রাফায়েল নাদাল ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে উঠেছেন, এ আর এমন কী খবর! এ নিয়ে টানা পঞ্চম ফাইনালে স্প্যানিশ টেনিস মহাতারকা। রেকর্ড ২১ গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী নাদাল গতবারের আগের চারবার নিয়ে এই ফ্রেঞ্চ ওপেনই জিতেছেন ১৩ বার।
আজ দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ক্যাসপার রুড আর মারিন চিলিচের মধ্যে যিনিই ফাইনালে উঠুন, আগামী রোববারের ফাইনালে নাদালের ১৪তম ফ্রেঞ্চ ওপেন ও ২২তম গ্র্যান্ড স্লামের সম্ভাবনাই যে সবচেয়ে বেশি, সে সম্ভবত বলে দিতে হয় না। আজ আবার নাদালের ৩৬তম জন্মদিন, সে হিসেবে আজ আরেকটি ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে ওঠা নাদালের জন্য বড় পুরস্কারই।
কিন্তু এতটুকু পড়েই থামতে হচ্ছে। ফাইনাল যেভাবে নিশ্চিত হয়েছে, এভাবে নিশ্চয়ই ফাইনালে উঠতে চাননি নাদাল! মহাকাব্যিক এক লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া ম্যাচ যে শেষ হয়ে গেল দৈব-দুর্বিপাকে। আলেক্সান্ডার জভেরেভের বিপক্ষে তিন ঘণ্টার দারুণ লড়াইটা মাত্র দ্বিতীয় সেটেই গড়িয়েছিল। এমন অবস্থায় জভেরেভ ভয়ংকর চোটে পড়ায় ম্যাচ শেষ হয়ে গেছে, নাদাল উঠে গেছেন ফাইনালে।
কী অসাধারণ এক ম্যাচের প্রতিশ্রুতিই না ছিল! তিন ঘণ্টায়ও দুই সেট শেষ হয়নি, এতটুকুই হয়তো যা বলার বলে দেয়। প্রথম সেটের নিষ্পত্তি হয়েছিল টাইব্রেকারে, দ্বিতীয় সেটে যে শট খেলার সময় চোটে পড়েন জভেরেভ, সেটি বাইরে যাওয়ায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, দ্বিতীয় সেটও গড়াচ্ছে টাইব্রেকারে। শেষ পর্যন্ত ৭-৬ (১০/৮), ৬-৬ গেমে খেলা চলছিল।
অ্যাঙ্কেলের ওপর ভর দিয়ে নাদালকে রিটার্ন মারতে গিয়েছিলেন জভেরেভ, কিন্তু শরীরের সব ভার অ্যাঙ্কেলের ওপর থাকা অবস্থায়ই ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। পরিণতি কী হতে পারে, তা হয়তো এতটুকুই বোঝাবে যে, টিভিতে জভেরেভের চোটে পড়ার ওই দৃশ্য আর দেখানো হয়নি। ছোট শিশুসহ অনেকের জন্য যে দৃশ্যটা ভয়াল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল! অ্যাঙ্কেল মচকে যেতেই আর্তচিৎকার করে ওঠেন জভেরেভ। মুহূর্তেই গ্যালারিতে পিনপতন নীরবতা!
সঙ্গে সঙ্গেই হুইলচেয়ারে করে জভেরেভকে নিয়ে যাওয়া হয় কোর্ট থেকে, ডাক্তাররা প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। কিন্তু ততক্ষণে বোঝাই যাচ্ছিল, অসাধারণ এই ম্যাচ শেষ হয়েছে দুর্ভাগ্যজনকভাবে।
তা-ই হয়েছে। কিছুক্ষণ পর ক্রাচে ভর দিয়ে জভেরেভ মাঠে ঢোকেন, সঙ্গে ছিলেন নাদালও। দর্শক মুহুর্মুহু করতালিতে জভেরেভকে সান্ত্বনা জানান, জভেরেভের কান্না তখন দেখে কে!
নাদালও ফাইনালে ওঠার প্রতিক্রিয়ায় তাই বলছিলেন, ‘মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। ওর জন্য খুব খারাপ লাগছে। অসাধারণ একটা টুর্নামেন্ট কাটছিল ওর। শাশাকে (জভেরেভের ডাকনাম) ওভাবে কাঁদতে দেখে খুব খারাপ লাগছিল। ওর জন্য প্রার্থনা।’
অথচ দুর্ভাগ্যজনক এই সমাপ্তির আগে ম্যাচটা কী দারুণভাবেই না জমে উঠেছিল! প্রথম সেটের শুরুতেই নাদালের সার্ভিস ব্রেক করেন জভেরেভ, নিজেই পায়ের চোট নিয়ে খেলতে নামা নাদালের জন্য যা অশনিসংকেতই মনে হচ্ছিল।
কিন্তু হলো কী! এক সময়ে ৪-২ গেমেও এগিয়ে গিয়েছিলেন জভেরেভ। কিন্তু ৯১ মিনিটে জমে ওঠা সেটে শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে নাদালই জিতেছেন। দ্বিতীয় সেটেও কেউ কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেননি। জভেরেভের ‘আনফোর্সড এরর’ হয়তো বেশি হয়েছে, ডাবল ফল্টও নাদালের ১টির বদলে জার্মান তরুণের হয়েছে ৮টি।
কিন্তু চোটের কারণেই অনেক কম গতিতে সার্ভ করতে থাকা নাদাল যেখানে প্রথম সার্ভে ৬০ শতাংশ পয়েন্ট জিতেছেন, জভেরেভ জিতেছেন ৭৭ শতাংশ। দ্বিতীয় সেটও টাইব্রেকারে যাওয়া নিশ্চিত ছিল। কিন্তু চোট তা আর হতে দিল কই!