রাশিয়ার খেলোয়াড়কে হারানো ইউক্রেনের মেয়ে সব টাকাই দেবেন দেশের সেনাবাহিনীকে
যে পোশাক পরে তিনি খেলতে নেমেছিলেন, তার রঙে ছিল ইউক্রেনের পতাকার ছোঁয়া—গেঞ্জিটা হলুদ রঙের, স্কার্ট নীল। মন্তেরেই ওপেনের শেষ ৩২-এর ম্যাচে তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন আবার রুশ খেলোয়াড় আনাস্তাসিয়া পোতাপোভা। মেক্সিকোর টেনিস কোর্টে কাল যেন মঞ্চস্থ হলো রাশিয়া–ইউক্রেন আরেকটি যুদ্ধের!
শেষ পর্যন্ত এ ‘যুদ্ধে’ রাশিয়াকে হারিয়ে দিল ইউক্রেন! শুধু হারানো বললে ভুলই হবে, রীতিমতো রুশ খেলোয়াড়কে দুরমুশ করেই জিতলেন ইউক্রেনের এলিনা সভিতোলিনা! ৬-২, ৬-১ ব্যবধানে জিতে উঠে গেলেন শেষ ষোলোতে।
কিন্তু এ জয় তো আর সাধারণ কোনো জয় নয়! একে তো রুশ খেলোয়াড়কে কোনো ইউক্রেনের খেলোয়াড়ের এভাবে হারানো, তার ওপর ম্যাচের আগেরও কিছু গল্প ছিল। ম্যাচ শেষে সভিতোলিনার ঘোষণাও ম্যাচটিকে শিরোনামে নিয়ে এসেছে। সভিতোলিনা জানিয়ে দিয়েছেন, এই টুর্নামেন্ট থেকে পাওয়া সব আয় ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে দিয়ে দেবেন।
ম্যাচের আগের গল্পটাই আগে বলা যাক। রাশিয়ার খেলোয়াড় বলে পোতাপোভার বিপক্ষে খেলবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন সভিতোলিনা। টেনিস কর্তৃপক্ষও রাশিয়া ও বেলারুশের খেলোয়াড়দের নিষিদ্ধ করে। কিন্তু পোতাপোভা রাশিয়ার পরিচয়ে খেলেননি। আজ ম্যাচের সময়ে তাঁর নামের পাশে কোনো পতাকা ছিল না!
তা যা-ই হোক, পোতাপোভাকে হারিয়ে সভিতোলিনা বলেছেন, বিশেষ এক অভিযান নিয়েই এ টুর্নামেন্ট খেলতে এসেছেন তিনি। তাঁর প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার প্রতিবাদ করা। এরপর তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে যতটা পারা যায় সাহায্য করতে চান। পোতাপোভাকে হারিয়ে সভিতোলিনা বলেছেন, ‘আমার মিশন হচ্ছে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের টেনিস সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা। ইউক্রেনকে সাহায্য করতে হবে। কারণ, সেখানে যা হচ্ছে তা ইউক্রেনিয়ানদের জন্য নৃশংস।’
নিজের পরিচিতি কাজে লাগিয়ে ইউক্রেনের পক্ষে সমর্থন আদায়ের পরিকল্পনা সভিতোলিনার, ‘আমি এ কারণেই এখানে এসেছি। এ কারণেই আমি দেশের হয়ে খেলছি। আমার মঞ্চ, আমার হাতে থাকা সব শক্তি কাজে লাগিয়ে যত বেশি সম্ভব মানুষকে ইউক্রেনকে সমর্থন করতে উদ্বুদ্ধ করা যায়, সেটাই করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি আমি।’
এই টুর্নামেন্ট থেকে পাওয়া সব আয় নিজ দেশের সেনাবাহিনীকে দিয়ে দেওয়ার ঘোষণা সভিতোলিনা টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই দিয়ে রেখেছিলেন। মন্তেরেই ওপেনে তাঁর একেকটা জয় কত গুরুত্বপূর্ণ, সেটা বোঝাতে গিয়েও ইউক্রেনিয়ান সেনাবাহিনীকে সাহায্য করার প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন ১ নম্বর বাছাই হয়ে টুর্নামেন্টটি খেলতে যাওয়া সভিতোলিনা, ‘এখানে আমি শুধু আমার জন্য খেলছি না। আমার দেশের জন্যও খেলছি। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ও ইউক্রেনের মানুষকে সাহায্য করার জন্য খেলছি। এখানে আমার প্রতিটি জয় খুব বিশেষ।’
সাহায্যের অঙ্কটা বড় করতে চাইলে সভিতোলিনাকে অবশ্য টুর্নামেন্টের শেষ পর্যন্তই যাওয়ার চেষ্টা আরও বেশি করে করতে হবে। শেষ ষোলোতে ওঠায় নিশ্চিত হলো, ৩ হাজার ৬৭৫ ডলার পাচ্ছেন সভিতোলিনা। বাংলাদেশি টাকায় ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
মন্তেরেই ওপেন ২০২২-এর প্রাইজমানির হিসাব অনুযায়ী, কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলে সভিতোলিনা পাবেন ৫ হাজার ৮০০ ডলার (প্রায় পাঁচ লাখ টাকা)। সেমিফাইনালে উঠলে পাবেন ৮ লাখ ৬৮ হাজার, ফাইনালে উঠলে সাড়ে ১৫ লাখ টাকার কিছু বেশি।
আর শিরোপাই জিতে গেলে? ৩১ হাজার ডলার পাবেন সভিতোলিনা। বাংলাদেশি মুদ্রায় সাড়ে ২৬ লাখ টাকার কিছু বেশি।
যত হিসাব জড়িয়ে, তাতে সভিতোলিনার হাতে শিরোপা দেখার প্রার্থনা অনেক মানুষেরই হবে!