খুব বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন ডকিচ।
ইনস্টাগ্রামে দীর্ঘ পোস্টে ডকিচ লিখেছেন, ‘আত্মহত্যা করতে নিজের ২৬ তলার (বাসার) বারান্দা থেকে আমি প্রায় লাফ দিয়েই বসেছিলাম। দিনটা আমি কখনো ভুলব না। সবকিছুই ঝাপসা লাগছিল, অন্ধকার। কিছুই ভালো লাগছিল না...শুধু অশ্রু, দুঃখ, হতাশা, শঙ্কা ও কষ্ট। গত ছয় মাস আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। প্রায় সব সময়ই কেঁদেছি। কর্মক্ষেত্রে বাথরুমে গিয়ে কেঁদেছি যেন কেউ দেখতে না পারে, বাসায় চার দেয়ালের মাঝে প্রায় সব সময়ই কেঁদেছি। অহর্নিশ এই দুঃখ-কষ্ট দূর করতে পারছি না, জীবনটা বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। নিজেকেই দোষারোপ করি। নিজেকে ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য বলে মনে হয় না। আমি ভীত।’
ডকিচ একই পোস্টে জানিয়েছেন, মানসিক সমস্যা কাটিয়ে উঠে তিনি এখন ‘ভালো হয়ে ওঠার পথেই আছেন।’ তবে এই পোস্টেই ডকিচ জানিয়েছেন, সামনে এখনো অনেক পথ বাকি, অনেক কিছু করার বাকি—এটা বোঝার পরও নিজেকে তিনি ঘৃণা করতে শুরু করেন। আত্মহত্যার সিদ্ধান্তটা ছিল তারই ফল। পোস্টে ডকিচ লিখেছেন, ‘ফল: ২৮ এপ্রিল ২৬ তলা থেকে আরেকটু হলেই লাফ দিয়ে বসতাম। দিনটা কখনো ভুলব না। আমি শুধু সব ব্যথা-বেদনা থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলাম। নিজেকে কোনোভাবে (ছাদের) কোণ থেকে তুলে এনেছি। কীভাবে এটা সম্ভব হয়েছে বলতে পারব না। পরে পেশাদাররা এসে জীবন বাঁচিয়েছে।’
আত্মহত্যার চেষ্টা করার এই স্বীকারোক্তি দেওয়ার পেছনের কারণও পোস্টে ব্যাখ্যা করেছেন ডকিচ, ‘আমি এটা লিখছি কারণ আমি জানি আমার মতো আরও অনেকেই আছেন। মনে রাখবেন, আপনি একাই এই ভোগান্তি পোহাচ্ছেন না। নিজে যে খুব ভালো আছি তা বলব না, তবে আমি অবশ্যই সুস্থ হয়ে ওঠার পথেই আছি। আমি লড়াই করছি। আশা করি এই সমস্যা পার হতে পারব। নিজের দুঃখ-কষ্ট ভাগ করে নিতে কখনো লজ্জা পাবেন না। নিজের ওপর আস্থা রাখুন। আমি আগের চেয়েও আরও ভালোভাবে ফিরব।’
২০১৪ সালে পেশাদার টেনিস ছাড়েন ডকিচ। ২০০০ সালে উইম্বলডনের সেমিফাইনালে ওঠাই গ্র্যান্ড স্লামের এককে তাঁর সর্বোচ্চ সাফল্য। খেলা ছাড়ার পর কোচিং ও ধারাভাষ্য দেওয়ার পাশাপাশি লেখালেখিও করেছেন ডকিচ।
তাঁর পোস্টে করা মন্তব্যে অনেকেই ডকিচকে শক্তি ও সাহস জুগিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন সাইক্লিস্ট অ্যানা মেয়ারেস মন্তব্য করেন, ‘তুমি নিজেই নিজের জন্য যথেষ্ট। নিজের ওপর একটু দয়া করো, তুমি না পারলে কে পারবে? আমরা তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে আমাদের প্রয়োজন।’