জোকোভিচকে আটকে রাখা ‘ঔপনিবেশিকতা’ আর ‘ভণ্ডামি’ মনে করে সার্বিয়া
অভিযোগটি তুলেছেন স্বয়ং সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার ভুচিচ। দেশের টেনিস তারকার প্রতি অস্ট্রেলিয়া ‘নির্মম’ আচরণ করেছে—এমন অভিযোগ করেছেন সার্বিয়ান প্রেসিডেন্ট। বাংলাদেশ সময় বুধবার মধ্যরাতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলার উদ্দেশে মেলবোর্ন বিমানবন্দরে নামেন নোভাক জোকোভিচ। টিকার শর্ত শিথিল করেই তাঁকে ভিসা দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ান কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু বিমানবন্দরে অবতরণের পর তাঁকে আটক করে সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি হোটেলে রাখা হয়েছে। বিমানবন্দরে কয়েক ঘণ্টা বসিয়ে রাখার পর জোকোভিচকে জানানো হয়, অস্ট্রেলিয়ায় আসার ক্ষেত্রে টিকা নেওয়ার শর্ত পূরণ না করায় তাঁর ভিসা বাতিল করা হয়েছে এবং দেশে ফেরত পাঠানো হবে। তবে ছেলেদের টেনিসে শীর্ষ এ তারকাকে কবে দেশে ফেরত পাঠানো হবে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে জোকোভিচকে অস্ট্রেলিয়ায় ঢুকতে না দেওয়ায় সার্বিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক জটিলতা শুরু হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশন জানিয়েছে, টিকা না নেওয়ার ছাড়পত্র পাওয়ার পক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ দেখাতে পারেননি ছেলেদের টেনিসে যুগ্মভাবে এই সর্বোচ্চ গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপাজয়ী। তাঁকে এখন আদালতে তোলা হবে।
জোকোভিচকে আটকে রাখায় খেপেছেন তাঁর বাবা সারদিয়ান জোকোভিচ। রাশিয়ান সংবাদমাধ্যমকে সারদান বলেছেন, ‘তাকে আজ রাতে (বুধবার) অন্ধকূপে ফেলা হতে পারে, আগামীকাল শিকল দিয়ে বেঁধেও রাখা হতে পারে। কিন্তু সত্যটা হলো সে পানির মতো, পানি নিজের রাস্তা তৈরি করে নেয়। নোভাক এই নতুন বিশ্বের স্পার্টাকাস, যে অবিচার, ঔপনিবেশিকতা ও ভণ্ডামো সহ্য করবে না।’
মেলবোর্নে জোকোভিচকে যে হোটেলে রাখা হয়েছে, তার সামনে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করা সার্বিয়ান নাগরিকেরা জড়ো হয়েছেন। জোকোভিচের পক্ষে অনেকে স্লোগানও দেন।
তবে জোকোভিচ করোনার টিকা নিয়েছেন কি না, তা স্পষ্ট করেননি। গত বছর বলেছিলেন, তিনি টিকা নেওয়ার বিপক্ষে। অস্ট্রেলিয়ার উচ্চ আদালতে এরই মধ্যে আবেদন করেছেন জোকোভিচ। এ নিয়ে আজই শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ভিসা পেতে জোকোভিচের জমা দেওয়া নথিপত্রের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আরও তিন খেলোয়াড় এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া পৌঁছেছেন।
জোকোভিচের বাবা সারদিয়ান এরই মধ্যে হুমকি–ধমকি অব্যাহত রেখেছেন। বিমানবন্দরে ছেলে আটক থাকার সময় সার্বিয়ান সংবাদমাধ্যম ‘স্পুতনিক’কে তিনি বলেন, ‘তাকে আগামী আধা ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি না দিলে স্বাধীনতার জন্য রাস্তায় লড়াই করব। এটা শুধু নোভাকের লড়াই না, গোটা বিশ্বেরই স্বাধীনতার লড়াই।’
সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ভুচিচ জানিয়েছেন, গোটা দেশ জোকোভিচের পক্ষে আছে, ‘আমাদের নোভাককে বলেছি গোটা সার্বিয়া তোমার পক্ষে আছে। বিশ্বের সেরা টেনিস খেলোয়াড়ের প্রতি হয়রানি বন্ধ করতে আমাদের কর্তৃপক্ষ যা যা সম্ভব করছে।’
তবে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন জোকোভিচকে হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার সীমান্ত স্বাধীন এবং আইনও পরিষ্কার, এখানে বৈষম্যের কিছু নেই...অনেক দেশই তা করছে। আমি শুধু বলতে পারি, মেডিকেল প্যানেলের ছাড়পত্র পাওয়ার যে কাগজ দেখানো হয়েছে, তা পর্যাপ্ত না।’