তাঁর প্রতিভা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু বড় প্রশ্ন আছে আচরণ নিয়ে।
তাঁরই দেশের উইম্বলডনজয়ী সাবেক খেলোয়াড় প্যাট ক্যাশ স্পষ্ট করেই বলেছেন, নিক কিরিওসের আচরণে টেনিসের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
প্রসঙ্গ যখন কিরিওস, তখন বিষয়টি অস্বাভাবিক কিছু নয়। কোর্টে অনেকবারই বিতর্কিত আচরণের জন্য সমালোচিত হয়েছেন ২৭ বছর বয়সী এই অস্ট্রেলিয়ান। কোর্টের বাইরে দর্শকদের সঙ্গেও বাজে ব্যবহারের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন।
এবার কিরিওস অভিযুক্ত হয়েছেন উইম্বলডনের তৃতীয় রাউন্ডে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী স্তেফানোস সিৎসিপাসের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করার জন্য। গ্রিক তারকা সিৎসিপাসও অবশ্য পার পাননি। কাল তাঁরও শাস্তি হয়েছে। অখেলোয়াড়সুলভ আচরণের জন্য ১০ হাজার ডলার জরিমানা দিতে হবে তৃতীয় রাউন্ডে কিরিওসের কাছে ৬–৭ (২), ৬–৪, ৬–৩, ও ৭–৬ (৭) হেরে যাওয়া সিৎসিপাসকে।
গত শনিবার অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে একবার মেজাজ হারিয়ে গ্যালারিতে দর্শকদের দিকে বল মেরেছেন, আরেকবার কিরিওস আন্ডারআর্ম সার্ভ করার পর ফিরতি শটটি খুব জোরে মেরেছেন ব্যাকবোর্ডে। দুবারই চেয়ার আম্পায়ারের কাছ থেকে মৌখিক সতর্কবার্তা পান সিৎসিপাস। যদিও কিরিওসের দাবি ছিল, সিৎসিপাসকে ‘ডিফল্ট’ (বহিষ্কার) করা হোক।
গ্রিসের চতুর্থ বাছাই সিৎসিপাস প্রথমবার গ্যালারিতে বল মারার পর থেকে ম্যাচের বাকি সময় পর্যন্ত চেয়ার আম্পায়ার দামিয়েন দুমুসইস ও অন্য অফিশিয়ালদের কাছে কিরিওস তাঁকে ‘ডিফল্ট’ করার দাবি করে গেছেন। চার হাজার ডলার জরিমানা দিতে হয় এই অস্ট্রেলিয়ানকে। অনেকের কাছেই বাজে মনে হয়েছে সিৎসিপাসকে করা কিরিওসের একটি মন্তব্য।
গ্রিক তারকা একটি ভুল শট খেলার পর তাঁকে উপহাস করে বলেছেন, ‘সুন্দর শট’! সিৎসিপাসও ছেড়ে কথা বলেননি। ম্যাচ শেষে কিরিওসকে ‘ষণ্ডা’ এবং তাঁর চরিত্রে ‘শয়তানি’ আছে বলেও মন্তব্য করেন সিৎসিপাস। উত্তেজনা ছড়ানো এ ম্যাচে দুজনে মিলে শেষ পর্যন্ত উইম্বলডনে এ বছর একক ইভেন্টের ম্যাচে যৌথভাবে সর্বোচ্চ জরিমানা দেওয়ার শাস্তি পেয়ে কোর্ট ছেড়েছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টাইমস’ জানিয়েছে, চতুর্থ রাউন্ডে ওঠা পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার ডলার আয় করেছেন কিরিওস। এর মধ্য শুধু জরিমানা হিসেবেই তাঁর পকেট থেকে খসল ১৪ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৩ লাখ টাকা)। এবার উইম্বলডনে প্রথম রাউন্ডে এক দর্শকের প্রতি থুতু মেরে ১০ হাজার ডলার জরিমানা গুনেছেন কিরিওস। সেখান থেকে শিক্ষা নিতে না পারায় আবার জরিমানা গুনতে হলো। তৃতীয় রাউন্ড পর্যন্ত প্রাইজমানি হিসেবে ১ লাখ ৪৫ হাজার ডলার কামিয়েছেন সিৎসিপাস। তাঁর পকেট থেকে কাটা পড়ল ১০ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা)।
র্যাঙ্কিংয়ে ৪০তম কিরিওসের প্রতিভা নিয়ে প্রশ্ন নেই। কিন্তু মেজাজ হারানো যেন তাঁর ক্যারিয়ারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। ২০১৯ উইম্বলডনেও সাড়ে ১১ হাজার ডলার জরিমানা গুনেছেন কিরিওস।
১৯৮৭ উইম্বলডনজয়ী প্যাট ক্যাশ তাই তুমুল সমালোচনা করেছেন তাঁর দেশের এই তারকার। প্যাট ক্যাশের আরেকটি পরিচয় দিয়ে রাখা ভালো। সে বছর উইম্বলডন জয়ের পর দৌড়ে গ্যালারিতে গিয়ে খেলোয়াড়দের বক্সে নিজের পরিবার ও কোচের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেন ৫৭ বছর বয়সী সাবেক এই খেলোয়াড়।
ব্যাপারটি পরে অলিখিত প্রথায় পরিণত হয় উইম্বলডনে। এখন অনেকেই শিরোপা জয়ের পর খেলোয়াড়দের বক্সে গিয়ে আনন্দ ভাগ করে নেন।
সে যা–ই হোক, বিবিসি রেডিওকে প্যাট ক্যাশ বলেছেন, ‘প্রতারণা, দুর্ব্যবহার, আম্পায়ার ও লাইনসম্যানদের সঙ্গে আক্রমণাত্মক আচরণ করে সে খেলাটাকে নিচু স্তরে নামিয়ে এনেছে। এটা নিয়ে কিছু করতে হবে। সে সবকিছু সার্কাসে পরিণত করেছে। আমরা (ধৈর্যের) শেষ সীমায় চলে এসেছি।’ ম্যাচ শেষে সিৎসিপাসও ক্ষোভ ঝাড়েন কিরিওসের প্রতি, ‘সব সময় যা করে, ম্যাচেও সে সারাক্ষণই ষণ্ডার মতো আচরণ করেছে। স্কুলে পড়াশোনার সময় সে সম্ভবত ষণ্ডাই ছিল। আমি ষণ্ডামি অপছন্দ করি।’
কিরিওস অবশ্য সিৎসিপাসের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। উল্টো সিৎসিপাসের কাঁধেই দোষ চাপালেন অস্ট্রেলিয়ান তারকা, ‘কী বলব বুঝতে পারছি না। কীভাবে তার সঙ্গে ষণ্ডামি করলাম, বলতে পারব না। বলটা আমার ও দর্শকদের লক্ষ্য করে সে–ই মেরেছে। স্টেডিয়ামের বাইরেও বলটা সে–ই মেরেছে। তার প্রতি অসম্মানজনক কোনো আচরণ আমি করিনি।’