দেশের প্রথম ‘হোয়াইট ব্যাজ’ রেফারি মাসফিয়া
টেনিস খেলোয়াড়ই হতে চেয়েছিলেন মাসফিয়া আফরিন। এরই মধ্যে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৪ দল, অনূর্ধ্ব–২০ দলের হয়ে খেলেছেন। ১৮ বছর বয়সী মেয়েটি বিশ্বকাপ টেনিসে প্রতিনিধিত্বও করেছেন বাংলাদেশের জাতীয় টেনিস দলের হয়ে।
কিন্তু গত বছর সেপ্টেম্বরে ঘাড়ে বাজে চোট পেয়ে অকালে ছাড়তে হয় টেনিস। এবার সেই মাসফিয়াই বাংলাদেশের টেনিসে অন্য ভূমিকায় ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টেনিসে ‘হোয়াইট ব্যাজ’ রেফারি হিসেবে পেয়েছেন আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশনের (আইটিএফ) স্বীকৃতি।
মাত্র ৭ বছর বয়সেই টেনিস র্যাকেট হাতে নিয়েছিলেন মাসফিয়া। সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন উদীয়মান টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে। কিন্তু গত বছরের চোটে সেই স্বপ্ন অকালেই ঝরে যায়। গত ডিসেম্বরে ঢাকাতেই রেফারিং কোর্স করে ফেলেন মাসফিয়া, তাতে প্রথমও হয়েছিলেন। গত জানুয়ারিতে আইটিএফ অনূর্ধ্ব–১৪ ডেভেলপমেন্ট চ্যাম্পিয়নশিপে সহকারী রেফারির দায়িত্ব পালন করেন।
এবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে আইটিএফ আয়োজিত ‘হোয়াইট ব্যাজ রেফারি স্কুল’ কোর্সে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে মাসফিয়া আজই দেশের প্রথম হোয়াইট ব্যাজ রেফারি হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন। এর আগে ২০০০ সালে বাংলাদেশ থেকে সারোয়ার হোসেন ‘চেয়ার আম্পায়ার’ হয়েছিলেন। তবে মাসফিয়াই প্রথম ‘হোয়াইট ব্যাজ’ রেফারি।
কুয়ালালামপুর থেকে প্রথম আলোকে মাসফিয়া জানিয়েছেন নিজের অর্জনের কথা, ‘চোটের কারণে টেনিসটা খেলে যেতে পারিনি। তবে আমি যতটুকু খেলেছি, সর্বোচ্চটা দিয়েই খেলেছি। খেলাটা যখন চালিয়ে যেতে পারলাম না, তখন আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম রেফারিং নিয়ে। আজ হোয়াইট ব্যাজ রেফারি হিসেবে স্বীকৃতি মিলল। এ জন্য বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনকে কৃতজ্ঞতা।’
মাসফিয়া যত দিন খেলেছেন, নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েই খেলেছেন—এই দাবির পক্ষে কথা বলছে তাঁর অর্জনও। অনূর্ধ্ব–১০, অনূর্ধ্ব–১২, অনূর্ধ্ব–১৪, অনূর্ধ্ব–১৬ টেনিসে তিনি হয়েছেন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। জাতীয় র্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় স্থানেও উঠে এসেছিলেন। মাসফিয়া প্রথম বাংলাদেশি নারী টেনিস খেলোয়াড়, যিনি আইটিএফ ডেভেলপমেন্ট বৃত্তি নিয়ে উজবেকিস্তানে আইটিএল দলে অংশ নিয়েছেন।
টেনিসের পাশাপাশি পড়াশোনাতেও কম যান না মাসফিয়া। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে তিনি এখন দুটি বিষয় নিয়ে অনার্স করছেন। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়ছেন ইংরেজিতে অনার্স। আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ব্যবসায় প্রশাসনে আরও একটি অনার্স ডিগ্রির জন্যও পড়ালেখা করছেন।
টেনিস নিয়ে পড়াশোনা করতে পছন্দ করেন মাসফিয়া। জানিয়েছেন নিজের বড় স্বপ্নের কথাও, ‘টেনিসের আইন নিয়ে পড়াশোনা করি। টেনিস খেলা নিবিড়ভাবে দেখার চেষ্টা করি। আমি জানি, হোয়াইট ব্যাজ রেফারি হলে গ্র্যান্ড স্লাম টেনিসে খেলা পরিচালনার সুযোগ থাকে। আমি এখন সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছি।’
মাসফিয়ার বাবা মুহম্মদ মাহমুদ আলম টেনিস ফেডারেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। মা সাদিয়া আফরিন নিপা গৃহিণী। মাসফিয়ারা দুই বোন, ছোট বোন মাসতুরা আফরিন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।
মাসতুরাও টেনিস খেলে, বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১২ দলে এরই মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে সে। আগামী মাসে নেপালে একটি টুর্নামেন্টে খেলতে যাবে। ২০২৩ সালেও অনূর্ধ্ব–১২ টেনিস দলে খেলেছে মাসতুরা।