চোটটা আসলে কোথায়, ম্যাচের মধ্যে স্পষ্ট বোঝা যায়নি। দ্বিতীয় সেটের সময়ই বোঝা যাচ্ছিল, সহজাত শক্তিতে সার্ভিস করতে পারছেন না। তখন মনে হয়েছিল, সম্ভবত তলপেটের পুরোনো চোট, যা নিয়ে নাদাল তেমন একটা কথা বলতে চান না।
দৌড়ানোর সময়ও তাঁর অস্বস্তিটা টের পাওয়া যাচ্ছিল। তাহলে বোধ হয় বাঁ পায়ের সেই চোট! রাফায়েল নাদালের ক্যারিয়ারে আর যা–ই হোক, এমন সব চোটের অভাব নেই ঠিক তাঁর জেতা শিরোপাসংখ্যার মতোই।
সেন্টার কোর্টে ছেলে যখন চোট নিয়ে্ও লড়াই করছিলেন, খেলোয়াড়দের বক্সে তখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বাবা ও বোন। সেবাস্তিয়ান নাদাল হাত উঁচিয়ে তাঁর ছেলেকে ম্যাচটা ছেড়ে দিয়ে আসার অনুরোধ করছিলেন। মানে, এই চোট নিয়ে লড়তে হবে না, ম্যাচটা থেকে অবসর নাও!
সেবাস্তিয়ান নিজেও জানতেন, ছেলে তাঁর স্প্যানিশ ‘ম্যাটাডোর’, সামান্য ব্যথায় লড়াই ফেলে আসার বান্দা নন। দ্বিতীয় সেটের মাঝে আর কুলিয়ে উঠতে না পারায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন নাদাল। তারপর সেবাস্তিয়ানকে বেশ হতাশ মনে হলো। কোর্ট ছেড়ে আসা দূর অস্ত, ছেলে যে তাঁর লড়াইয়ে ব্যস্ত!
লড়াই—নাদালের ক্যারিয়ারের শিরোনাম হতে পারে এই শব্দটি। ছেলেদের এককে সর্বোচ্চ ২২ গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী কিংবদন্তি কাল রাতে চোট নিয়েও লড়াইয়ের আরেকটি নমুনা পেশ করলেন উইম্বলডনে। যুক্তরাস্ট্রের ১১তম বাছাই টেলর ফ্রিটজকে শেষ সেটে টাইব্রেকারে হারানোর পর বোঝা গেল, এই ৩৬ বছর বয়সেও নাদালের মানসিক শক্তির তুলনা শুধু নাদালই। ৪ ঘণ্টা ২১ মিনিটের এই ম্যাচে ৩–৬, ৭–৫, ৩০৬, ৭–৫, ৭–৬ (১০–৪) গেমে জয়ী স্প্যানিশ কিংবদন্তি সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবেন অস্ট্রেলিয়ার নিক কিরিওসের।
সরে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকতেও কেন খেলে গেলেন, কাল রাতে ম্যাচ শেষে এ প্রশ্নে নাদালের উত্তর, ‘ওরা (বাবা ও বোন) আমাকে উঠে আসতে বলেছিল। কিন্তু ম্যাচের মাঝে উঠে আসাটা আমার জন্য কঠিন ছিল। ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকবার এমন করেছি। এটা করতে আমি ঘৃণা করি। তাই চেষ্টা (খেলা) করে গেছি।’
বিরুদ্ধ স্রোতে দাঁড়িয়েও নাদালের চেষ্টার ফলটা এখন দেখছেন সবাই। উইম্বলডনে সর্বশেষ এক যুগ আগে শিরোপা জিতেছেন নাদাল। অল ইংল্যান্ড কোর্টে তাঁর হাতে আবারও শিরোপা দেখার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু নাদাল এবার পৌঁছে গেছেন শিরোপার বেশ কাছাকাছি। তবে উইম্বলডনে অষ্টমবারের মতো সেমিফাইনালে উঠলেও কিরিওসের বিপক্ষে ম্যাচটা খেলতে পারবেন কি না, নাদাল ঠিক নিশ্চিত নয়, ‘আমি জানি না। সত্যি বলতে, ঠিক করে বলতে পারব না। কারণ, এখন বললাম খেলতে পারব, কিন্তু কাল অন্য কিছু ঘটলে আমি মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হব।’
তলপেটের চোটের কথা ম্যাচ শেষে জানিয়েছেন নাদাল। আরও জানালেন, চোট নিয়েও এমন সব ম্যাচ খেলতে ভালোই লাগে তাঁর, ‘সমস্যা কিংবা চোট নিয়ে খেলতে আমি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। এমন ম্যাচ উপভোগ করি। নিজেকে একটা সুযোগ দিতে চেয়েছিলাম, ফল যা–ই হোক ম্যাচটা শেষ করে আসতে চেয়েছি।’
তবে চোট নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে নাদালের। আজ কিছু স্ক্যান করানোর পর সিদ্ধান্ত নেবেন সেমিফাইনাল খেলবেন কি না। রোঁলা গারোয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আগপর্যন্ত প্রতি ম্যাচের আগেই ব্যথানাশক ইঞ্জেকশন নিয়েছেন। পায়ের ব্যথা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি চিকিৎসায় প্রশমনের পর উইম্বলডনে খেলা নিশ্চিত করেছেন, তার আগপর্যন্ত অল ইংল্যান্ড কোর্টে তাঁকে দেখার সম্ভাবনা কম ছিল।
কিন্তু চিরকালই যিনি লড়াকু, তাঁকে থামিয়ে রাখা কঠিন। বছরের প্রথম দুই গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের পর নাদালের সামনে এখন তৃতীয়টি জয়ের হাতছানি। এরপর বছরের শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যাম ইউএস ওপেনও আছে। ১৯৬৯ সালে রড লেভারের পর প্রথম পুরুষ খেলোয়াড় হিসেবে ক্যালেন্ডার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের হাতছানি নাদালের সামনে। এ অবস্থায় চোটের সাধ্য আছে নাদালকে থামানোর!