উইম্বলডনের নতুন রাজা আলকারাজ
৪ ঘণ্টা ৪২ মিনিট লড়াই শেষে এল সেই মুহূর্তটা। একজন কোর্টে লুটিয়ে দু হাতে ঢাকলেন মুখ। সেই একজনের নাম নোভাক জোকোভিচ নয়, কার্লোস আলকারাজ। ২০১৩ সালের পর অল ইংল্যান্ড ক্লাবের সেন্টার কোর্টে যিনি হারেননি, সেই জোকোভিচকে হারিয়ে উইম্বলডনের ট্রফি হাতে তুললেন টেনিসের ভবিষ্যৎ আলকারাজ। প্রথমবারের মতো উইম্বলডনের চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলেন স্প্যানিশ তরুণ তুর্কি। অথচ প্রথম সেটটা কী বাজেভাবেই না হেরেছিলেন আলকারাজ!
বয়সে ১৬ বছরের বড় জোকোভিচকে আলকারাজ হারিয়েছেন ১-৬, ৭-৬ (৮/৬), ৬-১, ৩-৬, ৬-৪ গেমে। ২০২১ সালে প্রথমবার গ্র্যান্ড স্লামের মূল পর্বে খেলা আলকারাজের এটি দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা। গত বছর ইউএস ওপেনে ক্যাসপার রুদকে হারিয়ে জিতেছিলেন প্রথমটি।
গত মাসে রোলাঁ গারোতে ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেমিফাইনালে এই জোকোভিচের কাছেই মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন আলকারাজ। প্রথম দুটি সেটে দুর্দান্ত লড়াই উপহার দেওয়ার পর ক্র্যাম্প হয় তাঁর। আলকারাজ পরে নিজেই বলেছিলেন, জোকোভিচকে নিয়ে বেশি ভাবার প্রভাব পড়েছিল তাঁর শরীরে।
এবার নিশ্চিত আরও বেশি মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন আলকারাজ। আজ ফাইনালে সেটির প্রমাণই পাওয়া গেল। যে জোকোভিচ অজেয় মানসিকতার জন্য পরিচিত, সেই জোকোভিচের বিপক্ষেই প্রথম সেট হারার পরও কী দারুণ প্রত্যাবর্তন!
প্রথম সেটে আলকারাজকে দেখে মনে হচ্ছিল, গত মাসের ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেমিফাইনালের শেষ দুই সেটের ধারাবাহিকতা টানছেন। সবকিছু বদলে গেল দ্বিতীয় সেটে। জমজমাট সেই দ্বিতীয় সেটটা আলকারাজ টাইব্রেকারে জিতলেন ৮-৬ পয়েন্টে।
৬-১, তৃতীয় সেটের স্কোরটা বলবে ওই সেটে পাত্তাই পাননি জোকোভিচ। কিন্তু স্কোরবোর্ড যে পুরোপুরি সত্যি বলতে পারে না, সেটির বড় প্রমাণও এই সেট। আলকারাজ এগিয়ে গিয়েছিলেন ৩-১ গেমে। এরপর কী নাটকটাই না হলো পঞ্চম গেমটায়। জোকোভিচ এগিয়ে গিয়েছিলেন ৪০-১৫-তে। এরপর যা হলো সেটিকে কী বলা যায়?
ওই একটা গেম শেষ হতেই লাগল ২৬ মিনিট! আলকারাজ ৪০-৪০ করার পর, এই জোকোভিচ-আলকারাজ অ্যাডভান্টেজ পান তো, পর মুহূর্তেই ডিউস, এভাবেই যেন অনন্তকাল ধরে চলছিল সেই গেম। শেষ পর্যন্ত ওই গেমটা জয়ের পর তৃতীয় সেটটা নিজের করে নিতে বেশি সময় নেননি আলকারাজ।
জোকোভিচ ম্যাচে ফেরেন পরের সেটটা জিতে। তিনিই তখন ফেবারিট, এমন পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প তো কম লেখেননি জোকোভিচ।
কিন্তু আজ আর পারেননি আলকারাজের ভাষায় ‘দানব’ জোকোভিচ। শেষ সেটে তো মেজাজ হারিয়ে র্যাকেটও ভাঙলেন। মেজাজ হারাতেই পারেন জোকোভিচ। এবারের উইম্বলডনটা যে ছেলে-মেয়ে মিলিয়েই সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের মার্গারেট কোর্টের রেকর্ডে ভাগ বসানোর সুযোগ ছিল জোকোভিচের জন্য। ৩৬ বছর বয়সী সার্বিয়ানের সুযোগ ছিল সবচেয়ে বেশি উইম্বলডন পুরুষ একক জয়ে রজার ফেদেরারের রেকর্ডে ভাগ বসানোরও।
কিন্তু তা আর হলো না। হতে দিলেন না ২০ বছর বয়সী এক তরুণ। সেই তরুণ, যাঁর হাতেই উত্তরাধিকার জোকোভিচ-ফেদেরার–নাদালদের।