নোভাক জোকোভিচকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় যে নাটক চলছে, তাতে অন্য ভুবনের অনেকেই এ নিয়ে এক-দুটি মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে আর পারছেন না। অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্নই যেমন; টিকা না নেওয়া জোকোভিচের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলতে যাওয়ার পর থেকে একের পর এক নাটক হলো, ওয়ার্নও একের পর এক টুইটে সে নাটকের প্রতিক্রিয়ায় নিজের মন্তব্য জানিয়ে গেছেন।
সে ক্ষেত্রে গতকালের ঘটনার পর ওয়ার্নের চুপ করে থাকার তো কথাই নয়। ওয়ার্ন চুপ করে থাকেনওনি। গতকাল দ্বিতীয় দফায় জোকোভিচের ভিসা বাতিল করেছে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন মন্ত্রণালয়, কারণ দেখিয়েছে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিকে।
এরপর ওয়ার্ন পুরো ঘটনার জের টানা টুইটে সার্বিয়ান তারকাকে নিয়ে লিখেছেন, টিকা না নেওয়া যদি সার্বিয়ান টেনিস তারকার স্বাধীনতা হয়, সে ক্ষেত্রে দেশের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় অস্ট্রেলিয়ারও অধিকার আছে জোকোভিচকে বের করে দেওয়ার।
গতকাল দ্বিতীয় দফায় জোকোভিচের ভিসা বাতিল করে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন মন্ত্রণালয়, এরপর তাঁকে আবার আটক রাখা হয়েছে। অভিবাসনমন্ত্রী অ্যালেক্স হকে বলছেন, টিকা না নেওয়া জোকোভিচকে অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে দিলে সেটি টিকাবিরোধী মানসিকতাকে উৎসাহ দিতে পারে, পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ জনগণের মধ্যেও ক্ষোভ দেখা দিতে পারে।
হকের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ-ও বলে দেওয়া আছে, এবার জোকোভিচ আপিল না করলে কিংবা আপিল করেও না জিতলে আগামী তিন বছরে অস্ট্রেলিয়ায় ভিসা পাবেন না তিনি!
করোনার টিকা নিয়ে বিতর্ক সেই শুরু থেকেই চলে আসছে। অনেকেই করোনার টিকা নিতে চান না, তার পেছনে কারণ হিসেবে মূলত দুটি বিষয় উঠে এসেছে। করোনার টিকা সব বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ‘নিরাপদ’ সনদ পেলেও অনেকে এখনো দীর্ঘ মেয়াদে এই টিকার প্রভাব নিয়ে গবেষণা সম্ভব না হওয়াকে কারণ দেখিয়ে টিকা নিতে চান না।
আর কারও চোখে সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে সবাইকে টিকা নিতে যে পরোক্ষভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে প্রতিটি দেশের সরকারের দিক থেকে, এতে তাঁদের ‘স্বাধীনতা খর্ব’ হচ্ছে!
জোকোভিচ কোনো কারণ নির্দিষ্ট করে বলেননি, তবে তিনিও টিকার বিরোধী। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে নিয়ম ছিল, টিকা না নিলেও স্বাধীন মেডিকেল প্যানেলের ‘স্বাস্থ্যবিষয়ক ছাড়পত্র’ নিয়ে একজন খেলোয়াড় টুর্নামেন্টে খেলতে পারবেন। জোকোভিচ সেই সুযোগই নিয়েছেন। ছাড়পত্র নিয়েই অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিলেন।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে যে যথাযথ তথ্য সরবরাহ করতে হয়, সে জায়গায় জোকোভিচ কিছু তথ্য লুকিয়েছেন, যেটি ধরা পড়ে মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তিনি নামার পর অভিবাসন কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎকারে।
গত ১৬ ডিসেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে তাঁর ভিসার কাগজপত্রে জানান জোকোভিচ, কিন্তু পরে জানা যায়, তিনি করোনা পজিটিভ হওয়ার পর ১৭ ডিসেম্বর টেনিস–বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে শিশুদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। এরপর ১৮ ডিসেম্বর ফরাসি ক্রীড়া দৈনিক লে’কিপের এক সাংবাদিককে মুখোমুখি সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন, যেখানে তিনি করোনা পজিটিভ হওয়ার কথা জানাননি!
এর বাইরেও তথ্যে ফাঁক রেখেছেন জোকোভিচ। মন্টে কার্লোতে বসবাস করা জোকোভিচ যে অস্ট্রেলিয়ায় ঢোকার আগের ১৪ দিনে সার্বিয়া ও স্পেনে ভ্রমণ করেছেন, সেটিও তিনি উল্লেখ করেননি ভিসা ফর্মে।
অস্ট্রেলিয়া তাই গত সপ্তাহেই একবার জোকোভিচের ভিসা বাতিল করে, কিন্তু এরপর আপিলে জিতে অস্ট্রেলিয়ায় ঢোকার অনুমতি পান জোকোভিচ। তখন ভাবা হয়েছিল, বিতর্ক থেকে গেলেও অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলতে আর বাধা নেই টেনিসের এক নম্বর তারকার।
কিন্তু আপিলে জেতার চার দিন পর গতকাল আবার তাঁর ভিসা বাতিল করে অস্ট্রেলিয়ার সরকার। আজ জোকোভিচকে আবার ভিসা কর্মকর্তাদের সামনে সাক্ষাৎকারে বসতে হওয়ার কথা ছিল বলে জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান দৈনিক দ্য এজ।
এত নাটক দেখে শেন ওয়ার্নও চুপ থাকতে পারেননি। গতকাল জোকোভিচের ভিসা বাতিল হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা তারকা টুইট করেন।
‘নোভাক টেনিসের একজন গ্রেট খেলোয়াড়, সর্বকালের সেরাদের একজন। এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। কিন্তু সে অস্ট্রেলিয়ায় ঢোকার আবেদনপত্রে মিথ্যা বলেছে। তার যখন কোভিড ছিল বলে আমরা শুনতে পাচ্ছি, তখন সে জনসমাগমে গেছে, এখন তাই আইনি লড়াইয়ে লড়তে হচ্ছে তাকে। টিকা না নেওয়ার স্বাধীনতা তার আছে, কিন্তু সে ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ারও স্বাধীনতা আছে তাকে বের করে দেওয়ার। এ বিষয়ে আমরা একমত?’ - টুইটে লিখেছেন ওয়ার্ন।